বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন রাজধানীবাসী। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ঈদ-পূজার ছুটি শুরু না হলেও বাড়ি ফিরতে রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহন টার্মিনালে ভিড় করছেন যাত্রীরা। ঝামেলা এড়াতে অনেকে আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের। তবে আনন্দ যাত্রা হলে বাসস্ট্যান্ডগুলোর অব্যবস্থাপনা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে অসহনীয় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। শনিবার সকালে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, স্বজনদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা। কিন্তু পরিবহনগুলোর ওয়েটিং রুমে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাসস্ট্যান্ডের প্লাটফর্মে, এমনকি ফুটপাতে বসেও গাড়ির অপেক্ষায় সময় গুনছেন অনেকে। প্লাটফর্ম, ফুটপাতের পাশাপাশি পরিবহন কাউন্টারগুলোর ওয়েটিং রুমের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বেশ অস্বস্তিতে ফেলছে যাত্রীদের।
যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের পাশাপাশি বাসস্ট্যান্ডের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের অসুবিধাকেই বড় করে দেখছেন অনেকে। রিশালগামী সাকুরা পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের যাত্রী মোছাম্মৎ নাজমা পারভীন বঙ্গনিউজকে বলেন, প্রতি বছরই যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মতো সমস্যাগুলো যেন ঈদ যাত্রীদের পিছ ছাড়ে না। এসবের সঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের বেশ ভোগান্তিতে ফেলে।
তিনি বলেন, অনেকে শিশু নিয়ে কাউন্টারের সামনে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করেন। এতে বয়স্ক লোকদের পাশাপাশি শিশুদেরও নানা ধরণের অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
মাগুরাগামী দিগন্ত পরিবহনের যাত্রী মোহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ঈদে অপেক্ষা করতে কোনো অসুবিধা নেই। এটাও এক ধরনের আনন্দ মনে হয়। কিন্তু লোকজন যেখানে-সেখানে মূত্রত্যাগ করছে, দুর্গন্ধে শ্বাস ফেলা দায়। আবার কিছু বলারও নেই, কারণ পাবলিক টয়লেটের যে অবস্থা, তাতে সেখানে যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই।
একই জেলাগামী কোহিনুর পরিবহনের যাত্রী আসমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, পুরুষদের জন্য পাবলিক টয়লেট কোনো বড় বিষয় না হলেও নারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসস্ট্যান্ডের পাবলিক টয়লেটের যে অবস্থা তাতে খুব বিপদে না পড়লে সেখানে যাওয়া সম্ভব নয়।
এসব অভিযোগের জবাবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সহকারী ব্যবস্থাপক জসুন আলী বঙ্গনিউজকে বলেন, গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের ওয়েটিং রুমে ১০০টির মতো আসন রয়েছে। আমরা আরও ১০০টি আসন বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি, কিন্তু এখনও কোনো জবাব পাইনি।
আবেদন গ্রহণ করা হলে ভোগান্তি কিছুটা কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা স্বীকার করে পরিচ্ছন্নকর্মীর অপর্যাপ্ততা রয়েছে উল্লেখ করে জসুন আলী বলেন, সাধারণত বাসস্ট্যান্ডে ৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী কাজ করেন। ঈদ উপলক্ষে ২ জন অতিরিক্ত নিয়ে মোট ৯ জনকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তবে ২০ জনের মতো পরিচ্ছন্নকর্মী কাজ করলে বাসস্ট্যান্ড পরিষ্কার রাখা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ঈদ এবং পূজার কারণে দিন-রাত সারাক্ষণ বাসস্ট্যান্ড এলাকা জনাকীর্ণ থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো জায়গায় আবর্জনা রয়েছে, কিন্তু সেখানটায় যাত্রী বসে আছেন। সেক্ষেত্রে যাত্রীকে উঠে যেতে বলাও সম্ভব হয় না। এ সময় হাত দিয়ে তুলে যতটুকু পরিচ্ছন্ন করা যায় সে চেষ্টাই চলে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বঙ্গনিউজকে বলেন, গত ঈদে ঢাকা থেকে প্রায় পৌনে এক কোটি যাত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। এবার ঈদ এবং পূজা একই সঙ্গে হওয়ায় রাজধানী ছাড়বে এমন লোকের সংখ্যা ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়তে পারে।
যাত্রী দুর্ভোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোরবানি পশুর হাটের অব্যবস্থাপনাই যানজটের মূল কারণ। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল মূল সড়কের পাশে কোনো পশুর হাট বসানো যাবে না। অথচ দেখা গেছে রাজধানীর গাবতলী, নয়াবাজার এলাকার মূল সড়কের পাশে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসানোয় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বিভিন্ন পরিবহন স্ট্যান্ডে এবং যাত্রাপথে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:৩৬:৪২ ৩৫৮ বার পঠিত