বঙ্গ-নিউজ ডটকম: বিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি। বিরোধী দলীয় নেত্রীর বিবৃতি। ১৪ দলীয় জোটের নিস্ফল আস্ফালন। এরশাদ গ্রেপ্তার। এরশাদ হাসপাতালে। রওশন এরশাদের তালাক। রুহুল আমীনের এরশাদপ্রীতি। ভাই ভাইকে ছাড়লো না। এরশাদকে এমপি করতেই হবে। এরশাদের খবর নেই। দেশব্যাপী জাপা’র এরশাদ সমর্থিত বিক্ষোভ। এরশাদকে না ছাড়লে লাগাতার আন্দোলনের স্লোগান। কাজী জাফর ১৮ দলের ১৯।কাদের মোল্লার ফাঁসি। দেশব্যাপী গায়েবানা জানাযা। হাজার হাজার মানুষ জানাযায় অংশগ্রহণ। কয়েকটি মুসলিম দেশে কাদের মোল্লার সপক্ষে মিছিল। বিদেশি আইনজীবী কাদের মোল্লার ফাঁসিকে বিচারিক খুন বলেছেন। বলেছেন, মূলত তাকে হত্যা করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। টক শো’র বিতর্ক। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণদের আন্তর্জাতিক বক্তৃতা। আপাতত সেখানে কেউ নেই। পুলিশ বাদী হয়ে ৫৪ হাজার মামলা দায়ের। আসামি ২০ লাখ। বিরোধী দলীয় নেতারা বৈঠক চালিয়ে নেওয়ার শর্তে এখন মুক্ত। কেউ অন্তর্ধ্যানে নেই। বিএনপি অফিস অবরুদ্ধ। ৩৪টি জেলা রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন। দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ। রেলের মহানিয়ন্ত্রক সাময়িক বরখাস্ত। তারানকো ফিরে গেছেন তার জাতিসংঘ কার্যালয়ে। স্বঘোষিত সফলতা দুই মহাসচিবের বৈঠকের দূতিয়ালি। ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ। ভারতীয় শাসক বিভ্রান্ত। নির্বাচনে কংগ্রেসের লাগাতার ভরাডুবির সংবাদ। বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নির্বাচন কারচুপি বিহীন অবস্থায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় ১৪৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস। বাকি আসনগুলোও তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পেয়ে যাবেন- এমন খবরও নির্বাচন কমিশনারের কাছে আছে। সে কারণেই তিনি বলেছেন, নির্বাচন সিডিউল পেছানো বা স্থগিত করা এখন কঠিন বিষয়।
বাংলাদেশ সবসময়ই কিছু কিছু কাজে বিশ্ব রেকর্ড করে। সে সকর কাজের মধ্যে দুঃখজনক কাজও আছে, বেদনাদায়ক কাজও আছে, আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেশাই নিজের প্রস্রাব নিজেই খেতেন- এমন হাস্যকর সংবাদও আছে। পদ্মাসেতুর দুর্নীতি, হলমার্কের টাকা লুট, প্রধানমন্ত্রীর ছেলের বিনা ডিগ্রিতে উপদেষ্টা হওয়া, পুতুলের খেলা- এ সবই বিশ্বরেকর্ডের পর্যায়ে পড়ে। সবচেয়ে নতুন দুনিয়াকাঁপানো রুশ বিপ্লবের দশ দিনের মতো এবার যে রেকর্ডটি সম্পন্ন করলো তা হলো- অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস। সঙ্গে তার হুন্ডা পার্টিসমূহ।
দেশের কোনো মানুষ দেশে নির্বাচন হচ্ছে- এ কথা স্পষ্টভাবে বলে না। বলে না, যে এমপিরা পাস করলো তারাও। অনেক নিকটাত্মীয় ফোন করে যখন তাদেরকে বলে, তারা বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করেছে, উত্তরে তারা বলছে, কী দিয়ে কী হচ্ছে জানি না; নেত্রীই ভালো জানেন। অর্থাৎ পাসের সংবাদটি দিতেও তারা লজ্জা পাচ্ছেন। এ অবস্থায় যখন দেশ তখন কাদের মোল্লার মৃত্যুদ- এবং শাহবাগের হকারসমাবেশ যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনায় আসতো যদি শাহবাগ জমাতে পারত। এবার সেবারের মতো সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা তাদের ভাগ্যে জুটেনি। ফলে মশাল মিছিলের কেরোসিন ক্রয় নিয়েও ছোটখাটো ঝগড়া শাহবাগ চত্বরে দেখা গেল।
প্রজন্মের জাগরণ যুগে যুগে দিক-নির্দেশনা দেয়। আর আমাদের জাগরণ মৃত্যুকামনা, উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন, অর্থহীন স্লোগান। রাজধানী ঢাকায় কোনো সড়কে জনসভা করা, মিছিল করা, অবস্থান নেওয়া পুলিশের পূর্বানুমতির বিষয়। হেফাযত অনুমতি নেওয়ার পরও এক রাত থাকতে পারেনি। বিএনপি সভা করতে পারে না ৪৮ ঘণ্টার নোটিশেও; কিন্তু শাহবাগ যার তিন দিকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাকেন্দ্র এবং শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত, সেই চত্বরে সভা অনুষ্ঠানের কোনো অনুমতি কোনো পুলিশ দিয়েছে তা জানা নেই।
ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে টেলিফোনে জিজ্ঞাসা করলে অপর প্রান্ত থেকে উত্তর হলো- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করেন। দেশে এখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আছেন। সংবিধান অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং। প্রতিমন্ত্রী নিজেই বাড়িরসমেত আগুনের মুখোমুখি। তার বাড়িঘর বোমায় আক্রান্ত। প্রতিপক্ষ তাকে হিন্দুদের জমি দখল, বাড়িঘর লুট ইত্যাদি নানান বিষয়ে অভিযুক্ত করে প্রায় প্রতিদিন পত্র-পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছে এবং স্ট্যাটাস দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগগুলোতে।
প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসা বলেছেন, দেশ এখন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নয়; গণপ্রজাতন্ত্রী ঢাকা। অর্থাৎ তার তথ্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী এখন সরকারসমেত রাজধানী ঢাকায় জিম্মি অবস্থায়। যেমন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিম্মি আছেন তার সাবেক কার্যালয় সেনাসদরের প্রধান হাসপাতালে।
নতুন নতুন খবর এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য। ৮৮ বছরের এরশাদ রওশন এরশাদকে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে তালাক দিয়েছেন- এই সংবাদ এখন নাবালকদের মুখে মুখেও ঘুরছে। এর মধ্যে যোগ হয়েছে, বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের মহান নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুসংবাদ এবং তার তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী উইনি ম্যান্ডেলা। সুখের খবর হলো উইনি ম্যান্ডেলা স্বামীর জন্য স্বামীর আদর্শে ২৮ বছর অবিরাম আন্দোলন করার পর যখন রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশীদারিত্বের বিষয়টি দলীয় বৈঠকে উত্থাপিত হলো, দ্বন্দ্ব সেখানেই। ম্যান্ডেলা তালাক দিয়েছিলেন তার স্ত্রীকে কিন্তু মন্ত্রীও রেখেছিলেন তার সবটুকু সময়জুড়ে। এরশাদের নারীবিষয়ক নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে রওশন অনেক কথাই বলেছেন। একসময় রওশনের মা এরশাদের শাশুড়ি সুন্দরী বেগম- তিনিও দুঃখ করে বলেছিলেন, এরশাদ ভালো মানুষ নয়। এটা জারজ। আমার মেয়েটাকে শুধু কষ্টই দেয় না, ও সব মহিলাকেই কষ্ট দেয়।
এখন রওশন শেষ কষ্টে পড়েছেন কি না আমরা জানি না। তবে তোফায়েল আহমদ আর গওহর রিজভী হঠাৎ করে কী সমবেদনার ডালি নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন- এটাও সকল নষ্ট ও সুন্দর আলোচনার মধ্যে সম্পৃক্ত হয়েছে।
জাতীয় পার্টি এ যাত্রায় থাকবে কি না তা বোঝা যাচ্ছে না। একটি কথা আছে, যারা সব ভাঙার ওস্তাদ হয় তাদের ঘর যখন ভাঙে তখন ঝড়কেও ছাড়িয়ে যায়। যে কাজটি ক্ষমতায় থাকার জন্য বর্তমান আওয়ামী লীগ এরশাদকে নিয়ে করলো, দেশের মানুষকে নিয়ে যে নির্মম খেলা তারা খেলছেন, তার পক্ষে-বিপক্ষে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনও প্রচার করছে একটি পত্রিকা। সংসদের সামনে মানববন্ধন হয়েছে। সবার হাতে ব্যানার ছিল, দেশের মানুষের কথা শুনুন, দুই নেত্রী আলোচনা করুন। শান্তির সপক্ষে মানুষের এই মানববন্ধন খুব দ্রুত মানববিস্ফোরণে ফেটে পড়বে না- এমনটি স্পষ্ট করে বলা কঠিন।
সময়কে সময় দিয়ে সুস্থ সুন্দর মানসিকতায় নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশ অন্য কোথাও, অন্য কোনো কিছুর নিয়ন্ত্রণে যে যাবে না- এটাও চিন্তা করা কঠিন।
বিরোধী দলীয় নেত্রী সময়ের পরিস্থিতির জন্য বিবৃতি দিতে গিয়ে প্রতিবেশী দেশের উদ্দেশ্যে যে কথাটি বলেছেন, এটাও সুন্দর কোনো কথা নয়। ভারতের শাসকগোষ্ঠী আমার সম্পর্কে, আমাদের দেশের মানুষ সম্পর্কে কখন কী মন্তব্য করলো, তার বিরুদ্ধে দেশের নির্বাচন, রাজনীতি বা আন্দোলনকে সমান্তরাল মূল্যায়নের অনুরোধ আমরা ভারতকে করতে পারি না।
সুতরাং শঙ্কিত দেশ, শঙ্কিত দেশের মানুষ। প্রশ্ন সবার কাছে একটিই, দেশ যাচ্ছে কোথায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১:২২:৪৯ ৪৩২ বার পঠিত