বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আবারো দেশের হয়ে জ্বলে উঠলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। তার হ্যাটট্রিকে ভর করে ফিরতি লেগে সুইডেনকে তাদেরই মাঠে ৩-২ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে পর্তুগাল।জ্বলে উঠেছিলেন স্বাগতিকদের সবচেয়ে বড় তারকা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচও। তবে রোনালদোর আলোয় ম্লান হয়ে গেলেন এই স্ট্রাইকার। তাকে হটিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে যোগ্যতর হিসেবে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ পেলেন পর্তুগিজ তারকা।
দুই লেগ মিলে পর্তুগালের অগ্রগামিতা ৪-২ গোলের। প্রথম লেগে নিজেদের মাঠে ১-০ গোলে জিতেছিল পর্তুগাল। ঘরের মাঠের ঐ একমাত্র গোলটিও রোনালদোর। এক কথায় বলা যায়, রোনালদোর কাছেই হারতে হলো সুইডিশদের।
বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন টানা দ্বিতীয়বারের মতো অধরাই থাকরো ইউরোপের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের। ২০১০ সালের বিশ্বকাপেও বাছাইপর্ব উৎরাতে ব্যর্থ হয়েছিল সুইডেন।
মঙ্গলবার রাতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর অবিশ্বাস্য গতিতেই যেন পরাস্ত হলো সুইডেন। প্রথমার্ধ গোলশূন্যভাবে শেষ হলেও বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণেও বেশ এগিয়ে ছিল অতিথিরা। সামনে থেকে যথারীতি নেতৃত্বে ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের রোনালদো। তবুও প্রথম ৩০ মিনিটে প্রতিপক্ষের গোলমুখে কেন জানি খেই হারিয়ে ফেলছিলেন রোনালদো ও তার সতীর্থরা।
৩৩ মিনিটে দলকে এগিয়ে নেয়ার প্রথম সহজ সুযোগটি পান রোনালদো। কিন্তু তার হেডটি চলে যায় ক্রসবারের উপর দিয়ে। তিন মিনিট বাদে আরেকটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন রোনালদো। ছয় গজ দুর থেকে নেয়া তার আলতো শটটি ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়।
আর ৩৮ মিনিটে ডি বক্সের ডান প্রান্ত থেকে দেয়া রোনালদোর বুদ্ধিদীপ্ত ক্রসে স্ট্রাইকার হুগো আলমেইরা মাথা ছোয়ালেও নিশানা ঠিক রাখতে পারেননি।
প্রথম ৪৫ মিনিটে পর্তুগালের আধিপত্য থাকলেও গোল করার কিছু সুযোগ পায় স্বাগতিকরাও। কিন্তু ব্যর্থতা তাদেরও পিছু ছাড়েনি।
বিরতির পর শুরু হয় ম্যাচের নাটকীয় অধ্যায়। ৫০ মিনিটে পর্তুগালকে এগিয়ে দেন ২০০৮ সালের বর্ষসেরা ফুটবলার রোনালদো। মিডফিল্ডার জোয়াও মতিনিয়োর লম্বা পাস ধরে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে গিয়ে বাঁ পায়ের জোরালো কোণাকুনি শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
অবশ্য নাটকীয়তার তখনও ছিল বাকি। প্রথম লেগে নিষ্প্রভ সুইডেনের মুল ভরসা ইব্রাহিমোভিচ হঠাৎ করেই জ্বলে উঠলেন। চার মিনিটের ব্যবধানে জোড়া গোল করে ম্যাচে প্রাণ ফেরালেন। ফিকে হয়ে যাওয়া সুইডেনের বিশ্বকাপ স্বপ্নটাও আলোর মুখ দেখতে শুরু করলো।
৬৮ মিনিটে মিডফিল্ডার কিম ক্যালস্ট্রমের বাঁকানো কর্নর কিকে হেড করে দলকে সমতায় ফেরান ইব্রাহিমোভিচ। আর ৭২ মিনিটে ডি বক্সের ঠিক সামনে থেকে নেয়া তার প্রচন্ড গতির নিঁচু ফ্রি-কিক শটে ম্যাচে এগিয়ে যায় সুইডেন। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে পর্তুগালের কোচ পাওলো বেন্তোর।
তবুও তখন বিশ্বকাপে যেতে আরেকটি গোলের প্রয়োজন ছিল সুইডেনের। তার তা পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ করতে গিয়ে দু’টি গোল খেয়ে বসে তারা।
৭৭ ও ৭৯ মিনিটে রোনালদোর দুটি গোলেরই জন্ম দারুণ দুটি পাল্টা আক্রমণ থেকে। আলমেইরার লম্বা পাস ধরে সুইডেনকে সমতায় ফেরান তিনি। আর হ্যাটট্রিক পূরণের গোলটি আসে মতিনিয়োর পাস ধরে।
এই তিন গোল দিয়ে দেশকে শুধু বিশ্বকাপের চুড়ান্ত পর্বেই তোলেননি রোনালদো। ভাগ বসিয়েছেন দেশের হয়ের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডেও। সাবেক স্ট্রাইকার পেদ্রো পলেতা ও রোনালদোর গোল এখন সমান ৪৭টি।
ইনজুরি সময়ে চতুর্থ গোলটিও পেতে পারতেন ২৮ বছর বয়সী রোনালদো। তবে বিশ্বকাপ নিশ্চিত হওয়ার আনন্দেই কিনা, দূর থেকে নেয়া সতীর্থের লম্বা পাস থেকে বল লাফিয়ে উঠে নিখুঁত দক্ষতায় আয়ত্বে নিলেও শটটি নিলেন বড় অবহেলায়। গোলবার ঘেঁষে বল চলে গেল মাঠের বাইরে।
পিছিয়ে গিয়ে ম্যাচে ফিরতে আরো তিনটি গোল প্রয়োজন ছিল সুইডেনের। এই অসম্ভবকে আর সম্ভব করতে পারেনি সুইডেন। হতাশা নিয়েই তাই মাঠ ছাড়তে হয় ইব্রাহিমোভিচদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৯:৪০ ৩৪৬ বার পঠিত