বঙ্গ-নিউজ ডটকম: হাসিনা সরে দাঁড়ালেই খালেদা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি আছে বলে জানিয়েছে ভারতের কলকাতার প্রভাবশালী বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে।প্রতিবেদনে বলা হয়, জামাতে ইসলামির লাগামছাড়া সন্ত্রাসের মধ্যেই বাংলাদেশে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরঙ্কুশ সংখাগরিষ্ঠতা পেয়ে গেল শেখ হাসিনার ১৪ দলের জোট। তার মধ্যেই খালেদা জিয়ার দল বিএনপি ঘোষণা করেছে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়লেই তারা নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি। নির্বাচনী সরকারের প্রধান হিসেবে তারা রাষ্ট্রপতি, সংসদের স্পিকার ও প্রাক্তন সেনা অফিসার তথা আওয়ামি লিগের এক বর্ষীয়ান নেতার নামও দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ এই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশের মানুষ চাইছেন, দু’পক্ষে এ বার বোঝাপড়া হয়ে নির্বাচনটা হোক। তা হলে হরতাল-অবরোধের যেমন অবসান হবে, জামাতের সন্ত্রাসেও কিছুটা লাগাম পড়বে।
আজ ভোরে পাবনায় খোদ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর বাড়িতেই হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে জামাতে ইসলামির কর্মীরা। নোয়াখালি ও নীলফামারিতে জামাত-বিএনপি কর্মীদের তাণ্ডবে অন্তত ১০ জন মারা গিয়েছেন। বহু ঘরবাড়িতে আগুন লাগানো হয়েছে। এর মধ্যেই কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে কাল জামাতের হরতাল। চলতি নির্ঘণ্ট মেনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমা কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫১টিতেই শাসক জোটের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। ফলে ভোটের আগেই শাসক জোট নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমঝোতার পরে বিএনপি নির্বাচনে রাজি হলে নির্বাচন কমিশনকে নতুন নির্ঘণ্ট ঘোষণা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে এই ফল বাতিল হয়ে যাবে। শাসক জোটের সূত্রে খবর, সেই পরিস্থিতিতে এপ্রিলে সাধারণ নির্বাচন হতে পারে বাংলাদেশে। আলোচনার টেবিলে বিএনপি নেতৃত্ব অবস্থান নরম করায়, তেমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্ডেজ তারানকোর মধ্যস্থতায় আওয়ামি লিগ ও বিএনপি যে আলোচনা প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তারই অঙ্গ হিসেবে ঢাকার একটি বাড়িতে কাল ফের একান্ত বৈঠকে বসেছিলেন দু’দলের মহাসচিবরা। দু’দলের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাও এই বৈঠকে ছিলেন। আওয়ামি লিগ সূত্রের খবর, সেখানেই নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট কাটানোর লক্ষ্যে বিএনপি-র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে দেন আওয়ামি লিগের মহাসচিব সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হাতে। তাতেই বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ছেড়ে সরে দাঁড়ালেই বিএনপি নির্বাচনে যোগ দিতে রাজি।
অন্তর্বর্তী নির্বাচনী সরকারে যোগ দেওয়ার বিষয়ে বিএনপি-র প্রস্তাবে স্পষ্ট কিছু বলা না-থাকলেও তার প্রধান হিসেবে তিনটি বিকল্পের কথা বলা হয়েছে। এক রাষ্ট্রপতি, দুই সংসদের স্পিকার এবং তিন, সদ্য-প্রাক্তন মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। সঙ্গে জেলবন্দি বিএনপি নেতাদের মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে। আওয়ামি লিগের তরফেও বিএনপি নেতৃত্বকে একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাতে খালেদা জিয়ার দলকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ভোটের সময়ে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকলেও তাঁর প্রশাসনিক ক্ষমতা সরিয়ে রাখা হবে। সুষ্ঠু আলোচনার স্বার্থে হরতাল-অবরোধ না-ডাকার জন্যও বিএনপির কাছে আর্জি জানানো হয়েছে। শেষ খবর, দুই প্রস্তাবই বিবেচনার জন্য এখন দুই নেত্রীর টেবিলে। খুব শীঘ্রই আবার দু’দল বৈঠকে বসছে। মানুষ মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে জামাতের নাশকতায় লাগাম পড়বে।
এর মধ্যেই দলের নেতা হুসেইন মহম্মদ এরশাদকে সরকারের আটকে রাখার খবর অস্বীকার করে আজ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাঁর স্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ। তিন দিন ধরেই সরকারের সঙ্গে বেগম রওশনের আলোচনা চলছিল। এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা করলেও একটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। তাঁর দলের বেশ কয়েক জন প্রার্থীও এ ভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। কাদের মোল্লার ফাঁসির প্রতিবাদে জামাতের সন্ত্রাস এ দিনও অব্যাহত।
ঢাকায় আজ গুন্ডামি ও বোমাবাজি কিছুটা কম থাকলেও শহরের উপকণ্ঠে সাভার ও নারায়ণগঞ্জে থানায় আগুন দেওয়া হয়। নীলফামারিতে অভিনেতা ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নুরের গাড়িতে হামলা চালায় জামাত-কর্মীরা। সেখানে পুলিশের গুলিতে জামাতের এক কর্মী মারা যান। খুন হন আওয়ামি লিগের এক কর্মীও। সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটেছে নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জে। জামাত সেখানে প্রায় এক ডজন সরকারি অফিসে আগুন লাগিয়ে লুঠ করে। পুলিশ ও দমকলের উপরও হামলা হয়। পুলিশের গুলিতে ৮ জন মারা গিয়েছেন এখানে। কাল হরতালের আগে সারা দেশে বাড়তি পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৩:২৫ ৩৪৯ বার পঠিত