বঙ্গ-নিউজ ডটকম:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে আবারও ঘোষণা দিয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেছেন, তাঁর সঙ্গে কেউ না থাকলেও তিনি এ দাবি থেকে সরবেন না।নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের দুই দিনের মাথায় খালেদা জিয়া আজ রোববার এ ঘোষণা দিলেন। বিএনপি-সমর্থক পেশাজীবীদের সংগঠন সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের জাতীয় কনভেনশনে তিনি এ ঘোষণা দেন।
পেশাজীবী নেতাদের অনেকে খালেদা জিয়াকে তাঁর অবস্থান থেকে সরে না আসার আহ্বান জানান। বক্তব্যের শুরুতেই তাঁদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘পরিষ্কার বলতে চাই, আপনারা কেউ আমার সাথে না থাকলেও আমি একলা হলেও সরব না।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার নৌকা ফুটো হয়ে গেছে। সেই নৌকায় আর কোনো মাঝি উঠবে না।’নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই কনভেনশনের আয়োজন করা হয়। প্রথমে পুলিশ কনভেনশন করার অনুমতি বাতিল করলেও শেষ পর্যন্ত ১৪টি শর্তে অনুমতি দেয়। বেলা সাড়ে তিনটায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার অধীনে কয়েকটি নির্বাচন দেখেছি। আপনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আপনার অধীনে কোনো নির্বাচনে আমরা অংশ নেব না। আপনার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা মানে নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করা।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘২০০৭ সালে কে এম হাসানকে মানতে পারেননি। আজ আপনার অধীনে কেন নির্বাচন হবে। আপনার অধীনে নির্বাচন হতে পারে না।’ তিনি সরকারকে সংবিধান সংশোধন করার আহ্বান জানান। সময় যত যাবে, আওয়ামী লীগ তত ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সরকার পুলিশ, র্যাব, বিজিবি দিয়ে নির্বাচন করতে চাইছে অভিযোগ করে বিএনপি নেত্রী বলেন, ‘সেটা ভুল। হতে দেওয়া হবে না। এ দেশে নির্বাচন হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে।’
আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। আপনাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি পরিষ্কার। আপনাদের কার্যকলাপই তা বলে দেয়। এখনই আপনারা সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন।’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, সরকার বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ রাখেনি। কাউকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যখন দেখবেন সরকারের শ্বাস নেওয়ার অবস্থা নেই, তখন বিচারকদের চেহারা পরিবর্তনও হতে পারে।’
খালেদা জিয়া ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমানের মুক্তি দাবি করেন।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইনকে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া।তিনি দাবি করেন, শিবির সভাপতি তাঁর সংগঠনের কাজ করায় তাঁকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কথা এখন মানুষ আর বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হঠান, দেশ বাঁচান।’
আজ সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে ডিএমপি। তবে ১৪টি শর্তে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদকে জাতীয় কনভেনশন করার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর বিকেল সোয়া চারটার সময় হল অব ফেমে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া।
সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মিলনায়তন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, কলাম লেখক ফরহাদ মজহার, সাংবাদিক নেতা ও অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাদা দলের আহ্বায়ক সদরুল আমিন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন, চলচ্চিত্রনির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এ কে এম নাজির আহমদ, ড্যাবের সভাপতি আজিজুল হক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পিয়াস করিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১:২২:৪২ ৪৫৭ বার পঠিত