বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ অদিতি দে। বয়স একবছর ১০ মাস। তার পেটে জন্ম নিয়েছে দু’টি যমজ সন্তান। বিস্মিত হচ্ছেন? বিস্মরকর খবরই বঠে! ২২ মাসের শিশুর পেটে আবার সন্তান হয় কিভাবে? কিন্তু বিষয়টি সত্যি। গত শুক্রবার চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অদিতির পেটে অপারেশনের মাধ্যমে যমজ সন্তান দুটি অপসারণ করা হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটিকে বলা হয় ‘ফিটাস ইন ফিটো‘ অর্থাৎ ভ্রুণের মধ্যে ভ্রুণ। অদিতি দে হাটহাজারী থানার কাটির হাট এলাকার বাসিন্দা নয়ন কুমার দে ও সুমী দে’র সন্তান। নয়ন কুমার কর্মসুত্রে থাকেন রাঙ্গামাটির কাউখালীতে। নয়ন কুমার দে বঙ্গনিউজকে জানান, অদিতির জন্মের পর থেকে অস্বাভাবিকভাবে তার পেট ফুলে উঠছিল। আত্মীয় স্বজনরা চিকিৎসার জন্য বার বার বলছিলেন। কিন্তু সামর্থ্যরে জন্য চিকিৎসা করাতে পারিনি। মাস দু’য়েক আগ থেকে পেটটা আরো বেশি ফুলে উঠে। গত ২৩ অক্টোবর কাউখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় তাকে। সেখানকার চিকিৎসক তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. তাহমিনা বানুর কাছে রেফার করে। কিন্তু তাহমিনা বানু দেশের বাইরে থাকায় আমরা ডা. মেজবাউল হকের কাছে নিয়ে যায়। তিনি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন। পরে তিনি ডা. নন্দন কুমারের কাছে রেফার করেন। তিনিও এক্সরে ও সিটি স্ক্যান করান। এরপর তিনি বিষয়টি আঁচ করতে পেরে আমাদের অভয় দেন এবং অপারেশন করার কথা জানান। চিকিৎসকের পরামর্শে শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতাল (প্রা.) লিমিটেডে ভর্তি করি। চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নন্দন কুমার মজুমদার বঙ্গনিউজকে বলেন, প্রথমে শিশুটিকে দেখে ভেবেছিলাম হয়তো পেটে টিউমার হয়েছে। বেশ কিছুদিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় এটি রেয়ার কেস। যেহেতু এরকম কেস আমার কাছে প্রথম। তাই একটু নার্ভাস ছিলাম। পরে আমার শিক্ষকদের পরামর্শে সফল সার্জারির মাধ্যমে শিশুটির পেট থেকে মৃত দুটি যমজ শিশুর ভ্রুণ অপসারণ করা হয়। ডা. নন্দন জানান, অদিতির বয়স ছিল ২২ মাস। ওজন ছিল ৯ কেজি। তার পেট থেকে যে দু’টি ভ্রুণ অপসারণ করা হয়। এগুলোর ওজন ছিল ১৩‘শ গ্রাম। এগুলোর মধ্যে একটি ভ্রুণের মাথা, একটি হাত ও ২টি পা রয়েছে। অন্য ভ্রুণটিতে মাথা, একটি হাত ও একটি পা সনাক্ত করা গেছে। তিনি বলেন, বাচ্চা দু’টির ভ্রুণ শিশুটির পেটের প্রধান রক্তনালীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাই অপারেশনে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। কারণ একটু এদিক সেদিক হলেই দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা ছিল। টানা পৌনে তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ভ্রুণ দুটি অপসারণ করা হয়। অপারেশনের পর অদিতি সুস্থ আছে। সে এখন আশঙ্কামুক্ত। আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। তবুও আমরা তাকে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অপারেশনে নন্দন মজুমদারের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক কানালাল সাহা, ডা. তানবীর কবির চৌধুরী, ডা. সুলতান মাহমুদ ও ডা. সত্যজিত ধর। অধ্যাপক ডা. কানালাল সাহা বঙ্গনিউজকে বলেন, এটা খুবই রেয়ার কেস। এর আগে শুনেছি। কিন্তু কখনও এধরণের সার্জারি করিনি। এটাই প্রথম অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, ‘অদিতি’র মায়ের পেটে তিনটি ভ্রুণের জন্ম নিয়েছিল। একটি ভ্রুণের মধ্যে অন্য দুটি প্রবেশ করে ভ্রুণ দু’টি বাড়তে থাকে। অদিতি’র জন্মের পর এগুলো বাড়তে থাকলে তার পেট ফুলে উঠতে থাকে। সময়মতো অপারেশনের কারণে তার জীবন রক্ষা পেয়েছে।’অদিতি’র বাবা নয়ন কুমার দে জানান, আমরা খুবই ভয়ে ছিলাম। এত বড় অপারেশনের খরচ যোগানো আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। কিন্তু চিকিৎসকের অনুরোধে অপারেশনের সকল খরচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করেছে। আমরা চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৮:৩৭ ৫৩৯ বার পঠিত