দূষণজনিত কারণে বিশ্বের ২০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য হুমকীর মুখে। পরিবেশ বিষয়ক দুটি স্বতন্ত্র সংগঠন সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বিশ্বের দশটি ভয়াবহ দুষিত স্থানের নাম উল্লেখ করেছে। সংগঠন দুটি হচ্ছে যুক্তরাস্ট্র ভিত্তিক ব্ল্যাকস্মিথ ইনস্টিটিউট এবং গ্রীন ক্রস সুইজারল্যান্ড। এ নিয়ে জুন স্মিথ, ফেইথ লুপিডাস ও ক্রিস্টোফার ক্রুইজের তথ্য থেকে সেলিম হোসেনের প্রতিবেদন শুনুন:
আফ্রিকা, এশিয়া, পূর্ব ইউরোপ এবং ল্যাটিন আমেরিকার ৮টি দেশের ১০টি স্থান পরিবেশগত দিক দিয়ে সারা বিশ্বে সবচেয়ে দুষিত স্থান। এসব স্থানে কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্য চরম হুমকীর মুখে।
প্রতিবেদনে বলা হয় এসব স্থানে নিশ্বাস প্রশ্বাস, খাবার এবং সরাসরি স্পর্শের মাধ্যমে এই দুষন আসে লেড বা শীষা, ক্যাডমিয়াম, ক্রোম বা ধাতু, তেল, কীটনাশক পদার্থ, ফীনল এসিড, পারদ, সারিন গ্যাস, রেডিওনিউক্লাইডস এবং জৈব পদার্থ থেকে।
ব্ল্যাকস্মিথ ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডেভিড হ্যানরাহান বলেন এই তালিকায় ১০টি স্থানের মধ্যে প্রথম চারটির অবস্থা ভয়াবহ।
“আমরা চেরনোবিলের কথা জানি—ইউক্রেনে-যার প্রভাব থাকবে। রাশিয়ায় রয়েছে দুটি স্থান যার একটি হচ্ছে ধাতু গলাবার স্থান, অপরটি রাসায়নিক স্থাপনা, যাতে বিপুল রাসায়নিক অস্ত্র তৈরী হতো বলে ধারনা করা হয়”।
অন্যান্য দুষিত স্থানের মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ঘানা, ইন্দোনেশিয়া এবং নাইজেরিয়ার নিগার রিভার ডেল্টা।
হ্যানরাহান বলেন এইসব দুষিত স্থানের দুষন কমানোর নানা প্রচেষ্টা চলছে। রিসাইক্লিং সেন্টারের কারনে চরম দুষিত ডমিনিকান রিপাবলিকের উদাহরন তুলে ধরে তিনি বলেন এই দেশটি দুষন মাত্রার শীর্ষ দশের তালিকায় ছিল। দূষণ কমানোর ফলে এখন নাম তুলে নেয়া হয়েছে।
দূষণ কমানোর প্রচেষ্টা চলছে ভারত, রাশিয়া এবং চীনেও। বিভিন্ন দেশের সরকার দূষণ কমাতে সচেষ্ট। নীতি নির্ধারক, পরিবেশ কর্মী ও সংশ্লিষ্টরা এ লক্ষ্যে কাজ করে চলছেন।
লাওসের ঝায়াবুরি বাঁধ নির্মাণ করে মেকং নদীতে জলবিদ্যুৎ নির্মান প্রকল্পের সমালোচনা করে অনেকে বলেছেন এতে মৎস প্রজনন বিঘ্নিত হবে। এ লক্ষ্যে লাওস, ক্যাম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়েছে মেকং রিভার কমিশন। ব্যাংককের চুলা-লংকর্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষক কার্ল মিডলটন এর সমালোচনা করেন।
“জ্বালানী নিরাপত্তার আগে এই নদীর নিরাপত্তার চিন্তা করা দরকার। কেমন করে যৌথ নীতিমালা হবে যাতে প্রমানিত হবে যে এই নদী এখন যেভাবে উপকার করছে তা ভবিষ্যতে সকলের জ্বালানী চাহিদা মেটাবে? এতে একে অন্যকে ছাড় দিতে হবে”।
তিনি বলেন অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জ্বালানীর প্রয়োজন রয়েছে বহু দেশের। কিন্তু জলবিদ্যুতের জন্য বাঁধ নির্মান না করে তার অন্য উপায়ও রয়েছে।
হিমালয়ের পাহাড় ও তিব্বতের বিভিন্ন স্থান রক্ষার আলোচনার লক্ষ্যে গত বছর ৫০টি বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা ভারতে একত্রিত হয়েছিলেন। ঐ এলাকা এবং মিঠা পানি রক্ষায় কি করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। কিভাবে সবুজ ভুমি মরুভূমিতে রূপান্তরিত হচ্ছে, কিভাবে লেক ও নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এসব নিয়েও আলোচনা হয়। বৌদ্ধ ধর্মগুরুরা শেখেন কিভাবে বৃষ্টির পানি জমিয়ে ভুমির পানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। আশা করা হয়েছে তারা ফিরে গিয়ে গ্রামবাসী ও স্থানীয় কর্মীদেরকে সেসব শেখাবেন।
ঐ আলোচনা উপস্থিত ছিলেন ওজিয়েন ট্রিনলে দর্জি। মনে করা হয় দালাই লামার মৃত্যুর পর তিনিই হবেন তিব্বতের ধর্মীয় নেতা। তিনি বললেন গোটা বিশ্বই পরিবেশগতভাবে জরুরী অবস্খায় যার মধ্যে তিব্বত এবং এশিয়ার অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
“উদ্বেগের মধ্যে বিশেষ করে বলতে হয় তিব্বতের উন্নয়ন কাজ যা পানি দুষণ ঘটাচ্ছে ব্যপক হারে”।
ওজিয়েন ট্রিনলি দর্জি তিব্বতের কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে সক্রিয় বা সম্পৃক্ত নন। ২০০০ সালে তিব্বত থেকে পালিয়ে আসার পর তিনি জনসমক্ষে তেমন কথাও বলেননি, তবে পরিবেশ নিয়ে তিনি শংকিত থাকায় এই মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন বৌদ্ধ ধর্মীয় মুল্যবোধ বিশ্বকে পরিবেশ দূষনের হাত থেকে রক্ষায় সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৪০:৫৭ ৪১৯ বার পঠিত