বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলছেন, তার দল ‘কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য’ নির্বাচনে যাবে না।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরদিন বনানীতে নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই প্রতিক্রিয়া জানান সরকারের প্রধান এই শরিক নেতা।
তিনি বলেন, “সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সে নির্বাচনে আমরাও যাব না।”
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে রোববার গণভবনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
১৫ জন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে এরশাদ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোয়া এক ঘণ্টা বৈঠকের পর এক সঙ্গে নৈশভোজে অংশ নেন।
বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বলেন, “আমরা মহাজোটে থেকেই নির্বাচন করব। তবে, পরিস্থিতি বলে দেবে একা নির্বাচন করব কি না।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, “মহাজোট অটুট আছে। আমরা মহাজোট হিসাবেই নির্বাচনে অংশ নেব।
“অন্য কোনো দল অংশ না নিলে তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি- একসাথে, না আলাদা নির্বাচন করব।”
সোমবার সকালে বনানীর সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে একের পর এক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় এরশাদকে।
সব দলকে ছাড়া জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে না- এরশাদের এমন বক্তব্যে সাংবাদিকরা আগের রাতে রুহুল আমীন হাওলাদার ও সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বার বার পার্টির অবস্থান সম্পর্কে আরো স্পষ্ট বক্তব্য চান।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না গেলে জাতীয় পার্টি যাবে কি না।
বার বার একই প্রশ্নে দৃশ্যত বিরক্ত এরশাদ বলেন, “বিএনপি একটি দল, তারা যদি না আসে তাহলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আমরা তেমন নির্বাচনে যাব না।”
এমনিতে জোটগতভাবে নির্বাচন করার পরিকল্পনা হলেও বিএনপি না এলে আলাদাভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি রাখা নিয়ে সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এরশাদ বলেন,
“আমি বার বার বলছি- এ কথা সত্য নয়। আমরা কাউকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য নির্বাচনে যাব না। জাতীয় পার্টি স্বাধীন স্বত্ত্বা নিয়েই থাকতে চায়।”
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি বলেও দাবি করেন গত কিছুদিন ধরে মহাজোট ছাড়ার কথা বলে আসা এরশাদ।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, গতকাল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে নৈশভোজে অংশগ্রগণ করি। তার আগে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
“আমরা বলেছি, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। যেমন, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন, মন্ত্রিসভায় কতোজন সদস্য থাকবেন, কবে এই সরকার গঠন হবে, সংসদ ভেঙে দেয়া হবে কি না ইত্যাদি।”
এসব প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কি উত্তর পেয়েছেন সে বিষয়ে কিছু না বললেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “সৈয়দ আশরাফ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়েছি। উনি অসত্য বলেছেন। আমি আশা করি উনি ওই বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন।”
এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত জাতীয় পার্টিই নেবে।
“আমরা কোনো জোটে থেকে নির্বাচন করব না- একথা আমি আগেও বলেছি। অতীতে জোটে থেকে নির্বাচন করেছি, কিছু পাইনি।”
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের সৃষ্টি হযেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে মানুষ মনে করে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এরশাদ অনুরোধ করেন, তার এই বক্তব্য যাতে ঠিকমতো প্রচার করা হয়, ‘যাতে মানুষের মনে বিভ্রান্তি’ দূর করা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ২১:১১:০৮ ৩৯৮ বার পঠিত