চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় আজ অর্ধদিবস হরতাল

Home Page » জাতীয় » চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় আজ অর্ধদিবস হরতাল
রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৩



shibir-copy.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় আজ আধাবেলা হরতাল। ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল হত্যার প্রতিবাদ এবং পুলিশের খুনি সদস্যের শাস্তির দাবিতে এ হরতালের ডাক দিয়েছে জামায়াত-শিবির। গতকাল বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা না হলেও সরোজগঞ্জ, জীবননগর, দর্শনা ও কুষ্টিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। কুষ্টিয়ায় মিছিল থেকে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে দামড়হুদা থানায় জামায়াত-শিবিরের প্রায় সাড়ে ৬শ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এ মামলাকে উল্টো মামলা বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ। তারা বলেছেন, পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারালো শিবিরকর্মী, আর পুলিশ এখন মামলা করছে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।দামুড়হুদা থানায় দায়েরকৃত মামলায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। এরা হলো- দর্শনা হল্টচাঁদপুরের শহর আলীর ছেলে আবুবকর (৫০), একই গ্রামের আতিয়ারের ছেলে বিএনপিকর্মী সাইফুল (২৮) ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক চুয়াডাঙ্গা পলাশপাড়ার মঞ্জুরুল জাহিদ। এদেরকে গতকাল শনিবার আদালতে সোপর্দ করা হয়।

দর্শনায় গত বৃহস্পতিবার ছাত্রশিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডের অদূরে পুলিশি বাধার মুখে ছত্রভঙ্গ হয়। ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে ফিরতে শুরু করলে হল্টচাঁদপুরের নিকট গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। রফিকুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সরোজগঞ্জ বোয়ালিয়ার দরিদ্র করিমনচালক দেলোয়ার শেখের ছেলে। সে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অনার্স দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ছিলো। গতপরশু ময়নাতদন্ত শেষে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। এদিকে দামুড়হুদা থানায় গতকাল একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলা, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধা প্রদান ও শিবিরকর্মীকে হত্যার অভিযোগ এনে রুজু করা মামলায় দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি দক্ষিণ চাঁদপুরের আহম্মদ আলীর ছেলে আশকার আলী, দক্ষিণচাঁদপুর জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা হাবিবুর রহমান, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক জিএস পরানপুরের মিজানুর রহমান, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি বিল্লাল হোসেন, উপজেলা জামায়াতের আমির নায়েব আলী, সেক্রেটারি আব্দুল গফুর, সাবেক আমির দামুড়হুদার মাও. আব্দুস সাত্তার, দামুড়হুদা বাজারপাড়ার মৃত শাহার আলীর ছেলে মনিরুল ইসলাম মুকুল, দামুড়হুদা সদর ইউনিয়নের জামায়াতের সাবেক আমির আবুল বাশার, জয়রামপুর ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম টিক্কা, হাউলী ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাদরাসা শিক্ষক নজরুল ইসলাম, জামায়াতের দর্শনা পৌর আমির আবদুল কাদের, সেক্রেটারি গোলজার হোসেন, শিবিরের দামুড়হুদা থানা শাখার সেক্রেটারি আশিকুর রহমান অপু, দশমীর আব্দুর রবের ছেলে ইকতিয়ার রহমান, আ. সালামের ছেলে সাজেদুল ইসলামসহ ২৮৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এজাহারে এরাসহ অজ্ঞাতনামা আরো তিন থেকে সাড়ে তিনশজনকে আসামি করা হয়েছে। আসামির তালিকায় একজন মহিলার নামও রয়েছে। তিনি মহেশপুর উত্তরপাড়ার লতিফ শাহর স্ত্রী মেহেরুন নেছা। গত শুক্রবার সকালে দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আফজাল হোসেন বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এসআই ইমদাদুল হক। এ মামলায় তিনজনকে গতকাল শনিবার দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আটক তিনজন হলেন- দর্শনা হল্টচাঁদপুরের শহর আলীর ছেলে জামায়াত সমর্থক আবুবকর (৫০), একই গ্রামের আতিয়ারের ছেলে বিএনপিকর্মী সাইফুল (২৮) ও চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মঞ্জুরুল জাহিদ।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে শিবিরের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার জন্য ছয় শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী দর্শনা হল্টস্টেশন এলাকায় একত্রিত হয়। বিক্ষোভের নামে তারা নাশকতামূলক কাজের পরিকল্পনা করে। এ সময় পুলিশ তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে সংঘবদ্ধ জনতা হট্টগোল শুরু করলে তাদের হাতেই খুন হয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম। হত্যাকারীরা পুলিশের কাজে বাধা দেয় এবং পুলিশের ওপরও হামলা করে। দামড়হুদা থানার ওসি আহসান হাবীব জানান, এজাহারনামীয় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ মামলার বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আবদুর রহিম শাহ চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ ব্যাপারে শিবিরের চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি হাফেজ বেলাল হোসাইন জানান, সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা উল্লেখ করে পুলিশ এ মামলা করেছে। তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি শেষ করে চলে যাওয়ার সময় পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করে শিবিরকর্মী রফিকুলকে হত্যা করে। দলীয়ভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যামামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

আলমডাঙ্গা শহরে গতকাল শনিবার সকালে জামায়াত-শিবির ঝটিকা মিছিল বের করে। শহরের আলতায়েবা মোড় থেকে শুরু হয়ে চারতলা মোড়ে গিয়ে সমাবেশ করে। সমাবেশে বেশ কয়েকজন বক্তা বক্তব্য রাখেন। খুব দ্রুতই তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান।

গতকাল শনিবার সরোজগঞ্জ বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সরোজগঞ্জ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদ মার্কেটের নিকট সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সদর থানা জামায়াতের আমির হাজি আব্দুর রউফ মিয়া, জেলা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি তরিকুল ইসলাম, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আমান উদ্দিন, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা পৌর সভাপতি মাহাবুব হোসেন, চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পশ্চিম ছাত্রশিবিরের সভাপতি কবির হোসেন, জামায়াত ইসলামীর পদ্মবিলা ইউনিয়ন আমির ছানোয়ার হোসেন, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন আমির ওসমান গনি, তিতুদহ ইউনিয়ন আমির রেজাউল করিম, বেগমপুর ইউনিয়ন আমির হুমাউন কবির, কুতুবপুর ইউনিয়ন আমির আ. জব্বার, সরোজগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা জামায়াতের সভাপতি মাজাহারুল ইসলাম, মখলেচুর রহমান লিটন, মাসুম বিল্লা প্রমুখ।

দর্শনায় পুরোদিনেই জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকর্মীকে প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও ভোরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। দর্শনায় সকাল থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। বিজিবির কয়েকটি গাড়ি টহল দিতে দেখা গেছে।

দর্শনায় পুলিশের গুলিতে শিবিরকর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদ ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল শনিবার জামায়াত-শিবির বিক্ষোভ মিছিল বের করে। শহরের কালীগঞ্জ সড়ক থেকে ভোরে উপজেলা আমির খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি  শহর ঘুরে বাসস্ট্যান্ড চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে। সমাবেশে জামায়াত ও ছাত্রশিবির নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকর্মী রফিকুল ইসলামের ওপর গুলিবর্ষণকারী পুলিশ সদস্যকে চিহ্নিত করে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়াও এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ছিনাইদহ ও কুষ্টিয়ায় অর্ধবেলা হরতাল সফল করার জন্য ব্যবসায়ীসহ সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।

কুষ্টিয়াসহ চার জেলায় আজ রোববারের হরতালের সমর্থনে কুষ্টিয়া শহরে গতকাল শনিবার মিছিল করেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করে। পরে পুলিশ এসে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় ও দু কর্মীকে আটক করে। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, বেলা ১২টার দিকে কয়েকশ শিবিরনেতাকর্মী শহরের চৌড়হাস মোড় থেকে মিছিল বের করে। এ সময় তারা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে মিছিলকারীরা একটি ককটেল বিস্ফোরণ ও রাস্তায় পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় শিবিরের দু কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তবে তাদের নাম-পরিচয় ‍জানা যায়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১০:৫৬:২২   ৪৬২ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

জাতীয়’র আরও খবর


সালাম, আমান, রিজভী, খোকন, শিমুল ও এ্যানিসহ গ্রেফতার শতাধিক
ভারতকে হারিয়ে টাইগারদের সিরিজ জয় নিশ্চিত
 নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ,নিহত ১
বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
আড়াইহাজারে অর্থনৈতিক অঞ্চল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
কোয়ার্টারে ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি
ব্যাংকে টাকা নিয়ে গুজবে কান না দেয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তির লটারি ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর
২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে করোনা টিকার চতুর্থ ডোজ
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর

আর্কাইভ