বঙ্গ-নিউজ ডটকম : প্রত্যেক ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারীভাবে আটক ও গ্রেফতার থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এটি সর্বজনবিদিত যে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না থাকলে একজন ব্যক্তির অন্য সব অধিকার ক্রমবর্ধমানহারে অরক্ষিত এবং প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।
জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক কনভেনশন এবং রাষ্ট্রীয় সংবিধান ও প্রচলিত আইনে বিভিন্নভাবে একজন ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাচারীভাবে আটক ও গ্রেফতার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রেই কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার বা আটক করতে সুনির্দিষ্ট যুক্তিসংগত কারণ বিদ্যমান থাকতে হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণা পত্রের ৯ ধারা অনুযায়ী কাউকে খেয়াল খুশি মত গ্রেফতার বা নির্যাতন করা যায় না।
নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির ৯(১) ধারা অনুযায়ী প্রত্যেকের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে এবং কাউকে খেয়াল খুশি মত আটক অথবা গ্রেফতার করা যায় না। এমন কি আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট কারণ ও আইনানুগ পদ্ধতি ব্যতীত কাউকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না।
তাছাড়া, ৯(২) ধারা অনুযায়ী কাউকে গ্রেফতারের সময় কারণ জ্ঞাপন করতে হয় এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে তাকে অবিলম্বে অভিত করতে হয়।
আবার, ৯(৩) ধারা অনুযায়ী ফৌজদারী অপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত অথবা আটক ব্যক্তিকে অবিলম্বে কোন বিচারক কিংবা আইনের দ্বারা বিচার ক্ষমতা প্রয়োগের কর্তৃত্বপ্রাপ্ত অন্য কোন কর্মকর্তার সম্মুখে হাজির করতে হয় এবং অনুরূপ ব্যক্তি যুক্তি সংগত সময়ের মধ্যে বিচার অথবা মুক্তি পাওয়ার অধিকারী।
উক্ত কনভেনশনের ৯(৪) ধারা অনুযায়ী গ্রেফতার অথবা আটকের ফলে কেউ স্বাধীনতা বঞ্চিত হতে আদালতে কার্য-ধারা গ্রহণের অধিকার তার থাকবে, যাতে অবিলম্বে তার আটকের বৈধতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিতে পারে এবং উক্ত আটক আইন বিরুদ্ধ হলে তার মুক্তির আদেশ দিতে পারে।
সর্বোপরি, ৯(৫) ধারা অনুযায়ী, কেউ অবৈধভাবে গ্রেফতার অথবা আটকের শিকার হলে ক্ষতিপূরণ লাভের বলবৎযোগ্য অধিকার তার থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
কম্বোডিয়া:
কম্বোডিয়া সিসিপি’র ৯৬ ধারা অনুযায়ী যদি সরকারি আইনজীবী (প্রসিকিউটের) লিখিত অনুমতি প্রদান করেন অথবা যদি কোন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান না করে অথবা যদি কোন ব্যক্তি অপরাধ সংগঠনে যুক্ত মর্মে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ বিদ্যমান থাকে তবে একজন বিচারিক পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারেন।
চীন:
চীন সিপিএল এর ধারা ৫৯ অনুযায়ী জন নিরাপত্তা সংস্থা পিপল’স প্রকিউরেটোরেট এর অবশ্য অনুমোদন সাপেক্ষে অথবা পিপল’স কোর্ট এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপরাধে অভিযুক্ত অথবা সন্দেহযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন।
তাছাড়া, চীন সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পিপল’স প্রকিউরেটর এর অনুমোদন বা সিদ্ধান্ত অথবা পিপল’স কোর্ট এর সিদ্ধান্ত ব্যতীত কোন নাগরিককে গ্রেফতার করা যাবে না এবং গ্রেফতার অবশ্য জন নিরাপত্তা সংস্থা কর্তৃক কার্যকর হবে।
ভারত:
ভারতীয় ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১ ধারা অনুযায়ী পুলিশ অফিসার যুক্তিসংগত সম্ভাব্য কারনের ভিত্তিতে আম্ল আযোগ্য অপরাধ ব্যতীত অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া একজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে গ্রেফতারের সময় উক্ত ব্যক্তি কোন অপরাধ সংগঠিত করেছে বা করছে বলে পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ বিদ্যমান থাকে হবে।
রুয়ান্ডা:
রুয়ান্ডা ফৌজদারী কার্যবিধি কোডের ৩৭ ধারা অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি এমন কোন অপরাধ সংগঠিত করেছে যার শাস্তির মেয়াদ কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ড মর্মে গুরুত্বর সন্দেহ বিদ্যমান থাকে অথবা যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করতে পারে বলে যুক্তিসংগত সন্দেহ বিদ্যমান থাকে অথবা যদি তার পরিচয় অজানা বা সন্দেহজনক মনে হয়, তবে একজন বিচারিক পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তের স্বার্থে তার অফিসিয়াল সক্ষমতায় তাকে গ্রেফতার বা আটক করে থানা হেফাজতে আবদ্ধ রাখতে পারেন।
তানজানিয়া:
তানজানিয়া ফৌজদারী আইন, ১৯৮৫ এর ১৪ ধারা অনুযায়ী একজন পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে- (এ) যদি কোন ব্যক্তি তার উপস্থিতিতে শান্তি ভঙ্গ করে; (বি) যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে পুলিশ কর্মকর্তার আইনগত কার্যসম্পাদনে বাঁধা প্রদান করেন এবং আইনগত হেফাজত থেকে পলায়ন করে বা পলায়নের চেষ্টা করে; এবং (সি) যদি কোন ব্যক্তির নিকট যুক্তিসংগত সন্দেহযুক্ত চুরির দ্রব্যাদি পাওয়া যায়।
জিম্বাবুয়ে:
জিম্বাবুয়ে সংবিধানের ১৩(২)(ই) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাচারীভাবে গ্রেফতার করা যাবে না, গ্রেফতার করতে হলে উক্ত ব্যক্তি কোন ফৌজদারি অপরাধ করেছে মর্মে যুক্তিসংগত সন্দেহ বিদ্যমান থাকতে হবে।
তাছাড়া, জিম্বাবুয়ে সিপিইএ’র অধ্যায় ৫, বিভাগ এ, ধারা এ-সি অনুযায়ী যদি কোন ব্যক্তি একজন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কোন অপরাধ করতে থাকে, কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ সংগঠিত করেছে মর্মে একজন পুলিশ অফিসার যুক্তিসংগতভাবে সন্দেহ করে, কোন ব্যক্তি কোন অপরাধ সংগঠনের চেষ্ঠা করে অথবা তা সংগঠন করতে স্পষ্টভাবে অভিপ্রায় ব্যক্ত করে তবে একজন পুলিশ অফিসার তাকে গ্রেফতার করতে পারেন।
সর্বোপরি, জিম্বাবুয়ে সংবিধানের ১৩(২)(ই) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে যত দ্রুত সম্ভব তাকে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে এবং কোন প্রকার বিলম্ব ব্যতীত তার পছন্দ মত আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করার অনুমতি প্রদান করতে হবে।
বাংলাদেশ:
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না, যাতে কোন ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম, বা সম্পত্তির হানি ঘটে।
আবার ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যায় না।
সর্বোপরি, সংবিধানের ৩৩ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত কোন ব্যক্তিকে যথাসম্ভব শীঘ্র গ্রেফতারের কারণ জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যায় না এবং উক্ত ব্যক্তিকে তার মনোনীত মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শের ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যায় না।
তাছাড়া, সংবিধানের ৩৩ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হাজির করতে হয় এবং ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ব্যতীত তাকে তদতিরিক্ত কাল প্রহরায় আটক রাখা যায় না।
বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী নিম্নোক্ত নয়টি ক্ষেত্রে ম্যাজিষ্ট্রেটের আদেশ অথবা বিনা গ্রেফতারী পরোয়ানায় পুলিশ যে কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে পারে।
(১)কোন আমলযোগ্য অপরাধে জড়িত অথবা জড়িত বলে যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ রয়েছে;(২)আইনসঙ্গত কারণ ব্যতীত ঘর ভাংগার সরঞ্জাম রয়েছে;(৩)আইনানুযায়ী যাকে অপরাধী বলে ঘোষনা করা হয়েছে;(৪)চোড়াই মাল রয়েছে বা চুরি কার্য সংঘটিত করেছে বলে সন্দেহ হয়;(৫)পুলিশের কাজে বাঁধা দানকারী বা পুলিশের হেফাজত থেকে পলায়নকারী বা পলায়নের চেষ্টাকারী;(৬) প্রতিরক্ষা বাহিনী থেকে পলায়নকারী;(৭) দেশের বাইরে এমন কোন অপরাধ সংগঠন করী যা বাংলাদেশে সংগঠন করলে অপরাধ বলে গন্য হত;(৮)কোন মুক্তিপ্রাপ্ত আসামী মুক্তির শর্ত বা প্রচলিত নিয়ম লঙ্ঘনকারী; এবং (৯)আইনসঙ্গত ভাবে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের কারণ রয়েছে এমন কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের জন্য অন্য কোন পুলিশ অফিসারের নিকট থেকে প্রাপ্ত অনুরোধক্রমে কোন ব্যক্তিকে বিনা গ্রেফতারী পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে।
তবে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের জন্য প্রতিটি ক্ষেত্রে সন্দেহ সুনির্দিষ্ট, যুক্তিসংগত, দৃঢ় ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হয়। খামখেয়ালী ভাবে কাউকে গ্রেফতার করা যায় না।
কোন অপরাধ সংগঠিত করেছে, করছে অথবা করতে যাচ্ছে এরূপ বিশ্বাস করার যুক্তিসংগত সম্ভাব্য কারণ বিদ্যমান থাকলেই শুধুমাত্র পুলিশ অফিসার একজন ব্যক্তিকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারে। যুক্তিসংগত বিশ্বাসযোগ্য কারণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সাথে বিবেচনা করতে হয়। পুলিশ অফিসারের স্বেচ্ছাচারী দৃষ্টিতে বিবেচনা করলে চলবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২৩:৫৪:১০ ৭০৭ বার পঠিত