বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ আসামির সংখ্যাধিক্যের কারণেই শুধু নয়, সাক্ষীর সংখ্যার দিক দিয়েও পিলখানায় বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) হত্যাকাণ্ড মামলা উপমহাদেশের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মামলা। ২০১০ সালের ১২ জুলাই ঢাকার সিএমএম আদালতে দাখিল করা মামলার চার্জশিটে সাক্ষীর সংখ্যা ছিলেন ১ হাজার ২৮৭ জন। পরবর্তীতে সম্পূরক চার্জশিটে আরও ৫৮ জনকে অর্ন্তভূক্ত করা হলে মোট সাক্ষীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৪৫ জনে। তাদের মধ্যে ২শ’ ৩২ কার্যদিবসে ৬৫৪ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলার সাক্ষী করা হয় ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্য, বিডিআর সদস্য, সাংবাদিক, সাধারণ নাগরিক, অস্ত্র ও মোবাইল ফোনসেট বিশেষজ্ঞ, পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্য, রেডক্রিসেন্ট সদস্য, র্যাব সদস্য, জব্দ তালিকার প্রস্তুতকারী দলের সদস্য, ম্যাজিস্ট্রেট, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও তৎকালীন তিন বাহিনীর প্রধানদেরকে। আসামিদের মামলা পরিচালনাকারী অন্যতম আইনজীবী শামীম সরদার বঙ্গনিউজকে জানান, সাক্ষীদের মধ্যে মন্ত্রী-এমপি ৬ জন, সেনা কর্মকর্তা ৬ জন, ডাক্তার ২৭ জন, ম্যাজিস্ট্রেট ৩২ জন, সাংবাদিক ১৮ জন, ভিকটিম পরিবারের সদস্য ৬৮ জনসহ র্যাব, পুলিশ সেনা সদস্য ও সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আইনপ্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সংসদের হুইপ মীর্জা আজম, সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ফজলে নুর তাপস আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। আরও সাক্ষ্য দিয়েছেন তৎকালীন আইজিপি নূর মোহাম্মদ, র্যাব প্রধান হাসান মাহমুদ খন্দকার, এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নুল আবেদীন, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মো. জিয়াউর রহামন ও নৌ-বাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল জহির উদ্দিন। সেনাবাহিনী প্রধান মঈন উ আহমেদ মামলায় সাক্ষী থাকলেও তিনি আমেরিকা থাকায় আদালতে সাক্ষ্য দিতে আসেননি। সাংবাদিকদের মধ্যে পারভেজ খান, কনক সারোয়ার, মুন্নী সাহা, প্রণব সাহা, এসএম বাবু, কামরান করিম, আসাদুজ্জামান, আব্দুল করিম, ইমরান খান, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ মিয়া, রিপন শেখ, মহিদুল ইসলাম, গৌতম কুমার সিনহা, মাজহারুল ইসলাম খান, শেখ রাশেদুজ্জামান, শুভাশীষ বড়ৃয়া ও হুমায়ুন কবিরকে মামলার সাক্ষী করা হয়।
সাংবাদিকদের মধ্যে কনক সারোয়ার, মুন্নী সাহা, প্রণব সাহা, এসএম বাবু, গৌতম কুমার সিনহা, শুভাশীষ বড়ৃয়া বড়ৃয়াসহ ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ১৫ সাংবাদিক আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। এছাড়াও ঘটনার শিকার পরিবারের সদস্য, বিডিআর সদস্য, সাধারণ নাগরিক, অস্ত্র ও মোবাইল ফোনসেট বিশেষজ্ঞ, পুলিশ সদস্য, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
শুরুতে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হকে আদালতে বিচারাধীন থাকলেও যুক্তিতর্কের পর্যায়ে মামলাটি ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিডিআর জওয়ানরা ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। এই ঘটনায় প্রথমে লালবাগ থানায় এবং পরে নিউমার্কেট থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ২ হাজার ৩০৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রিমান্ডে নেওয়া হয় ২ হাজার ২ শ’ ৮২ জনকে। রিমান্ড শেষে ৫৫৯ জন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সব মিলিয়ে পিলখানা হত্যা মামলায় আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৮৫০ জনে। তাদের মধ্যে পোশাকধারী বিডিআর সদস্য ৭৮২ জন। বিডিআরে কর্মরত বেসামরিক সদস্য ২৩ জন। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু। আসামিদের মধ্যে ২০ জন পলাতক আছেন। বিচার চলাকালে মারা যান ৪ জন। বিডিআর নন এমন ১৩ জন আসামি জামিনে আছেন। কারাগারে আটক আছেন ৮১৩ জন। কারাগারে আটক ও জামিনপ্রাপ্ত ৮২৬ আসামির উপস্থিতিতে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০:০৫:০৬ ৪২৭ বার পঠিত