সুমির দুঃসাহসে ভীত ওয়ালমার্ট!

Home Page » এক্সক্লুসিভ » সুমির দুঃসাহসে ভীত ওয়ালমার্ট!
বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০১৩



sumy.jpgতানিয়া সুলতানা বঙ্গ-নিউজডটকম:(নিউইয়র্ক থেকে )সুমি আবেদীনকে দেখে অনেকটা দৌড়ে পালান ওয়ালমার্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট। পরিচালনা বোর্ডের অপর এক সদস্যও তাকে দরজায় দেখতে পেয়ে দ্রুত ভেতরে ঢুকে পড়েন ।বলা যায়, সুমি আবেদীনের দুঃসাহসী অভিযানে ভীত হয়ে পড়েছে ওয়ালমার্ট। বাংলাদেশ থেকে পৃথিবীর অপর পৃষ্ঠে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশে এসে এক আহত শ্রমিক ওয়ালমার্টের মতো একটি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের এ ভাবে ভয় দেখাতে পেরেছেন তা অবিশ্বাস্য!
তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির ভয়াবহ আগুনের সেই রাতে সাততলা ভবনের চারতলার জানলা ভেঙে লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বেঁচেছিলেন সুমি আবটনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এর পর গেছেন আরকানসাসে ওয়ালমার্টের গ্লোবাল হেডকোয়ার্টারে। সেখানে ওয়ালমার্টের কর্মকর্তারা ভয়েই মুখ দেখাননি সুমি ও কল্পনা আক্তারকে। ঘটনাটিকে এভাবেই ব্যাখ্যা দিচ্ছে সামঅবআস নামে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি শ্রমিক অধিকার সংগঠন। সামঅবআস’র কর্মকর্তা বর্ণনা করলেন সেই দিনের ঘটনা । রব ওহল জানান, সে দিন সামঅবআস-এর ১ লাখ ১৪ হাজার সদস্যের সই করা একটি আবেদন নিয়ে সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তারের নেতৃত্বে ওয়ালমার্ট হেডকোয়ার্টারে যান তারা। তিনি বলেন, “পৃথিবীর প্রায় অর্ধেকটা পথ পাড়ি দিয়ে সুমি ও কল্পনা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন। তাদের দাবি, নিরাপদ কর্মস্থল ও তাজরীনে হতাহতদের যথার্থ ক্ষতিপূরণ দান। তাজরীনের অগ্নিদুর্ঘটনায় হতাহতদের দায়িত্ব ওয়ালমার্টকে নিতে হবে। কারণ, সে রাতে ওয়ালমার্টের জদুই বাংলাদেশি তরুণী সুমি ও কল্পনা গিয়ে দাঁড়ালেন ওয়ালমার্টের দরজায়, তখন তাদের মুখের ওপরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় দরজা। বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা অনেকটা ভয়েই পালিয়ে যান। সুমি ও কল্পনার সঙ্গেই ছিলেন রব ওহল। তিনি বলেন, “সামঅবআস’র ১ লাখ ১৪ হাজার সদস্যের সই করা দরখাস্ত নিয়ে আমরা ওয়ালমার্টে যাই। সেখানে আমরা যখন কারখানার পাশের রাস্তা ধরে হাঁটছিলাম, তখনই নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের আটকে দেয়।” তিনি বলেন, “আমরা এ সময় ওয়ালমার্টের গ্লোবাল সোর্সিং বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট টিম ইয়াটস্কোর সঙ্গে দেখা করতে তার বাড়িতে যাই । ড্রাইভওয়েতে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি দ্রুত দৌড়ে ভেতরে ঢুকে পড়েন” “পরে আমরা যাই পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আরনে সরেনসেনের সঙ্গে দেখা করতে। তার সঙ্গেও আমাদের দেখা হয়নি। কারণ, তিনি দরজা পর্যন্ত এগিয়ে এসে আমাদের দেখতে পেয়েই দ্রুত ভেতরে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন,” বলেন রব। ওয়ালমার্টের এই আচরণকে নিতান্তই ভীতুর আচরণ বলে মত দিয়েছেন রব ওহল। রব বলেন, “সুমি আবেদীন সে রাতে যেভাবে বেঁচে যান, তার বর্ণনা আমরা তার মুখেই শুনেছি। সুমি জানিয়েছেন তিনি বাঁচার জন্য নয়, তার দেহটি যাতে পুড়ে ছাই ন হয়ে যায়, সেই ভাবনা থেকেই লাফ দিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি বেঁচে যান। তবে একটি হাত ও একটি পা ভেঙে ফেলেন। তবে সুমি বাঁচলেও বাঁচতে পারেননি তার সহকর্মী ১১২ জন শ্রমিক।” “সুমির এই ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর, ওয়ালমার্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, ওয়্যারহাউজগুলোর শ্রমিক এবং আরকানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুভূতি তৈরি করেছে। কেবল ওয়ালমার্টের কর্তাব্যক্তিরা এতে বিচলিত নন বা বিচলিত হতে চাননি।” তিনি আরও বলেন, “সুমি আবেদীন যখন আরকানসাসে ওয়ার্কার জাস্টিস সেন্টারে বসে একদল অভিবাসী পোল্ট্রি শ্রমিকের উদ্দেশে তার মর্মান্তিক কাহিনীর বর্ণনা দিচ্ছিলেন তখন শ্রমিকরা এতটাই ব্যথিত হয়ে পড়েন যে, তাদের মধ্যে কেউ একজন তার হ্যাটটি খুলে তার মধ্যে সুমির চিকিৎসার জন্য সহায়তা তুলতে উদ্যোগী হন। তখনই এই হ্যাটের মধ্যে ২০০ ডলার জমা পড়ে। শ্রমিকরা এই সময় বাংলাদেশের শ্রমিকদের প্রতি সংহতিও প্রকাশ করে ভবিষ্যতেও তাদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সোচ্চার থাকবেন বলে জানান।”

সুমি ও কল্পনারা এর পর আরকানসাসে ওয়ালমার্টের একটি স্টোরেও যান। সুমি আসলে দেখতে চেয়েছিলেন পৃথিবীর অপর পিঠ থেকে তাদের হাতে বানানো কাপড়গুলো এখানে কীভাবে বিক্রি হয়, কারা সেগুলো কেনেন? রব ওহল বলেন, “আরকানসাসের রজারে আমরা যখন ওয়ালমার্টের একটি স্টোরে ঢুকি, তখন স্টোর ম্যানেজার সুমির কাহিনী শুনে নির্বাক হয়ে যান।” রব বলেন, “ওয়ালমার্টের কর্তাব্যক্তিরা সুমির কথা না শুনে বরং দৌড়াবে কিংবা পালাবে এমন ঘটনা মোটেই বিষ্ময়ের নয়। তবে মানবতার এতটুকু বোধও যার মধ্যে বর্তমান রয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলবে ওয়ালমার্ট কেন ওই ফ্যাক্টরির পুড়ে যাওয়া শ্রমিকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে না?”ওয়ালমার্ট অবশ্য কোনো ক্ষতিপূরণ দিতেই রাজি নয়। বরং তারা বাংলাদেশের অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত নিলেও ওয়ালমার্ট যে আজ ভীত হয়ে পড়েছে, তা নিশ্চিত করেছে কর্তাব্যক্তিদের আচরণ। তবে প্রতিষ্ঠানটির ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে যাতে করে তারা কখনোই তাদের পণ্য তৈরি করে যেসব শ্রমিক, তাদের প্রতি দায়িত্বশীলতা ভুলতে না পারে,” বলেন রব ওহল। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ২৫ নভেম্বর রাতে বাংলাদেশে ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগে। সে রাতে আগুনে পুড়ে ও সুমির মতো লাফ দিয়ে পড়ে মারা যায় মোট ১১২ জন শ্রমিক।

এই শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ চাইতেই এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান করছেন সুমি আবেদীন ও কল্পনা আক্তার।

বাংলাদেশ সময়: ৮:৪৫:৫২   ৫৯৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

এক্সক্লুসিভ’র আরও খবর


এস এস সি পাশের হার কমছে বেড়েছে জিপিএ-৫
শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্রে সানি লিওনের ছবি!
শক্তিশালী প্রসেসরে নতুন স্মার্টফোন বাজারে আনছে মটোরোলা
ভারত ৩৬টি স্যাটেলাইট স্থাপন করল একসঙ্গে !!
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস, পরে কথিত স্বামীকে কুপিয়ে হত্যা
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে পদযাত্রা
রাশিয়ার নৌবাহিনীতে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সাবমেরিন!
টিকিট দুর্নীতির প্রতিবাদে রনি, সহজ ডটকমকে ২ লাখ টাকা জরিমানা
ট্রাকচাপায় মেয়েসহ তারা তিনজন নিহত; রাস্তায় গর্ভস্থ শিশু ভুমিষ্ঠ
রোহিঙ্গা যুবক নুর বারেক আটক ,২০ লাখ টাকা উদ্ধার

আর্কাইভ