(রাজু)বঙ্গ-নিউজ ডটকম:আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে ২০ ডিসেম্বর। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০ ডিসেম্বর সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে ইসির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশন থেকে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে শুক্রবার সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) মিলনায়তনে বিকাল ৩টায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ আছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এ বিষয়ে যে কার্যপত্র তৈরি করছে তা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচনে অংশ নেয়া অধিকাংশ প্রার্থীই আতঙ্কে থাকায় নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছেন না। অনেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যক্তিগত ও প্রচারণায় নিরাপত্তা চেয়ে লিখিতভাবে আবেদনও করেছেন।
কেবল প্রার্থীরাই নয় নির্বাচনের কাজে অংশ নেয়া কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কামরুল হাসান এই উদ্বেগের কথা জানিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইসির কাছে চিঠি দিয়েছেন। এসব কিছু বিবেচনায় এনে খুব তাড়াতাড়ি সেনা মোতায়েন হতে পারে বলেন জানা গেছে।
ইসির প্রস্তাবিত কার্যপত্র হতে জানা গেছে, প্রতি জেলায় এক ব্যাটলিয়ন ও থানা বা উপজেলায় দুই থেকে চার প্লাটুন সেনাবাহিনীর জোয়ান মোতায়েন করা হবে। এছাড়া নির্বাচনের দুই দিন আগে ও দুই দিন পরে মোট চার দিন ‘শো অফ ফোর্স’ বা সকলকে জানান দেয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনী নিয়োজিত থাকবেন।
এদিকে নির্বাচনে বিভিন্ন অপরাধ রোধে জুডিসিয়ারি ও নির্বাহী মিলিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে মোট ৯০০ মেজিস্ট্রেট।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর সকল বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বড় আকারে বৈঠক হবে। সে বৈঠকেই সেনা মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
ইসির এক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, ২০ ডিসেম্বরের বৈঠকেই কবে থেকে কতদিন সেনা মোতায়েন হবে সে সিদ্ধান্ত ছাড়াও সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। বর্তমান পরিস্থিতির অবনতি হলে বা কোনো পবির্তন না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এক্ষেত্রে সেনা মোতায়েন একটু আগে ভাগেই করা হবে।
সূত্র মতে, ডিসেম্বরের শেষভাগেই সেনা নামানো হবে। আর পরিস্থিতির উন্নতি হলে অন্য নির্বাচনের মতোই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইসির কার্যপত্র অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে প্রতি ভোটকেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৪ জন সদস্য মোতায়েন থাকবে। তবে মোট্রোপলিটন এলাকার প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে মোতায়েন করা হবে ১৮ জন সদস্য। এছাড়া পার্বত্য এলাকার প্রতি সাধারণ ভোটকেন্দ্রে ১৫ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন সদস্য নিয়োজিত করা হবে। এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র ৩৭ হাজার ৭১৭টি।
মনিটরিং সেল : নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হবে। এই সেল পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্মিলিত বাহিনীকে অবহিত করবে।
ভিজিল্যান্স টিম : বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ইলেক্টরাল ইনকোয়ারী কমিটিকে সহায়তা করতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ভিজিল্যান্স টিম গঠন করা হবে। যারা নির্বাচনী অপরাধ খতিয়ে দেখবে।
আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় সেল : নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে সমন্বয় সেল গঠন করা হবে। এতে পুলিশ, আনাসার, বিডিআর, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড এবং গোয়েন্দা সংস্থার একজন করে প্রতিনিধি থাকবে। যারা ভোটগ্রহণের ৫ দিন আগে থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকা সমন্বয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় ও ইসির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবে।
নির্বাচনে র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দলকে এলাকা ও ক্ষেত্রভেদে ভোটগ্রহণের ৪ ও ৫ দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের পরেও নিয়োজিত রাখা হবে।
এদিকে নির্বাচনে সীমান্তবর্তী ৮৭টি উপজেলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়ার কথা ভাবছে ইসি। এক্ষেত্রে সীমান্তবর্তী ৭০ উপজেলায় শুধু বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) মোতায়েন থাকবে। আর ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ উপজেলায় বিজিবি ও সশস্ত্র বাহিনী সমন্বিতভাবে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে।
সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি স্ট্রাইকিং ফোর্সের সঙ্গে থাকবে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। উপকূলীয় অঞ্চলে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের স্ট্রাইকিং ফোর্স দেয়া হবে। তবে সশস্ত্র বাহিনী নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করলেও তাদের প্রচলিত কমান্ড ও কন্ট্রোল ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।
ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাড়ে লাখ সদস্য ও সশস্ত্র বাহিনীর ৫০ হাজার জোয়ান মিলিয়ে মোট ৬ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন করা হবে। এ জন্য ইসিকে গুণতে হবে প্রায় ২২০ কোটি টাকা।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল মোতাবেক আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৯:২৬ ৪১৫ বার পঠিত