বঙ্গ-নিউজডটকম:শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী আয়েশা আরেফিন কৃত্রিম ফুসফুস তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা গবেষক আর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আয়েশা ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমালেন? কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যালামস ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে যোগ দিলেন? কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরির জটিল মহাযজ্ঞেই বা যোগ হলেন কীভাবে, জানতে চাই। ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাহবুবুল হক স্যারের তত্ত্বাবধানে থিসিস করছিলাম। আমার ফলও বেশ ভালো ছিল। আমার গবেষণার কিছু ডেটা আর উচ্চশিক্ষায় আগ্রহের কথা জানিয়ে লস অ্যালামস জৈব গবেষণারের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ক্রিস ডেটারের কাছে ই-মেইল করি। তখন সেখানে একদল বিজ্ঞানী মেটা-জিনোমিক্স নিয়ে কাজ করছিলেন। তাঁরাই আমাকে তাঁদের দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দেন।’ অনলাইন সাক্ষাৎকারে বলছিলেন আয়েশা।
২০১১ সাল। আয়েশা পাড়ি জমালেন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যালামস শহরে। ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকোর ‘ন্যানোসায়েন্স অ্যান্ড মাইক্রোসিস্টেমস’ বিভাগে ভর্তি হলেন, পাশাপাশি চলল ‘অপটোজেনেটিকসের’ ওপর তাঁর পিএইচডি গবেষণার কাজ। ‘লস অ্যালামস হলো পুরো বিশ্বের একটি ছোট সংস্করণের মতো। প্রায় সব দেশের মানুষ আছে এখানে। প্রতি বর্গমাইলে সবচেয়ে বেশি ডক্টরেটধারী আর কোটিপতিরাও থাকেন এই শহরে।’ জানালেন তিনি।
আয়েশাদের কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি-সংক্রান্ত গবেষণা দলটির নেতা রাশি আইয়ার, একজন প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী। রোগ শনাক্তকরণ ও সঠিক প্রতিষেধক তৈরিতে এই গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আয়েশার বিশ্বাস। কৃত্রিম ফুসফুস তৈরিতে ইতিমধ্যেই তাঁরা বেশ সাফল্য পেয়েছেন। বলছিলেন, ‘গবেষণার স্বার্থে আপাতত কিছু বিষয় গোপন রাখা হচ্ছে, তবে শিগগিরই আমাদের দলের প্রধান গবেষক রাশি আইয়ার এ সম্পর্কে গবেষণাপত্র প্রকাশ করবেন।’কৃত্রিম অঙ্গ তৈরির এই গবেষণা একটি পাঁচ বছরের প্রকল্প। পাশাপাশি, স্নায়ুসংক্রান্ত কিছু গবেষণার কাজও আয়েশারা করছেন। শিগগিরই ন্যানো পার্টিকেলের মাধ্যমে প্রতিষেধক প্রদানের আরেকটি গবেষণাও শুরু হবে বলে তিনি জানালেন।কথায় কথায় জানা গেল, সুযোগ পেলেই সহপাঠী আর সহকর্মীদের কাছে দেশের গল্প করেন আয়েশা। ‘ওদের বলি, বাংলাদেশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর আর সুখী দেশ। এই দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হলো, মানুষ খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে জানে। আমার দেশের মানুষ এত বেশি আন্তরিক, কখনো কখনো তোমাদের কাছে বাড়াবাড়িও মনে হতে পারে!’বাবা বেলায়েত হোসেন আর মা রোকেয়া বেগমের মতো দেশটাও আয়েশাকে সমান টানে। দেশে থাকাকালীন বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িত ছিলেন, ফিরে আরও বিপুল উৎসাহে কাজে নামতে চান। বলছিলেন, ‘ডক্টর হওয়ার পরে ইউরোপ মহাদেশটা ঘুরে দেখতে চাই, হয়তো পোস্ট ডক্টরেটের খাতিরে সেটা হতেও পারে। এরপর দেশে ফিরব। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি পড়ানোর সুযোগ পাই, ভালো লাগবে। পাশাপাশি আমার রূপকথা স্কুল, যেটা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আছে, ওখানে পড়াতে চাই। দেশের সঙ্গে বাইরের বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারের যোগাযোগ স্থাপনেও কাজ করতে চাই।’