বঙ্গ-নিউজ ডটকম: স্মৃতিফলক, ফুল আর মোমবাতি জ্বালিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বর্ণবাদবিরোধী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা মৃত্যুতে গোটা দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে এখন শোকের ছায়া।
প্রিয় নেতাকে হারানোর পর দেশটির মানুষ এই শোকের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন নানা ভাবে, কেউ অশ্রু বিসর্জন করে, কেউ গান গেয়ে, কেউ নেচে।
নানাধরনের অস্থায়ী স্মৃতিফলক ও ফুল দিয়ে এবং মোমবাতি জ্বালিয়ে মানুষ তাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছে। অনেকে আবার তার জীবনের বন্দনায় গাইছে কৃষ্ণাঙ্গদের মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা নানা গান।
সোয়েটোর যে বাড়িতে একসময় নেলসন ম্যান্ডেলা থাকতেন, তার বাইরে সারা রাত ধরেই ভিড় করেছেন শত শত মানুষ।
প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করার পর শুধু দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, সারা বিশ্বেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
বিশ্বের অনেক দেশেই রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশে ৭, ৮, ও ৯ই ডিসেম্বর তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোকপালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভারতে ৫ দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে।
“এই পৃথিবীতে আমরা যত মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী, সবচেয়ে সাহসী এবং সবচেয়ে মানবিক মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি।“
প্রেসিডেন্ট ওবামা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট্ বারাক ওবামা বলেছেন, একজন মানুষের জীবনে সর্বোচ্চ যেটুকু অর্জন করা সম্ভব, নেলসন ম্যান্ডেলা তাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন, অন্যদের স্বাধীনতার জন্য তিনি নিজের স্বাধীনতাকে উৎসর্গ করেছিলেন।
”এই পৃথিবীতে আমরা যত মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়েছি, তার মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী, সবচেয়েও সাহসী এবং সবচেয়ে মানবিক মানুষটিকে আমরা হারিয়েছি। তীব্র মর্যাদাবোধ এবং সব মানুষের স্বাধীনতার জন্য নিজের স্বাধীনতা বিসর্জন দেয়ার যে অনমনীয় মনোবল তিনি দেখিয়েছেন, সেটা শুধু দক্ষিণ আফ্রিকাকেই বদলে দেয়নি, আমাদের সবাইকে সামনে এগিয়ে দিয়েছে।”
মিঃ ম্যান্ডেলার ঘনিষ্ট বন্ধু আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু কেপ টাউনে একটি বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠান করেছেন। ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন একটা বিভক্ত দেশকে মিঃ ম্যান্ডেলা একতার সূত্রে বেঁধেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনামলের শেষ প্রেসিডেন্ট এফ ডাব্লিউ ডি ক্লার্ক যিনি মিঃ ম্যান্ডেলাকে তিন দশক কারাবন্দী থাকার পর মুক্তি দেন তিনি বলেছেন মিঃ ম্যান্ডেলার মনে তিক্ততা বলতে কিছু তিনি দেখেন নি।
”দক্ষিণ আফ্রিকায় তার কিংবদন্তী - কারণ তিনি সংঘাতময় অতীত থেকে শান্তিপূর্ণ বর্তমানে উত্তরনের জন্য সফল একটা সেতু রচনা করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন ঐক্যের পূজারী।”
‘মাদিবা’ নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত ছিলেন ম্যান্ডেলা
দক্ষিণ আফ্রিকায় এখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে শেষ বিদায় জানানোর প্রস্তুতি চলছে।
সোমবার জোহানেসবার্গের উপকন্ঠে জাতীয়ভাবে শোক প্রকাশের জন্য যে অনুষ্ঠান হবে সেখানে লক্ষাধিক মানুষ যোগ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রিটোরিয়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তিনদিন তার মরদেহ রাখা হবে, যেখানে সবাই তার প্রতি সম্মান জানানোর সুযোগ পাবেন।
মিঃ ম্যান্ডেলা ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন ধরে।
৯৫ বছর বয়সে নিজের বাসভবনেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমা জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে দেওয়া জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নেলসন ম্যান্ডেলার মৃত্যুর খবর ঘোষণা করে বলেন, পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে।
“তিনি সংঘাতময় অতীত থেকে শান্তিপূর্ণ বর্তমানে উত্তরনের জন্য সফল একটা সেতু রচনা করতে পেরেছিলেন। তিনি ছিলেন ঐক্যের পূজারী।“
এফ ডাব্লিউ ডি ক্লার্ক, দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট
তিনি সারা দেশে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন এবং নেলসন ম্যান্ডেলাকে সমাহিত করা পর্যন্ত অর্থাৎ ১০ দিন পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে ঘোষণা দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার জনতাকে উদ্দেশ্য করে মিঃ জুমা বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট, আমাদের সবার প্রিয় নেলসন ম্যান্ডেলা চলে গেছেন। নিজের বাড়িতেই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মারা গেছেন। তাঁর বিদায়ে আমাদের জাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তান, আমাদের জনতা হারিয়েছে পিতার মত এক আশ্রয়।”
মিঃ জুমা আরো বলেন, ‘আমরা জানতাম যে, বিদায়ের এই দিন একদিন আসবে। কিন্তু তবুও, তার বিদায়ে আমরা যে গভীর বেদনা পেয়েছি, যে অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের হয়েছে, তা কিছুতেই কমানো সম্ভব নয়।’
‘মাদিবা’ নামে ভক্তদের কাছে পরিচিত ম্যান্ডেলার উত্থান অজ গ্রামীণ জীবন থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় যখন সংখ্যালঘু শেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের আধিপত্য, নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক শাসন ব্যাবস্থা চলছিল তখন বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে রাস্তায় নামেন ম্যান্ডেলা।
প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডের অপরাধে দীর্ঘ ২৭ বছর তিনি কারাবন্দী জীবন কাটিয়েছেন।
তাঁর নেতৃত্বেই গত শতকের নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘটে শেতাঙ্গ শাসনের আধিপত্যের অবসান।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৩০:৫৪ ৫১৮ বার পঠিত