অপু রহমান,বঙ্গ-নিউজ ডটকম:চলে গেলেন গানের রাজা, পড়ে রইল মুকুট। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর রাত তিনটা ৫০ মিনিটে পরপারে চলে গেলেন প্রবাদপ্রতিম সংগীতশিল্পী মান্না দে। ১৬০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর একটি বেসরকারি হাসপাতালে হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে মান্না দে দুই কন্যা সুমিতা দেব, সুরমা দেসহ অসংখ্য ভক্ত রেখে গেছেন। তাঁর সহধর্মিণী সুলোচনা কুমারণ প্রয়াত হন ২০১২ সালে। এই শিল্পীর মৃত্যুতে বলিউড, টালিউড থেকে ভারতের সর্বত্র গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মান্না দের প্রতি পশ্চিমবঙ্গবাসীর শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর মরদেহ কলকাতায় আনার চেষ্টা করলেও তাতে সাড়া দেয়নি শিল্পীর পরিবার।
মান্না দে’কে নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতিসেবীদের তাৎক্ষণিক মন্তব্য ছাপা হলো এখানে
ভারতীয়শিল্পী
লতা মঙ্গেশকর: বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল ভারতের সংগীতজগতের। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে না।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী: মান্না দে মানুষের হূদয়জুড়ে আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তিনি ছিলেন ভারতের রত্ন।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়: বাংলা গানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বরেণ্য শিল্পী মান্না দে।
অমিতাভ বচ্চন: সংগীতজগতের নক্ষত্রের পতন।
উষা উত্থুপ: কফি হাউসের আর আড্ডাটা রইল না।
বনশ্রী সেনগুপ্ত: গানে গানে বেঁচে থাকবেন তিনি।
অনুপ ঘোষাল: মান্না দে ছিলেন একজন পরিপূর্ণ শিল্পী।
আরতি মুখোপাধ্যায়: গানপাগল এই মানুষ ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান।
হৈমন্তী শুক্লা: আমার বাবার আসনে বসিয়েছিলাম তাঁকে।
ইন্দ্রনীল: সংগীতজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।
শ্রীকান্ত আচার্য: বিরাট মাপের শিল্পী ছিলেন তিনি।
অরুন্ধতী হোম চৌধুরী: গোটা দেশ আজ হারাল এক মহান শিল্পীকে।
অপর্ণা সেন: পরবর্তী প্রজম্মের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।
রঞ্জিত মল্লিক: বড় মাপের এক মহান শিল্পীকে হারালাম আমরা।
শাবানা আজমি: সংগীতজগতের এই ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। গানে গানে বেঁচে থাকবেন তিনি যুগ যুগ ধরে।
অভিজিৎ: তিনি ছিলেন এক অমর শিল্পী। আমাদের সংগীতজগতের ঈশ্বর।
বাবুল সুপ্রিয়: আমরা তাঁকে গানের মাধ্যমে চিরকাল পাব।
শ্রেয়া ঘোষাল: আমার সংগীতজীবনের অনুপ্রেরণা ছিলেন তিনি।
সংগ্রহ: অমর সাহা বাংলাদেশি শিল্পী
আব্দুল হাদী: মান্না দের গানের সঙ্গে পরিচয়টা সেই ছোটবেলা থেকেই। তাঁর মৃত্যু বাংলা গানের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁর তুলনা শুধু তিনি নিজে। উচ্চাঙ্গসংগীতের মেজাজ, বাংলা গানের পরিচ্ছন্নতা ও গীতিময়তার মধ্যে তিনি যে সমন্বয় করেছেন, তা সত্যিই অসাধারণ!
রুনা লায়লা: মান্না দের সঙ্গে আমার দুবার দেখা হয়েছিল। একবার সত্তরের দশকে ভারতে, অন্যবার নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাজ্যে। সে সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয়েছে। গান নিয়ে অনেক আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সরাসরি গান শোনার সৌভাগ্যও হয়েছিল। আর তখনই বুঝতে পেরেছি, সংগীতশিল্পী মান্না দে যতটা না বড়, তার চেয়ে বড় মনের একজন মানুষ ছিলেন তিনি।
সাবিনা ইয়াসমীন: মান্না দের সঙ্গে আমার সব মিলিয়ে চারবারের মতো দেখা হয়েছে। প্রথমবার দেখা হয়েছিল আশি দশকের শেষ ভাগে। কলকাতায় একটি অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে গান গাওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছিল। সেখানে তিনি আমাকে শাস্ত্রীয় সংগীতের ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তাঁর সংগীত-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কিছু বলার মতো ক্ষমতা আমার নেই। ভারতীয় সংগীতজগতের তিনি কিংবদন্তি।
রফিকুল আলম: বাংলা গানের শত্রু তৈরি হয় আশির দশকের শুরুতে। সংকটেরও শুরু সে সময়ে। আধুনিক বাংলা গানকে সংকট এবং শত্রুদের থেকে একক প্রচেষ্টায় মুক্ত করেছেন যিনি, তিনি মান্না দে। মান্না দে আধুনিক বাংলা গানকে নিয়ে গেছেন অন্য রকম উচ্চতায়। তিনি মারা গেলেও অমর হয়ে থাকবেন।
কুমার বিশ্বজিৎ: আমার সংগীতজীবনে দুজন আদর্শ—একজন মান্না দে অন্যজন কিশোর কুমার। মান্না দের গানে অনুপ্রাণিত হয়ে একসময় তাঁরই আদলে কিছু গান করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলাম। তিনি গানগুলোর বেশ প্রশংসা করেছিলেন। গান দিয়ে কতজনকে প্রশান্তি দিয়েছেন তিনি; তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।
তপন চৌধুরী: মান্না দের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয় ঢাকায়। আশির দশকের সেই সফরে তিনি চার দিন ঢাকায় ছিলেন। চার দিনই তাঁর সঙ্গে মানুষ মান্না দেকে কাছ থেকে জানার সৌভাগ্য হয় তখন। আমাকে তিনি তুই বলে সম্বোধন করতেন। তাঁর মতো সংগীতের মহিরুহের আদর-স্নেহ-ভালোবাসা পাওয়াটা সত্যিই অনেক বড় সৌভাগ্যের। বাংলা গানে তিনি অদ্বিতীয়। তাঁকে নিয়ে বলার মতো দুঃসাহস নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১:১১:১৭ ১১৪০ বার পঠিত