বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে । আবার বিক্রেতারাও শুধু সঙ্কটকেই দায়ী করছেন। এক্ষেত্রে টিসিবি‘র সামান্য উদ্যোগও ‘নির্বিকার থাকার মতোই’ বলে মন্তব্য করছেন আড়তদার ও খুচরা ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, বাংলাদেশে পেঁয়াজের বড় যোগানদাতা ভারতেও পেঁয়াজের ফলন ভাল হয় নি। তাই সেখানেই উৎপাদন সঙ্কট। আবার বাংলাদেশে কোরবানি ঈদে গুরুত্বপূর্ণ মসলা হিসেবে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যায়। ভারতেও তার ব্যতিক্রম নয়। উপরন্তু ভারতের সংখ্যাগুরু হিন্দুরা পূজার সময় নিরামিষ হিসেবে পেঁয়াজ খাওয়া বাড়িয়ে দেয়। তাই ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দর বেশি। এর প্রভাব মিয়ানমার,পাকিস্তান ও সর্বশেষ চীনের পেঁয়াজের বাজারেও পড়েছে। এজন্য মিয়ানমার, পাকিস্তান ও চীনের পেঁয়াজের আমদানি-ব্যয়ও বেশি। যার চূড়ান্ত প্রভাব দেশীয় পেঁয়াজে পড়ার কারণে তার দাম কেজিতে শ’ টাকা উপরে। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশীয় নতুন পেঁয়াজ বাজারে না আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের দর নাগালের বাইরেই থেকে যাবে অন্তত আরও দুই মাস। তবে কেউ কেউ বলছেন ঈদের পর এই বাজার কিছুটা নিম্নমুখি হতে পারে তবে সেক্ষেত্রেও অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে।
রাজধানীতে পেঁয়াজের বড় সবরাহকারী শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সীমান্তেই ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। সেক্ষেত্রে বাজার সহনীয় করতে টিসিবি‘র ভূমিকা কোনো কাজেই আসছে না। মাত্র কয়েক ট্রাক পেঁয়াজ দিয়ে দাম সহনীয় করার নামমাত্র চেষ্টা করছে টিসিবি।
রাজধানীর বিভিন্ন পেঁয়াজের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, আড়তগুলোতে দেশি, পাকিস্তানি,ভারতীয়, মিয়ানমার, ও চীনের বড় আকারের পেঁয়াজের সরবরাহ আছে বটে। কিন্তু সকাল বিকাল দাম বাড়ার খবর দিচ্ছেন সীমান্ত এলাকার বা সাতক্ষীরা ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ ব্যাপারীরা।
গত কয়েকদিন নিয়মিত শ্যামবাজার সহ রাজধানীর কয়েকটি আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি করে দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ, ৭৫ থেকে ৯০ টাকা কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ, আবার ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি পাকিস্তানি পেঁয়াজ, আবার ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে সম্প্রতি চীন থেকে আনা পেঁয়াজও ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকালে এক দাম আবার বিকেলেই অন্য দাম। অথবা আগের দিনের দাম দিয়ে শুরু হচ্ছে সকাল।
শ্যামবাজারের ‘নিউ জননী’ বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার মোঃ ইলিয়াস আলী বঙ্গনিউজকে বলেন, কয়েক মাস ধরে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে শুধু এটিই বলা যায়। কিন্তু এটা কোথায় গিয়ে থামবে বলা মুশকিল।
‘আল্লার দান’ ভান্ডারের কর্মচারী মোঃ ফরিদ হোসেন বঙ্গনিউজকে বলেন, প্রতিদিনই মোকামে মণপ্রতি ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। কখনো হয়তো দাম থমকে থাকে কিন্তু কমে না। সেক্ষেত্রে আপাতত পেঁয়াজের বাজারের নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নেই।
শ্যামবাজারের ‘অভিসার’ বাণিজ্য ভান্ডারের ম্যানেজার টিটন রায় বঙ্গনিউজকে বলেন, ঈদের পর থেকে পরবর্তী ২ মাস পেঁয়াজের বাজার এমন অনিশ্চিত পথেই থাকবে। সরকার আমদানি বাড়ালেই কেবল অনিশ্চয়তা কমতে পারে। কিন্তু সীমান্তেই তো সঙ্কট। তাই চাইলেও কার্যকর ভূমিকার রাখতে পারছে না টিসিবিও।
পেঁয়াজের আমদানিকারক ও শ্যামবাজারের ‘এসএস ট্রেডিং’-এর মালিক আবুল কালাম আজাদ বঙ্গনিউজকে বলেন,ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার কারণে ভারতের কয়েকটি প্রদেশে পেঁয়াজের উপাদন ও সংরক্ষণ ব্যাহত হয়েছে। তাই ভারতের নতুন পেঁয়াজ ও দেশীয় পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত এই পেঁয়াজের দাম কোন পথে যাচ্ছে তা অজানাই ।
তিনি বলেন, টিসিবি মাত্র গুটিকয় ট্রাকে জনপ্রতি দুই কেজি পেঁয়াজ সরবরাহ করেই খালাশ। দফায় দফায় দাম বাড়ার ব্যাপারে তারা বরং নির্বিকার ভূমিকাই পালন করছে।
‘সুলতানা’ বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার সাগর হোসেন, নিউ আলমাস ট্রেডার্স-এর কর্মচারী মো. মালা, রাজ ট্রেডিং এর ম্যানেজার আবুল খায়ের বাবু পেঁয়াজের ভারতের বাজারে সঙ্কটের কারণে আমদানির সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে বঙ্গনিউজকে বলেন, এক্ষেত্রে টিসিবি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
আরতগুলোতে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহকারী ফরিদপুরের শালতা বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ ইসকেন ব্যাপারী বঙ্গনিউজকে বলেন, প্রতিদিন বাজারে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে দাম উঠানামা করছে। তবে ঈদের পরেও এই দাম কমবে কি না নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ১১০ থেকে ১২০ টাকা, আবার সদ্য আমদানি করা চীনের বড় বড় পেঁয়াজও খুচরা বাজারে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি। তবে বেশির ভাগ খুচরা ব্যবসায়ীর কাছে ভারতীয় পেঁয়াজ নেই। যারা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছেন তারাও দাম হাঁকাচ্ছেন ৯০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি।
সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজার থেকে নিয়মিত বাজার করেন কাজী যুবরাজ। তিনি বঙ্গনিউজকে বলেন, পেঁয়াজের দামের এই অবস্থা দেখে আগে দৈনিক আধ কেজি পেঁয়াজ কিনতাম। এখন আড়াইশ গ্রামে দিন পার করি। সরকারের সংস্থা টিসিবি এ বিষয়ে আর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে কেন যে নীরব আছে তা বোধগম্য নয়।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের নিয়মিত বাজার করেন মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম যেভাবে শ’টাকা কেজির উপরে উঠে গেছে, কবে যে এটি সহনীয় মাত্রায় আসে তার হদিস নেই।
পেঁয়াজের বাজারের এই অবস্থায় টিসিবি নতুন কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা সে বিষয়ে টিসিবির পক্ষ থেকে নির্বিকার জবাবই পাওয়া গেছে।
টিসিবি‘র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বঙ্গনিউজকে বলেন, আমরা যেভাবে প্রতি কেজি ৫৫ টাকা দরে ট্রাকে করে জনপ্রতি দুই কেজি করে বিক্রি করছি তা অব্যহত থাকবে। এ ব্যাপারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি।
উপরন্ত তিনি বলেন, ১৪ অক্টোবর থেকে খোলা বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে টিসিবি। কারণ এসময় ট্রাক পাওয়া যায় না।
তবে গত ১০ অক্টোবর থেকে রাজধানীতে আগের ২৫ টি ট্রাকের সাথে আরও ৫ টি ট্রাকে করে খোলাবাজারে অন্য পণ্যের সাথে পেঁয়াজও সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দাবি টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবিরের।
বাংলাদেশ সময়: ১১:১৩:৫১ ৭৯৩ বার পঠিত