যখন আমরা বড়…

Home Page » ফিচার » যখন আমরা বড়…
বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৩



5266c33118bad-untitled-2.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকম:ছোট ছোট দুষ্টুমি, মারামারি আবার আহলাদে জড়িয়ে থাকা। ভাই-বোনের সম্পর্কটাই তো এমন। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আবেশ কখনো কখনো হারিয়ে যায়। কালেভদ্রে দেখা হয় তাদের। অতঃপর…
ছোটবেলায় কেউ লজেন্স দিলে নিজে না খেয়ে পকেটে পুরে নিয়ে আসত সুমন (ছদ্মনাম), ছোট্ট বোনটাকে দেবে বলে। আর দুষ্টুমির জন্য মা সুমনকে মারলে, ভেউ ভেউ করে কাঁদত বোনটা, যেন নিজেই মার খাচ্ছে। বড়বেলায় এসে সেই আদরের ছোট্ট বোন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর গ্রামের বাড়ির জমিজমা সব সুমন ভাই বিক্রি করে দিলেন। জানতে পেরে আমি ও মা প্রতিবাদ করেছিলাম।’ সেই থেকে ভাই-বোনের সম্পর্কে চিড় ধরেছে।
চিড় ধরা সেই সম্পর্ক একটা সময়ে শীতল হয়ে যায়। মা বড় ভাই সুমনের সঙ্গে থাকেন। ফলে ও বাড়িতে গেলেও ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে যান।
জিনাত ও রিফাত (ছদ্মনাম)। পিঠাপিঠি দুই বোন। খুব বন্ধুত্ব ছিল এই দুই বোনের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবনে কত পরিবর্তন এসেছে। জিনাত এখন সরকারি চাকরি করেন। কাজের ফাঁকে ছেলেমেয়ে, সংসারকে সময় দিতে হয়। রিফাত একজন চিকিৎসক, ফুরসত নেই তাঁরও, দিনমান মানুষের সেবা। যত দিন মা-বাবা বেঁচে ছিলেন, বাবার বাড়িতে পরিকল্পনা করে জমায়েত হতেন, আড্ডা হতো—আনন্দে কেটে যেত সময়। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর কোথায় যেন একটা বাঁধন ছিঁড়ে গেছে। কখনো কোনো কাজে গুলশানের দিকে গেলে জিনাত হঠাৎ হয়তো ভাবেন, আরে এই তো কাছেই রিফাতের বাসা, কত দিন যাওয়া হয়নি। আবার কখনো গাউছিয়া মার্কেটে এলে রিফাতের মনে পড়ে যায় বোনের সঙ্গেই তো চিরকাল দর্জিবাড়ি এসেছেন, একটু ডাক দিয়ে দুই বোন কি কেনাকাটা করতে পারতেন না সাধ মিটিয়ে? কিন্তু ভাবাই হয় কেবল, হয়ে ওঠে না।

তুমি আমি আমরা সবাই এক মায়ের পেটের ভাই-বোন। একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে এক থালায় খেয়ে, কখনো ঝগড়া-মারামারি করে, আবার ভাব করে হেসেখেলে বড় হয়। পরিবারে মা-বাবার পরই ভাই বা বোনটি হয় পরম নির্ভরতার জায়গা, কখনো সবচেয়ে কাছের বন্ধুও।Untitled-1
এই ভাই-বোনই বড় হওয়ার পর অনেক দূরে সরে যায়। কখনো কাজের চাপে, কখনো ব্যস্ত জীবনের তাগিদে, কখনো পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতায়, কখনো বা স্রেফ বৈষয়িক কারণে ফাঁক তৈরি হয় সম্পর্কে। হয়তো মাস, দুই মাস পেরিয়ে যায়, দেখা হয় না কারও কিংবা টেলিফোন তুলেও বলা হয় না, কিরে কেমন আছিস? এমন কেন হয়? রিফাত বলেন, ‘দেখা হয় না, কথা হয় না বটে, কিন্তু বোনকে সব সময় মিস করি। কিন্তু আমাদের জীবনযাপনে এত চাপ এখন, আমরা ক্রমেই আপনজনদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।’
বড় ভাই হূদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন, টেলিফোনে ভাবির কান্নাজড়ানো স্বর শুনে মনে এক ধরের অপরাধবোধ হয় জহির আলমের। মনে করার চেষ্টা করেন শেষ কবে বড় ভাইয়ের খোঁজ নিয়েছিলেন, কিন্তু মনে পড়ে না। ভাতিজাগুলো বিদেশ চলে যাওয়ার পর মিরপুরের বাসায় একাই থাকতেন ভাই-ভাবি। এত দিনে সময় হয়নি তাঁদের একবার দেখতে যাওয়ার। অথচ এই ভাই টিউশনি করে তাঁর কত শখ পূরণ করতেন। জহির আলম বলেন, ‘হূদয়ের গহিনে ভালোবাসাটা হয়তো থাকে, কিন্তু জীবন ও বাস্তবতা আমাদের বড়বেলায় এসে স্বার্থপর আর আত্মকেন্দ্রিক হতে শেখায়।’
নিয়ম করে খোঁজ নেওয়া
আর দশটা কাজ যেমন আমরা নিয়ম মেনে করি, তেমনি এটাও নিয়ম করে ও মনে করেই করতে হবে। মাসে এক দিন অন্তত সব ভাই-বোন মিলে কারও বাসায় বসা বা বাইরে খাওয়া। একটু অবসরে একটা ফোন কল বা একটা এসএমএস সম্পর্কটাকে ধরে রাখবে।

ফেসবুক ও স্কাইপের যুগে বিদেশে থাকা ভাইবোনের মাঝে নিত্য যোগাযোগ রাখাটা কোনো ব্যাপারই না।পরস্পরের পরিবারের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী ও বিশেষ দিনগুলোতে একটু শুভেচ্ছা ও উপহার, ঈদ-নববর্ষ ইত্যাদি বিশেষ উৎসবগুলো একসঙ্গে উদ্যাপন—এসবই পারিবারিক সম্পর্কগুলোকে পুষ্টি দেয়। রক্তের সম্পর্ক কখনো মোছা যায় না, মুখে বলা হলেও আর সব সম্পর্কের মতো এরও চর্চা দরকার।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক ওয়াজিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘যৌথ পরিবার এখন আর নেই, তাই ভাইবোন মিলে একসঙ্গে বড় একটা পরিবার এখন খুব একটা দেখা যায় না। ফলে তৈরি হচ্ছে দূরত্ব, শূন্যতা; মানুষের একাকিত্ব বাড়ছে, বাড়ছে বিষণ্নতাসহ নানা সমস্যা। পরিবারে ছোটরা আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেওয়া, আপস করা বা ছাড় দেওয়ার বিষয়গুলো শিখতে পারছে না। আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বড় হচ্ছে। পুরোনো যৌথ পরিবারের আমেজ ফিরিয়ে আনতে না পারলেও আমরা অন্তত পারিবারিক ও আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোর চর্চা করতে পারি।’

যেকোনো উৎসব ছাড়াও মাসে এক দিন হলেও সব ভাইবোন, তাঁদের সন্তান মিলে খাওয়াদাওয়া করা, নিজের ভালোমন্দ ভাইবোনদের সঙ্গে শেয়ার করা, তাঁদের বিপদ ও খুশিতে এগিয়ে যাওয়া—এসবই সম্পর্কগুলোর গোড়ায় জল দেবে। ইদানীং আমরা ঈদের মতো সামাজিক উৎসব কাটাতেও নিজের পরিবার নিয়ে দূরে কোনো রিসোর্টে বা বিদেশে চলে যাই।সাফল্য উদ্যাপন করতে শুধু নিজেরা মিলে রেস্তরাঁয় খেয়ে আসি।সামাজিক ও পারিবারিক উৎসবগুলো সবাইকে নিয়েই পালন করা উচিত। এভাবেই পরবর্তী প্রজন্ম পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে শিখবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৮:৩০   ৩৮৮ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

ফিচার’র আরও খবর


অ্যানেন্সেফ্লাই কী? - রুমা আক্তার
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নারী ক্ষমতায়নের অগ্রদূত : স্পিকার ; ১০০০ নারী উদ্যোক্তা’র মধ্যে ৫ কোটি টাকার অনুদান প্রদান
“ম্রো’ আদিবাসীর গো হত্যা’ অনুষ্ঠাণ ” - তানিয়া শারমিন
আলোকিত স্বপ্ন নিয়ে তৃতীয় বর্ষে রবিকর ফাউন্ডেশন
নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন রক্ষায় প্রয়োজন জেন্ডার সংবেদনশীল নীতির পর্যালোচনা
জিনগত ত্রুটির অপর নাম “ডাউন সিনড্রোম”- রুমা আক্তার
মোহাম্মদ শাহ আলমের জীবন ও কর্ম
ইসফাহান নেসফে জাহান
সিলেটে গ্রুপ ফেডারেশনের কর্মশালায় বির্তকিত মুরাদ- আয়োজকদের দুঃখ প্রকাশ
ডলারের দাম যেভাবে বাড়ছে, টাকার দাম কেন কমছে

আর্কাইভ