বঙ্গনিউজ ডটকম: সৃজনশীল প্রশ্ন অংশ-২
প্রিয় এসএসসি পরীক্ষার্থী, শুভেচ্ছা রইলো। আজ বাংলা ১ম পত্রের ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধ থেকে দেওয়া হলো একটি সৃজনশীল প্রশ্ন ও তার উত্তর।
জনৈক বাংলা শিক্ষক তাঁর কলেজপড়ুয়া ছেলেকে একটি পত্র লেখেন। পত্রের কিছু অংশ নিচে দেওয়া হলো: ‘স্নেহাষ্পদেষু, তোমার স্বহস্ত লিখিত পত্রখানি ডাক বাহকের হস্ত ঘুরিয়া কিয়ৎ দিবস পূর্বে আমার হস্তগত হইলে আমি পত্রপাঠে বিশেষ প্রীত হইতে পারি নাই। তুমি কি আমার সহিত প্রপঞ্চ করিতেছ? তা না হইলে তোমার বন্ধু মারফত তোমার সম্পর্কে একি অশ্রুতপূর্ব ঘটনা শুনিলাম! ঘটনা শ্রুতপূর্বক আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়াছি এবং তদ্ধেতুক উক্ত পত্রখানি রচনা করিতে বসিয়াছি। মনে রাখিও, বিভাবরীর অবসানেই ভাণুর প্রতাপ প্রজ্বলিত হয়।
ক. বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাসের নাম কী? ১
খ. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধে ‘বিজ্ঞাপন’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইশতিহার’ ব্যবহার করতে বলেছেন কেন? ২
গ. ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধে প্রকাশিত কোন দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত? ব্যাখ্যা করো। ৩
ঘ. উক্ত পত্রটি সহজবোধ্য করতে ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধের বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে কাজ করবে? বুঝিয়ে লেখো। ৪
১ (ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাসের নাম দুর্গেশনন্দিনী।
১ (খ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর
‘ইশতিহার’ লৌকিক শব্দ এবং এটি ব্যবহার করলে রচনা বা সাহিত্যকর্মের ভাব বা অর্থ খুব দ্রুত প্রকাশ পায়। তাই বঙ্কিমচন্দ্র ‘বিজ্ঞাপন’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইশতিহার’ শব্দ ব্যবহার করতে বলেছেন।
যেকোনো রচনা বা সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রে উপযুক্ত শব্দচয়নের গুরুত্ব সর্বাধিক। অর্থবিভ্রান্তি নেই, এমন লৌকিক বা প্রচলিত শব্দ ব্যবহার করলে রচনার অর্থ দ্রুত প্রকাশ পায়। বিজ্ঞাপন সংস্কৃত শব্দ বিধায় তৎকালীন অনেক সাহিত্যিক বিজ্ঞাপন শব্দ ব্যবহারের পক্ষে থাকলেও, বঙ্কিমচন্দ্র এর পরিবর্তে ইশতিহার ব্যবহার করতে বলেছেন। বিদেশি শব্দ হলেও এর লৌকিকতা আছে এবং বিজ্ঞাপন
শব্দের মতো এটা বিভিন্নার্থক নয়।
১ (গ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর:
‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধের প্রাঞ্জলতার দিকটি উদ্দীপকে অনুপস্থিত। প্রাঞ্জলতা অর্থ সহজবোধ্যতা। অর্থাৎ পাঠক কোনো সাহিত্যকর্ম পড়ামাত্র বুঝতে পারলে তাকেই ওই সাহিত্যের ‘প্রাঞ্জলতা’ গুণ বলে। বঙ্কিমচন্দ্রের মতে, বেশ কিছু কৌশল মনে রাখলে রচনা প্রাঞ্জল হয়। অর্থাৎ অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার না করা, বাক্য জটিল না করা, অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে বাহুল্যদোষ না ঘটানো ইত্যাদি মনে রাখলে রচনায় প্রাঞ্জলতা আসে।আলোচ্য উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, জনৈক বাংলা শিক্ষক তাঁর লেখা পত্রে অনেক অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে বাহুল্যদোষ ঘটিয়েছেন। অনেক বাক্যকে একত্র করে জটিল বাক্য বানিয়েছেন। ফলে পত্রের ভাব খুব সহজে প্রকাশ পাচ্ছে না। তিনি বিভাবরী, প্রপঞ্চ, তদ্ধেতুক, ভাণু, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইত্যাদি অপ্রচলিত দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করেছেন। যেখানে বঙ্কিমচন্দ্র হুতাশন, হুতভুক, বায়ুসখা, বৈশ্বানর ব্যবহার না করে অগ্নি বা আগুন ব্যবহার করতে বলেছেন। কাজেই দেখা যায়, উদ্দীপকে প্রাঞ্জলতার অভাব রয়েছে।
১ (ঘ) নম্বর প্রশ্নের উত্তর:
‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর সাহায্যে ওই পত্রটিকে অনায়াসে সহজবোধ্য করা যায়।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতে, রচনার প্রধান দুটি শিল্পগুণ হলো ‘অর্থব্যক্তি’ ও ‘প্রাঞ্জলতা’। উপযুক্ত লৌকিক শব্দ চয়ন ও প্রয়োগই হচ্ছে অর্থব্যক্তি বা অর্থপ্রকাশ। আর সাহিত্যের সহজবোধ্যতার গুণটি হলো প্রাঞ্জলতা। অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার না করে, বাক্য জটিল না করে, অপ্রয়োজনীয় শব্দ ব্যবহার করে বাহুল্যদোষ না ঘটিয়ে, স্থূল বাক্যকে সম্প্রসারণ ও উদাহরণ প্রয়োগ করে প্রাঞ্জলতা আনা সম্ভব।
আলোচ্য উদ্দীপকের পত্রে অনেক অপ্রচলিত ও দুর্বোধ্য শব্দ যেমন কিয়ৎদিবস, বিভাবরী, প্রপঞ্চ, ভাণু, কিংকর্তব্যবিমূঢ় ইত্যাদি ব্যবহূত হয়েছে। একই সঙ্গে সন্ধি-সমাসজাত শব্দ স্বহস্তলিখিত, হস্তগত, অশ্রুতপূর্ব, তদ্ধেতুক ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ভাব প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া একাধিক বাক্য একত্র করার ফলে বাক্য জটিল হয়েছে। অপ্রাসঙ্গিক অনেক শব্দ এসে পত্রকে বাহুল্যদোষে আক্রান্ত করেছে।
একজন লেখককে এসব নেতিবাচক প্রবণতা পরিহার করার জন্য বঙ্কিমচন্দ্র পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর মতে, পত্রটি সহজবোধ্য করতে অপ্রচলিত, দুর্বোধ্য শব্দ ‘কিয়ৎদিবস’-এর বদলে ‘কিছুদিন’; ‘প্রপঞ্চ’র পরিবর্তে ‘ছলনা’ বা ‘প্রতারণা’ ও ‘বিভাবরী’র পরিবর্তে ‘রাত’ শব্দগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার সন্ধি-সমাসজাত শব্দ ‘তদ্ধেতুক’-এর পরিবর্তে ‘সে জন্য’; ‘অশ্রুতপূর্ব’র পরিবর্তে ‘আগে কখনো শুনিনি’-এ জাতীয় শব্দগুলো ব্যবহার করলে ভাব দ্রুত প্রকাশ পাবে। তা ছাড়া পত্রের জটিল বাক্যগুলোকে ভেঙে ছোট ছোট সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হবে এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ বর্জন করে বাক্যকে বাহুল্যদোষ মুক্ত করতে হবে। এভাবে ‘রচনার শিল্পগুণ’ প্রবন্ধে উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর সাহায্যে ওই পত্রটিকে অনায়াসে সহজবোধ্য করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৭:০৩ ৫৬৪ বার পঠিত