বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বন্দরনগরীর কোরবানীর বাজারে ক্রেতার আনাগোনা পুরোদমে শুরু না হলে ও বিক্রেতাদের হাঁকডাক থেমে নেই। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু-ছাগল নিয়ে বিক্রেতারা জড়ো হয়েছেন চট্টগ্রামের পশুরহাটগুলোতে। এছাড়া ভারত,মায়ানমার ও নেপালের গরুও এসেছে। বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানীর গরুর বাজারে এখনও ক্রেতাদের আসা শুরু হয়নি। তবে ঈদের দু’তিনদিন আগে থেকে বাজারে ক্রেতাদের সমাগম বাড়বে। সে অনুযায়ী তাদের প্রস্তুতিও রয়েছে। সরেজমিনে নগরীর সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী সাগরিকা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারের বিভিন্ন অংশে ভাগ করে গরুর বাজার নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি অংশে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের, অপর অংশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও কুমিল্লার এবং আরেকটিতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দেশি গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে সাগরিকা বাজারের মূল অংশে দেশীয় গরু থেকে ভারতীয় গরুর উপস্থিতিই বেশি লক্ষ্য করা গেছে। চট্টগ্রাম সাগরিকা গরুর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আবু ইউসুফ বঙ্গনিউজকে বলেন,‘বাজারে এখনো ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হয়নি। গতবার এমন সময়ে বাজার বেশ জমলেও এবার শুরু হয়নি। প্রতিদিন দু’একজন করে আসছেন, অনেকেই আবার দেখতে আসছেন বাজারের পরিস্থিতি।’তিনি বলেন,‘শুক্রবার থেকে বাজার জমতে শুরু করবে। ঈদের দু’দিন আগ থেকে দম ফেলারও ফুরসত থাকবে না। সে অনুযায়ী ব্যবসায়ীদেরও প্রস্তুতি রয়েছে।’ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ওই গরুর হাটে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বড় গরু এনেছেন সিরাজগঞ্জের মো. নিজাম উদ্দিন বেপারী। তার কাছে সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ লাখ টাকা দামের গরু আছে বলে জানান তিনি। নিজাম উদ্দিন জানান, রাজশাহী ও খুলনা থেকে তিনি ৭টি বড় জাতের গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন। এর মধ্যে একটি গরুর দাম হেঁকেছেন সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা। তার কাছে সর্বনিম্ন দুই লক্ষ টাকা দামের গরুও আছে। নিজাম উদ্দিন বেপারী বঙ্গনিউজকে বলেন,‘এসব গরু আমাদের নিজস্ব ফার্মে লালন পালন করেছি। দৈনিক এসব গরু প্রতি প্রায় ১২শ’টাকার মত খরচ হয়। এছাড়া আলাদা যত্ন নিতে হয় এসব গরুর। বুধবার তিনি একটি গরু ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান। কুমিল্লার লাকসাম থেকে মো. কামাল উদ্দিন বেপারী রাজশাহী, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে ২৫টি গরু নিয়ে বাজারে এসেছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে এক লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আসা আবু সাঈদ বেপারী তার দুটি গরুর দাম দিয়েছেন আড়াই লক্ষ টাকা। সিডিএ মার্কেটে ব্যবসায়ী মো. খোকন মিয়া এক লক্ষ টাকা দিয়ে গরু দুটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ সময় বঙ্গনিউজকে খোকন বলেন,‘গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা চড়া দাম হাঁকছেন।’
তবে এ বিষয়ে আবু সাঈদ বেপারী বলেন, ‘বেনাপোল থেকে গরু আনতে পরিবহন খরচ পড়েছে ২৫ হাজার টাকা। ঘাটে ঘাটে পুলিশ-সন্ত্রাসীদের চাঁদাও দিতে হয়েছে।’ আছে দেশীয় জাতের গরু:সাগরিকায় দেশি গরুর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লক্ষ ৩০ টাকা পর্যন্ত দামের গরু রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরের মত এবারও বাজারে টাঙ্গাইল, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, যশোর, ময়মনসিংহ সহ দেশের আরও কয়েকটি স্থান থেকে দেশীয় জাতের গরু আনা হয়েছে। এর ফাঁকে ভারত থেকে সাদা গরু এবং বড় আকারের নেপালী জাতের গরুও বিক্রি হচ্ছে।
এ বাজারে সকাল থেকে ছোটবড় কয়েকটি ট্রাকে ঢুকছে দেশীয় জাতের বিভিন্ন গরু। টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর থেকে গরু নিয়ে আসা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, একটি ট্রাকে করে তিনি ২৩টি মাঝারি ধরনের গরু নিয়ে এসেছেন।
দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘ আমার কাছে ২৫হাজার টাকা থেকে সবোর্চ্চ ৮৫ হাজার টাকা দামের গরু আছে।’
বাজার এখনো জমে উঠেনি বলে স্বীকার করে সাগরিকা বাজারের ইজারাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি মো. ইলিয়াস বঙ্গনিউজকে বলেন,‘কোরবানীর গরু আগে কিনলে বাসায় রাখতে সমস্যা হয়। আর প্রথমদিকে দামও একটু বেশি থাকে। শুক্রবার থেকে বাজার জমবে।’
ক্রেতার অপেক্ষায় ছাগলের বাজার:
গরুর বাজারের পাশাপাশি কোরবানী উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা দেশি-বিদেশী মাঝারি ও বড় জাতের ছাগলের বাজারও ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করছে।
সিরাজগঞ্জ থেকে সাড়ে চারশ’ ছাগল নিয়ে আসা বাচ্চু বেপারী বঙ্গনিউজকে জানান, গত দু’দিনে তার ২৫টি ছাগল বিক্রি হয়েছে। তার কাছে ১০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা দামের ছাগল আছে।
তিনি বলেন,‘বাজার এখনও জমেনি। গত দু’দিনে সবোর্চ্চ ২৮ হাজার টাকায় একটি ছাগল বিক্রি করেছি।’
বাজারের অব্যবস্থাপনা:
এদিকে সাগরিকা গরুর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, গবাদি পশুর বিষ্টা আর বৃষ্টিতে হাটের মূল রাস্তা কাদায় তলিয়ে গেছে। যা ক্রেতাদের আনাগোনার জন্য ব্যঘাত সৃষ্টি করছে। বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন, সংশ্লিষ্টদের বারবার এবিষয়ে জানানো হলেও তেমন কোন ব্যবস্থা তারা নিচ্ছেন না।
তবে ইজারাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ইলিয়াস জানান,‘ইতোমধ্যে কাদা পরিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছে।’
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার নগরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে দুটি স্থায়ী বাজার ছাড়া আরও পাঁচটি অস্থায়ী বাজার বসছে। স্থায়ী বাজারগুলো হচ্ছে, সাগরিকা বাজার ও বিবিরহাট।
অস্থায়ী বাজার হচ্ছে, সল্টগোলা, স্টিল মিল, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, বাকলিয়ায় সিডিএ’র কল্পলোক আবাসিক এলাকার মাঠ এবং কমল মহাজন হাট।
এছাড়া নগরী ছাড়াও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় কোরবানী উপলক্ষে অস্থায়ী পশুর হাট বসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৭:৩০ ৫০৬ বার পঠিত