বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মানিলন্ডারিং মামলার রায় ঘোষণা করা হবে রোববার।
বৃহস্পতিবার মামুনের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. মোতাহার হোসেন রায় ঘোষণার এই তারিখ নির্ধারণ করেন। এ মামলায় তারেক রহমান পলাতক থাকায় তার পক্ষে কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়নি। পলাতক থাকায় চলতি বছরের ২৬ মে তৎকালীন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোজাম্মেল হোসেন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। গত ১১ নভেম্বর আংশিক যুক্তিতর্ক শেষে আদালতের উপস্থিত সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, মামুনের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের এ মামলা আনা হয়েছে শুধুমাত্র তারেক রহমানকে এ মামলায় সম্পৃক্ত করার জন্য। তিনি বলেন, আসামিদের সাক্ষ্য প্রমাণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বিচারকের ওপর ওহি নাজিল না হলে তারা মামলা থেকে খালাস পাবেন। এছাড়া দীর্ঘসময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জেরা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা মামুনের আইনজীবী খায়রুল ইসলার লিটন বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে। ন্যায় বিচার হলে তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুন খালাস পাবেন। তবে দুদকের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজলের দাবি, দুদক তারেক রহমান ও মামুনের বিরুদ্ধে আনীত মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। মামলাটিতে এর আগে ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। তারা হলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মামলার বাদি মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মামলাটির রেকর্ডিং অফিসার হোসনে আরা বেগম, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেসটিগেশনের (এফবিআই) এজেন্ট মিস ডেবরা লেপরোভেট, ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর আলীমুজ্জামান, গুলশান থানার ওসি কামাল উদ্দিন, নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির চেয়ারপারসন খাদিজা ইসলাম, সপ্তম সাক্ষী পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ করিম, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার সৈয়দ এহসানুল হাফিজ, সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. নজরুল ইসলাম, নির্বাহী অফিসার বিভুতি ভূষণ সরকার, ব্যাংকটির জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক ভুঞা, দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ তাহসিনুল হক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইব্রাহিম মামুনের পক্ষেও ৫ জন সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। তারা হলেন, ওয়ান গ্রুপের কর উপদেষ্টা আহমেদ আজম খাঁন, ওয়ান কম্পোজিট মিলসের পরিচালক নাসির উদ্দিন মিয়া, এনামুল হক, ওয়ান টেক্সের পরিচালক আবেদ হাসান মাহমুদ ও ওয়ান স্পিনিং মিলসের পরিচালক এ এইচ এম জাহাঙ্গীর। গত ৩১ অক্টোবর আদালতে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আহমেদ আজম খাঁনসহ ৫ জন সাফাই সাক্ষী প্রদান করেন। উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় এ মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৬ জুলাই তারেক রহমান ও গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট এ মামলার তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। ২০১১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্মাণ কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন আল মামুন ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা নেন। সিঙ্গাপুরে এই টাকা লেনদেন হয়। এরপর মামুন ওই অর্থ সিঙ্গাপুরের ক্যাপিটাল স্ট্রিটের সিটি ব্যাংক এনএতে তার নামের ব্যাংক হিসাবে জমা করেন। এই টাকার মধ্যে তারেক রহমান তিন কোটি ৭৮ লাখ টাকা খরচ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। ২০১১ সালের ৬ জুলাই দুদক আদালতে মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করে।
বাংলাদেশ সময়: ৯:৪৬:২১ ৩৬৪ বার পঠিত