জাতীয় প্রেস কাবে সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে ও বন্ধ মিডিয়া খুলে দেয়ার দাবিতে আয়োজিত সাংবাদিক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সরকারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশি বাড়াবাড়ি করছে। প্রেস কাবেও এখন সাংবাদিকরা নিরাপদ নয়। তারা সরকারের উদ্দেশে আরো বলেন, দমন, পীড়ন ও হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রেসকাবে হামলাকারিদের গ্রেফতার ও বন্ধ মিডিয়া না খোলা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন সাংবাদিক নেতারা।
সোমবার জাতীয় প্রেস কাব চত্তরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ সমাবেশের আয়োজন করে। সভাপতির বক্তব্যে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, গত রোববার জাতীয় প্রেস কাবে আওয়ামীলীগ ক্যাডাররা যে হামলা চালিয়েছে তা ন্যাক্যারজনক ও পৈশাচিক। বর্বর এ হামলার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী সন্ত্রাসীরা শুধু প্রেস কাবেই নয়, সুপ্রীমকোর্টে আইনজীবীদের উপর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপরও হামলা চালিয়েছে। তিনি এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, উই পোকার পাখা ওঠে মরিবার তরে। সরকারের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বেশি বাড়াবাড়ি করছে।
সরকার সারা দেশে অত্যাচার, নির্যাতন চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিরোধীদলের একটি সমাবেশই সরকার সহ্য করতে পারছেনা। রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। জনগণের উপর নির্যাতনকারি সরকার কখনো গণতান্ত্রিক হতে পারেনা। দমন পীড়ন করে সাময়িক লাভ হলেও চূড়ান্ত ফল লাভ করা যায়না বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
জাতীয় প্রেস কাবে জঙ্গী রয়েছে- ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদের এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী বলেন, প্রেস কাব একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। এখানে মাঝে মাঝে পুলিশ সদস্যরাও আসেন। তাহলে তারাও কি জঙ্গী। তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের পেশাদারী আচারণ করারও আহবান জানান।
‘প্রেস কাবে বহিরাগতদের নিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালালে হামলার সুযোগ সৃষ্টি হয়’ প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর এমন মন্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ইকবাল সোবহান নিজেই বহিরাগত। হামলার সময় তিনি বহিরাগতদের নিয়ে কেন মিছিল করছিলেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সাগর-রুনির রক্তের সাথে বেঈমানী করে তিনি তথ্য উপদেষ্টা হয়েছেন, মিডিয়ার লাইসেন্স নিয়েছেন। সময় এলে সাংবাদিকরা এর সমুচিত জবাব দিবে।
রোববারের সাংবাদিকদের উপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রেক্ষাপটে কিছু মিডিয়া তথ্য বিকৃতি করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, আমার দেশসহ সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে না দেয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে আবারো ঘোষণা দিয়ে বিএফইউজের সভাপতি আরো বলেন, মাহমুদুর রহমানের মুক্তি, সাগর-রুনি ও ফটো সাংবাদিক আফতাবের হত্যাকারিদের গ্রেফতার এবং গণতন্ত্র মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। তিনি আজ মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় আবারো সমাবেশ করার ঘোষণা দেন।
বিএফইউজে মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, মতভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামীপন্থি সাংবাদিকরা ভিন্নমত সহ্য করতে না পেরে বহিরাগত সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে কর্মরত সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি এ ন্যাক্যারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, ইকবাল সোবহান চৌধুরী নিজেই প্রেসকাবে একজন বহিরাগত ব্যক্তি। তিনি সরকারি পদ গ্রহণ করার পর প্রেস কাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এখন আর প্রেসকাবের সদস্য নন। অথচ তিনি আমরা বহিরাগতদের এনেছি বলে অভিযোগ করেন। ইকবাল সোবহান চৌধুরীকে অবৈধ সরকারের অবৈধ উপদেষ্টা মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইকবাল সোবহান সব সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেন। বিএনপি আমলেও তিনি বিএনপির পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি একজন সুবিধাবাদী। বন্ধ মিডিয়া খুলে না দেয়া পর্যন্ত এবং গণতন্ত্র ফিরে না আসা পর্যন্ত সাংবাদিকদের আন্দোলন চলবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
ডিইউজে সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, কিছু দালাল সাংবাদিকদের ইন্ধনে প্রেসকাবে সাংবাদিকদের উপর হামলা করা হয়েছে। এসব দালালদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রধান দাবি গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছে। দেশে অলিখিত বাকশাল কায়েম করেছে। গণমাধ্যমের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। আমারদেশ, দিগন্ত, ইসলামিক টিভিসহ অনেক মিডিয়া বন্ধ করেছে। সরকারকে রক্ত পিপাসু উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেন, সরকার ‘৭৫-এর মতোই বাকশাল কায়েম করতে চায়। এজন্য মিডিয়া দলন করছে। একের পর এক মিডিয়া বন্ধ করেও তাদের মনে শান্তি আসেনি। এবার তারা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে। এ সরকারকে প্রতিহত করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
জাতীয় প্রেস কাবের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, জাতীয় প্রেসকাব একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। দলমত নির্বিশেষে সবাই এখানে তাদের অভিমত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু শাসকদলের লাঠিয়াল বাহিনী প্রেস কাবে সাংবাদিকদের উপর বর্বচিত হামলা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকারের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের নীল নকসার অংশ হিসেবে এ ন্যাক্যারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটের (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, গত রোবাবার সাংবাদিক নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয়। সরকারের স্বৈরাচারী আচারণ চূড়ান্তরূপ ধারণ করায় তারা ্েবসামাল হয়ে গেছে। সরকার গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ধ্বংসন করেছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, গণদুশমনদের পতন আসন্ন।
সমাবেশে ডিইউজের যুগ্ম-সম্পাদক শাহীন হাসনাতের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ ও সৈয়দ জাফর, ডিইউজের সাবেক সভাপতি আব্দুস শহীদ ও এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বিএফইউজে সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রোকন ও আমিরুল ইসলাম কাগজী, সিনিয়র সহকারি মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, জাতীয় প্রেস কাবের যুগ্ম-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ আকন, ডিইউজের সহ-সভাপতি খন্দকার হাসনাত পিন্টু, সাবেক সহ-সভাপতি ছড়াকার আবু সালেহ ও খায়রুল বাশার, প্রেসকাবের নির্বাহী সদস্য কবি হাসান হাফিজ, বিএফইউজের দফতর সম্পাদক আহমেদ মতিউর রহমান, কোষাধ্য মোদাব্বের হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবু ইউসুফ, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক মোহাম্মদ, কোষাধ্য এম এ নোমান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি সম্পাদক দিদারুল আলম, ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়শনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আহম্মেদ মীরু, ডিইউজে নির্বাহী সদস্য এরফানুল হক নাহিদ, আলমগীর হোসেন, আমার দেশ ইউনিট প্রধান বাছির জামাল, সংগ্রামেরশহিদুল ইসলাম, বাসসের আবুল কালাম মানিক, ইনকিলাবের ওমর ফারুক আল হাদী, দিগন্ত টিভির ইমরান আনসারী, দিনকালের ডেপুটি ইউনিট প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব, মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এম জসিম, খুলনা প্রেস কাবের সহ-সভাপতি এহতেশামুল হক শাওন, সাংবাদিক নেতা খুরশীদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২১:০৮:২৯ ৩৮০ বার পঠিত