বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরীক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবক এবং শিক্ষকরা। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি, জেডিসি এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও প্রস্তুতি নিয়ে বেশি চিন্তিত তারা। একই সঙ্গে হরতাল-অবরোধের মতো কোনো কর্মসূচি থাকলে বিগত এইচএসসি পরীক্ষার মতো এসব পরীক্ষায়ও শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে বলে ধারণা করছে অনেকে। যদি বারবার পরীক্ষার তারিখ পেছানো হয় তাতে পরীক্ষার্থীরা মানসিক দুর্বল হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, আগামী ৪ নভেম্বর থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা, ২০ নভেম্বর থেকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ পাবলিক পরীক্ষা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ২১ নভেম্বর থেকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা এবং ৭-১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এছাড়া গত ২১ অক্টোবর থেকে সারাদেশে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়েছে। নভেম্বরের প্রথম থেকেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে। শিক্ষক এবং অভিভাবকেরা মনে করছেন, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করতে পারে। এতে এসব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগ মুহূর্তের ক্লাস ও প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এবারের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার্থী হানজালা মোস্তাকিমের বাবা আমির হোসেন বঙ্গনিউজকে বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে আমরা অনেক কিছু আশা করি। কিন্তু তাদের পরীক্ষার প্রস্তুতি যদি বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে তা তাদের পড়াশোনা ও মানসিকতা উভয়েরই ক্ষতির কারণ হবে। এছাড়া হরতাল বা অন্য কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাদের স্কুলে বা পরীক্ষা দিতে নিয়ে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যায়। তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কোনো সমাধান দেখতে পারছি না। তাই আমাদের দাবি রাজনৈতিক দলগুলো যেন পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করে। আরেক অভিভাবক রাজু আহমেদ বলেন, দেশে বর্তমানে যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা যাচ্ছে তা সমাধানের সম্ভাবনা কম। এছাড়া নভেম্বর মাস থেকেই পুরোদমে হরতাল-অবরোধের আশঙ্কা রয়েছে। তাই অলৌকিক কিছু না হলে এবারও পরীক্ষার শিডিউল বিপর্যয় হতে পারে। তিনি বলেন, এবার প্রায় ৩০ লাখ পরীক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সঙ্গে ৩০ লাখ পরিবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। জেএসসি পরীক্ষার্থী ইবনে সিনা তানভিরের বাবা এবিএম নুরুদ্দিন বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া যদি পরীক্ষার শিডিউল বিপর্যয় ঘটে তাহলে পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার ঝোঁক কমে যায়। তাই আমরা চাই রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত আলোচনায় বসে সমঝোতা করুক।
এ বিষয়ে রাজধানীর উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালমা বেগম বলেন, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আমরা ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন। পরীক্ষা কীভাবে হবে তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন শিশুদের মানসিক অবস্থা নিয়ে।
তিনি বলেন, বর্তমানে সমাপনী পরীক্ষার্থী এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের শেষ সময়ের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু হরতাল বা অন্য কোনো সংঘাতময় রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে পরীক্ষার্থীদের এ প্রস্তুতিও বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি জানান, পরীক্ষার রুটিন করার সময় বিকল্প ভেবে রেখেই তা করা হচ্ছে যাতে কোনো কারণে পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে গেলে তা পরবর্তী সময়ে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে ছুটির দিনগুলোতেও পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম বঙ্গনিউজকে বলেন, কোনো কারণে পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হলে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয় পুরো জাতি চাপে পড়ে যায়। আমরা অভিভাবকদের এ ধরণের চাপে রাখতে চাই না। আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করবো যাতে বাচ্চারা চাপে না থাকে।
এজন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
আগাম কোনো পদক্ষেপ না নিলেও পরীক্ষার সময় উদ্ভূত পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম।
বাংলাদেশ সময়: ১১:২৬:৪৭ ৯৭৫ বার পঠিত