বঙ্গ-নিউজডটকমঃ চার হাজার ১১৯ কোটি টাকা পাচারের ঘটনায় রাজধানীর কলাবাগান থানায় করা দুটি মামলায় ডেসটিনি গ্রুপের ৪৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মামলার এজাহারে আসামি ছিল ২২ জন। তদন্তে নতুন আরো ২৪ জনের নাম এসেছে।বৃহস্পতিবার বিকেলে কমিশনার সহাবুদ্দিন চুপ্পু এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এক বছরেরও বেশী সময় ধরে তদন্ত ও অনুসন্ধান করার পর সার্বিক বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা এ চার্জশিট অনুমোদন করেছি।’
কমিশনার জানান, খুবই শিগগির তা সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
মামলা দুটির একটি হলো ট্রি প্লানটেশন প্রজেক্টের ২ হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ টাকা পাচার। এ মামলার এজাহারে ডেসটিনি গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল আমিনসহ আসামি ছিলেন ১২ জন। তদন্তে নতুন সাতজনের নাম এসেছে। ফলে এ মামলার চার্জশিটে ১৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অন্য মামলাটি হলো মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ১ হাজার ৮৬১ কোটি ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৫ টাকা পাচার। এ মামলার এজাহারে আসামি রফিকুল আমিনসহ ২২ জন। তদন্ত করার পর আরো ১২ জনের নাম আসে। ফলে অভিযুক্ত করা হয়েছে ৪৬ জনকে।
দুটি মামলায়ই একই ব্যক্তি একাধিকবার থাকায় মোট ব্যক্তি আসামির সংখ্যা ৪৬।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে এমএলএম ব্যবসা পদ্ধতিতে ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড এবং ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের বিভিন্ন প্যাকেজের শেয়ার দেখিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেন গ্রুপের পরিচালকেরা। ওই সব অর্থ ৩২টি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের নামে তারা নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর এবং পরে বিদেশে করেন।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন- সাবেক সেনাপ্রধান ও ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদ, ডেসটিনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন, তার স্ত্রী ফারাহ দীবা, ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক গোফরানুল হক, পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন, সাঈদ-উর-রহমান, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, জমশেদ আরা চৌধুরী, ইরফান আহমেদ, শেখ তৈয়বুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, শিরিন আক্তার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, সুমন আলী খান, সাইদুল ইসলাম খান, আবুল কালাম আজাদ, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম।
তদন্তের পর নতুন করে যে ২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মকর্তা মেজর (অব.) সাকিবুজ্জামান খান, এস এম আহসানুল কবির, এ এইচ এম আতাউর রহমান, গোলাম কিবরিয়া, মো. আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমেদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, দেলোয়ার হোসেন, বেস্ট এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান এম হায়দার উজ জামান, উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন, সাবেক প্রধান অর্থ কর্মকর্তা কাজী ফজলুল করিম এবং সাবেক কর্মকর্তা মোল্লা আল আমীন। আত্মসাতের ঘটনায় সহযোগী হিসেবে আরও অভিযুক্ত হচ্ছেন- বনানীর ইসলাম ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের শফিউল ইসলাম, বাগেরহাটের জিয়াউল হক মোল্লা, জেসমিন আক্তার, ফিরোজ আলম, শাহাজাদপুরের সেতু এন্টারপ্রাইজের সিকদার কবিরুল ইসলাম, বনানীর মমতাজ এন্টারপ্রাইজের ওমর ফারুক, ডিভেক রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন, ডেসটিনি গ্রুপের কন্ট্রোলার সুনীল বরণ কর্মকার, ডেসটিনি-নিহাজ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস সহিদুজ্জামান, ডায়মন্ড বিল্ডার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, ডেসটিনি এয়ার সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আকতার ও ডেসটিনি গ্রুপের অ্যাডভাইজার শফিকুল হক।
এর আগে দুদকের উপ-পরিচালক মোজাহার আলী সরদার এবং সহকারী পরিচালক মো. তৌফিক দীর্ঘ তদন্তের পর গত সপ্তাহে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির (ডিএমসিএসএল) মামলায় আসামিরা নিজেরা লাভবান হওয়ার জন্য ২০০৯ সালের জুলাই থেকে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত সাড়ে আট লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর সাথে প্রতারণা করেছেন। এ সময় ঋণ প্রদান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ, নতুন প্রতিষ্ঠান খোলার নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করা করে। সে অর্থ থেকেই আসামিরা লভ্যাংশ, সম্মানী ও বেতন-ভাতার নামে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পাচার করেন।
ডেসটিনি মাল্টিপারপাসের মূলধন ৫০ কোটি টাকা থেকে পর্যায়ক্রমে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকায় বৃদ্ধি এবং ২০টি শাখা খোলার ক্ষেত্রে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সরকারের ১০ সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। তারা হলেন, বর্তমানে জামালপুরে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল জব্বার, সিরাজগঞ্জের জেলা সমবায় কর্মকর্তা কাজী মেজবাহ উদ্দিন, দোহারে কর্মরত এইচ এম সহিদ উজ জামান, ঢাকার জেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ গালীব খান, সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক ইকবাল হোসেন ও সাইদুজ্জামান, যুগ্ম নিবন্ধক মাহবুবুর রহমান, উপনিবন্ধক ফজলুল হক, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব প্রতুল কুমার সাহা এবং কাজী নজরুল ইসলাম।
দুদকের অপর মামলাটি ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেড (ডিটিপিএল) সংক্রান্ত। দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২১ মার্চ থেকে ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইন ও বিধি লঙ্ঘন করে গাছ বিক্রির নামে ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের (ডিটিপিএল) জন্য ২ হাজার ৪৩৩ কোটি ১৯ লাখ ১৯ হাজার ১৪৭ টাকা জনগণের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ অর্থ থেকে দুই হাজার ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭৭ হাজার ২২৭ কোটি টাকা পাচার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০:২১:০৯ ৫৬৯ বার পঠিত