বঙ্গ নিউজ ডটকমঃ বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মুক্তির দাবিতে সারা দেশে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকে চলছে পরিবহন ধর্মঘট।
ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ঢাকা ছাড়েনি। নগরীর ভেতরে গণপরিবহনের সংখ্যাও স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। ফলে অফিসগামী যাত্রী এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
শুক্রবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ থাকায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্বাসউদ্দিন বঙ্গ নিউজ ডটকমকে বলেন, “আজ সকাল ৬টা থেকে কাল শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে এই কর্মসূচি চলবে। ধর্মঘটে সব ধরনের পরিবহনই বন্ধ থাকবে। আমাদের একটাই দাবি, আমাদের সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক শিমুল বিশ্বাসকে মুক্তি দিতে হবে।”
সকালে গাবতলী টার্মিনাল ও কল্যাণপুরের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো পরিবহনই বাস বের করছে না।
ঈগল ও সোহাগ পরিবহানের কাউন্টারের ব্যবস্থাপকরা জানান, এই ধর্মঘটের মধ্যে তারা বাস বের করতে পারবেন না।
সকালেই মিরপুর মাজার রোডের সামনে লাঠি হাতে অবস্থান নেন পরিবহন শ্রমিকরা। তারা ওই পথ দিয়ে গাবতলীর দিকে কোনো গাড়ি যেতে দেননি।
ফেডারেশনের গাবতলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন বলেন, “যেসব বাস রাতে রওনা দিয়েছে, তাদের টার্মিনালে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। তবে ধর্মঘটের কারণে আর কোনো বাস বের হতে দেয়া হবে না।”
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মো. আলাউদ্দিনের উপস্থিতিতেই মাজার রোড থেকে গাবতলীমুখী অন্তত পাঁচটি বাসের জানালার কাচ ভাংচুর করে শ্রমিকরা।
এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা দ্রুত বাস থেকে নেমে পড়েন। কয়েকজনকে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়তে দেখা যায়।
সাভারগামী যাত্রী আবুল কাসেম বলেন, ” সকালে মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে সাভারে যাচ্ছিলাম। এখন শ্রমিকরা বাস যেতে দিচ্ছে না। ভীষণ বিপদে পড়েছি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ওয়াহিদুজ্জামান শোভন সাতক্ষীরা যাওয়ার জন্য জন্য সকালে গাবতলী এসে দেখেন কাউন্টার বন্ধ।
তিনি বলেন,” আমার গোল্ডেন লাইনের অগ্রিম টিকেট কাটা ছিল। কিন্তু কাউন্টার খোলেনি, বাসও ছাড়েনি। কীভাবে যাব বুঝতে পারছি না।”
সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা কম থাকায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে অফিসগামী যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের ভিড় দেখা যায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভোগান্তিও বাড়তে থাকে।
কলেজ গেইট এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায় অভিভাবক মারুফা সুলতানাকে। তার ছেলে নাহিদুজ্জামান রাতুল গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল থেকে প্রাথমিক সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষা দিচ্ছে। তার কেন্দ্র পড়েছে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার বিসিএসআইআর স্কুলে।
মারুফা বলেন, “কোনো বাস পাচ্ছি না। ছেলেটা পরীক্ষা দিতে পারবে কিনা তাই ভাবছি।”
আসাদগেইটের বাস কাইন্টারে সাভারের ইপিজেডগামী পপুলার টেকনোলজির প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার বঙ্গ নিউজ ডটকমকে বলেন, “অফিসের জরুরি একটা কাজে ইপিজেডে যেতে হবে। এক ঘণ্টা ধরে এখানে অপেক্ষায় আছি। গাড়ি পাচ্ছি না। খুব অসহায় লাগছে।”
মহাখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন,”সকাল থেকে মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার বাইরের কোন বাস ছাড়েনি।তবে ঢাকা মধ্যে কিছু পরিবহন চলাচল করছে বলে শুনেছি। ”
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে উত্তরাঞ্চলের ৩২টি রুটের কোনো যানবাহন চান্দনা চৌরাস্তা হয়ে চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়ে গাজীপুরবাসীও।
জেলার শ্রীপুরের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা থেকে মুরগীর খাবার কিনে গাড়ির অভাবে নিতে পারছিলাম না। পরে লেগুনায় ভরে নিতে হচ্ছে।”
গাজীপুর জেলা বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সামসুদ্দিন সরকার ও জেলা ট্রাক, পিক-আপ, ট্যাঙ্ক লরি ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোতালেব বলেন, ফেডারেশনের নির্দেশেই আমরা এ ধর্মঘট পালন করছি।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দেলনরত বিএনপি গত ৮ নভেম্বর তৃতীয় দফায় ৭২ ঘণ্টার হরতাল ঘোষণার পর শিমুল বিশ্বাসসহ দলের শীর্ষ পর্যায়ে পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত ৫ নভেম্বরের হরতালে কমলাপুরে হাতবোমা বিস্ফোরণ,পুলিশের ওপর হামলা এবং ২৪ সেপ্টেম্বরে মতিঝিলে আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের সামনে গাড়ি ভাংচুরের দুই মামলায় বিএনপির এই পাঁচ নেতাকে আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার এই বিএনপি নেতাদের জামিন আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২:০৪:৫৪ ৩৪২ বার পঠিত