বঙ্গ-নিউজডটকম:দেশের সবচেয়ে বড় উড়ালসড়ক ‘মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার’ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল শুক্রবার বিকেলে গুলিস্তান থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই সেতু দেশবাসীর জন্য ঈদুল আজহার উপহার বলে মন্তব্য করেন।
উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী প্রথম ৫০ টাকা টোল দেন। দেশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বে (পিপিপি) নির্মিত উড়ালসড়কটির দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৭ কিলোমিটার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উড়ালসড়ক মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করবে। ঢাকা শহরের যানজট কমবে এবং সময় বাঁচবে। এ ছাড়া দেশের ৩০টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সরকারে আসি, নিতে আসি না। দিতে আসি।’ এ প্রসঙ্গে তিনি ঢাকা শহরে ১১টি সরকারি স্কুল-কলেজ নির্মাণকাজ চলমান থাকার কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী উড়ালসড়কের গুলিস্তান অঞ্চলে ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি সড়কের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকার কুতুবখালী যান। আপাতত মানুষ সড়কের এ অংশ ব্যবহার করতে পারবে, পুরো সড়কের কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগবে।প্রধানমন্ত্রী কুতুবখালী টোল প্লাজার উদ্বোধন করে আবার গুলিস্তান অঞ্চল হয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডিমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান, উড়ালসড়কের নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিমসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সড়কটির ওপর দিয়ে কিছুদূর হেঁটে যান। এ সময় সেখানে উপস্থিত শত শত মানুষকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। ২০১০ সালের ২২ জুন প্রধানমন্ত্রী উড়ালসড়কটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সড়কটি যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে শুরু হয়ে পুরান ঢাকার নিমতলী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়েছে। প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৮৮ কোটি ৯০ হাজার ৩৮১ টাকা। কয়েক দফা নির্মাণব্যয় বেড়ে বর্তমানে উড়ালসড়কের ব্যয় দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সমাবেশে যখন বক্তব্য দিচ্ছিলাম তখন হানিফ ভাই আমার ডান পাশে ছিলেন। গ্রেনেড হামলার সময় হানিফ ভাই, মায়াসহ কয়েকজন আমাকে ঘিরে ধরেন। তাঁরা মানবঢাল রচনা করেন। আবেগাপ্লুত শেখ হাসিনা বলেন, গ্রেনেডের স্প্লিন্টারে হানিফ ভাইয়ের মাথা থেকে টপটপ করে রক্ত গড়িয়ে আমার গায়ে পড়ে। তার পরও তিনি আমাকে ছেড়ে যাননি। তাঁর স্মরণে এই ফ্লাইওভার করেছি।’অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ হানিফের স্ত্রী ফাতেমা হানিফ, পুত্র এবং আওয়ামী লীগের নেতা সাঈদ খোকনসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ঢাকা শহর যানজটমুক্ত করতে আমরা উড়ালসড়ক, ওভারপাস, কমিউটার ট্রেন চালু করেছি। ঢাকার চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ খনন করা হচ্ছে। মিরপুর-এয়ারপোর্ট সড়কে জিল্লুর রহমান ফ্লাইওভার, কুড়িল বিশ্বরোড ফ্লাইওভার, বনানী রেলক্রসিং ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রোরেল এবং তেজগাঁও-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরবাসীর চলাচল আরও সুন্দর হবে।’ শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার সক্রিয় দিকনির্দেশনা ছাড়া এই উড়ালসড়কের বাস্তবায়ন সম্ভব হতো না। তিনি তেজগাঁও-মৌচাক উড়ালসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। বছর খানেকের মধ্যে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ইনশা আল্লাহ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এই উড়ালসড়ক উদ্বোধন করবেন।’উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবু আলম মো. শহিদ খান এবং উড়ালসড়কের প্রকল্প পরিচালক আশিকুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ নজমুল ইসলাম। ওরিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমান করিম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।