বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টা সহিংস হরতালে দেশের বিভিন্ন জেলায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এ হরতাল। প্রথম দু’দিনে নাশকতার পরিমাণ বেশি থাকলেও শেষে দিন তা অনেকটা কম হয়েছে। হরতালের প্রথম দু’দিন সারাদেশে ৬ জন করে এবং শেষ দিন ৪ জনসহ মোট ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে সংঘর্ষ, ধাওয়াপাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি পোড়ানো, রেল লাইনে আগুন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালায় হরতাল সমর্থকরা।
তবে হরতাল শেষ হলেও নাশকতার আশঙ্কায় সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
হরতালের প্রথম দিন (২৭ অক্টোবর)
রোববার বিএনপিরসহ ১৮দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের প্রথম দিনে ৫ জেলায় সহিংসতায় ৬ জন নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে শতাধিক।
এর মধ্যে যশোরের অভয়নগরে বিএনপি-জামায়াতের মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে যুবলীগ নেতা, ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা, পাবনার ঈশ্বরদীতে আ’লীগ ও জামায়াতের মধ্যে গুলি বিনিময়ের ঘটনায় এক জামায়াতকর্মী, পিরোজপুরের জিয়ানগরে হরতালকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে স্বপন শীল নামের যুবলীগকর্মী, বগুড়ায় বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষে একজন এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সিদ্দিক নামে একজন নিহত হয়েছে।
হরতালের ২য় দিন (২৮ অক্টোবর)
টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনেও দেশজুড়ে সহিংসতা অব্যাহত থাকে। রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় মারা গেছেন ৬ জন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও শতাধিক। গ্রেফতার করা হয়েছে আরও শতাধিক লোককে। মামলা করা হয়েছে ১৮ দলীয় জোটের হাজারখানেক নেতাকর্মীর নামে।
এর মধ্যে ঝিনাইদহের হরিনাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দৌলতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল হোসেনকে (৫৬) গুলি করে ও বোমা মেরে হত্যা, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল আলীম (৪০), জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় শাহজাদা (২৮) নামের আওয়ামী লীগকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে যুবদলকর্মী মোহাম্মদ হাসেন আলী(৩২), চাঁদপুরে হরতাল চলাকালীন সময়ে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সংঘর্ষে পল্টু (১৩) নামের এক কিশোর এবং পিকেটারদের হামলায় রোববার গভীর রাতে সাতকানিয়ার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিহত হয়েছেন ওয়াসিম (৩০) নামের এক ট্রাক চালক।
হরতালের শেষদিন (২৯ অক্টোবর)
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের টানা ৬০ ঘণ্টা হরতালের শেষদিন মঙ্গলবার প্রথম দু’দিনের তুলনায় নাশকতা কিছুটা কম হলেও নিহত হয়েছেন ৩ জন।তবে জামায়াতের দাবি শেষদিনে তাদের আরও ৩ কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে।
এর মধ্যে মাগুরার মহম্মদপুরে উপজেলার ধোয়াইল বাজার এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারুফ (১৮) নামে এক বিএনপি কর্মী ও চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় আ’লীগ-বিএনপির মধ্যে ধাওয়াপাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় আরাকান সড়কের ফুলতলা এলাকার খালে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া একেবারে হরতাল শেষ হওয়ার কিছু পরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা জামায়াত। তবে পুলিশ প্রশাসন ২ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসময় পুলিশের গাড়িসহ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর ছাড়াও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। এতে ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৭ জামায়াত-শিবিরকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা কুতুবদিয়া উপজেলার ধুরুংবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- জামায়াত কর্মী আবু আহম্মেদ (৫৫), শিবিরকর্মী আজিজুর রহমান(২০), তাজুল ইসলাম (২৭), পারভেজ (২৪) এবং অজ্ঞাতপরিচয় একজন।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হামিদুর রহমান আজাদ ও জেলা জামায়াতের আমির শাহজাহান বাংলানিউজকে ৫ কর্মী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দেশজুড়ে তিনদিনের সহিংসতায় ১৬ জন নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হয়েছে সহস্রাধিক। আটকও করা হয়েছে হাজারের বেশি লোককে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন জেলায় কয়েকশ’ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে আসামিও হাজার হাজার।
উল্লেখ্য, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল রোববার ভোর ৬টা থেকে শুরু হয়। সারাদেশে টানা এ হরতাল চলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।
সংলাপের প্রক্রিয়া শুরুর আলটিমেটাম দিয়ে গত শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণসমাবেশ থেকে জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ হরতালের ডাক দেন।
আলটিমেটাম সময়ের মধ্যে শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরতাল প্রত্যাহারসহ সংলাপের আহ্বান জানিয়ে গণভবনে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানানোর পরও হরতাল বহাল রাখা হয়।
তবে জনগণের জরুরি প্রয়োজনে কয়েকটি জরুরি সার্ভিস হরতালের আওতামুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সংবাদমাধ্যম সংশ্লিষ্ট যানবাহন, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসা সেবা, লাশবাহী যানবাহন, ফায়ার সার্ভিস, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির জরুরি সার্ভিসসমূহ ইত্যাদি। এছাড়া ইংলিশ মিডিয়ামের স্কুলের পরীক্ষা হরতালের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। আওতামুক্ত রাখা হয় ইংরেজি মাধ্যমের পরীক্ষাকেও।
বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৫:০৭ ৩৫৯ বার পঠিত