বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
সত্যিই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন অনন্ত। তবে কোনো দৈবশক্তি বা অতিমানবীয় কায়দায় নয়। সময়োপযোগী প্রযুক্তি, গল্প, গান আর নির্মাণ দিয়ে মধ্যবিত্ত দর্শককে আবার প্রেক্ষাগৃহে ফিরিয়েছেন তিনি। এর জন্য তার অর্থ ব্যয় আর আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। দর্শক যখন প্রেক্ষাগৃহবিমুখ, কোনো নির্মাতা যখন সাহস করে অবস্থার উত্তরণে এগিয়ে আসছে না, তখন দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনে বিশাল বাজেটে নির্মিত আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করলেন এবং সফল হলেন এম এ জলিল অনন্ত। তার চলচ্চিত্র শুধু দেশে নয়, বিদেশের মাটিতেও সমানভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। অশ্লীলতার ভয়াল থাবায় নব্বই দশকের শেষভাগ থেকে ঢাকার চলচ্চিত্র বিধ্বস্ত। দর্শক প্রেক্ষাগৃহবিমুখ, একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ এবং ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানির অপতৎপরতায় যখন ঢালিউড নিকষ কালো অন্ধকারে নিমজ্জিত ঠিক তখনই ২০১০ সালে ‘খোঁজ দ্য সার্চ’ নিয়ে চলচ্চিত্রের পুনরুজ্জীবনে অনন্তর যুদ্ধ ঘোষণা। দূরদর্শী প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে সহজেই যুদ্ধ জয় করলেন তিনি। এরপর একে একে ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ,’ ‘দ্য স্পীড’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ এবং ‘নিংস্বার্থ ভালোবাসা’। জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সফলতার পথে অনবরত এগিয়ে যাচ্ছেন ঢালিউডের সাফল্যের বরপুত্র এমএ জলিল অনন্ত। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তের দর্শক সপরিবারে ফিরল প্রেক্ষাগৃহে। শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি মন্ত্রী পর্যন্ত অনন্তের সফল নির্মাণ দেখতে প্রেক্ষাগৃহের কড়া নাড়লেন। সবার মুখে শুধুই অনন্তর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন, ‘আই অ্যাম ইমপ্রেসড, অনন্তর চলচ্চিত্রে নতুনত্ব আছে। যা এতদিন এদেশের চলচ্চিত্রে পাইনি। আমি আমার পুত্রবধূর পীড়াপীড়িতে ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ দেখতে এসেছিলাম। এটি দেখার পর সত্যিই আমি মুগ্ধ। অনন্ত এদেশের চলচ্চিত্রের গর্ব।’ অভিনেত্রী বর্ষার প্রশংসা করে মন্ত্রীর সহধর্মিণী তাকে বললেন ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না আমাদের চলচ্চিত্রে তোমার মতো এত সুন্দর একজন দক্ষ অভিনেত্রী আছে। তুমি বলিউডের নায়িকাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নও। আমি তোমার জন্য দোয়া করছি।’এ তো গেল অনন্তের চলচ্চিত্র নিয়ে দেশের চালচিত্র। বিদেশের মাটিতেও তার সমান জয়জয়কার। গত ১০ মার্চ অনন্তর ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ চলচ্চিত্রটির ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার হয় লন্ডনের এলফোর্ড সিনেওয়ার্ল্ডে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে দেশীয় চলচ্চিত্র রপ্তানি হলো। প্রিমিয়ারে সিএনএন, বিবিসি, আল জাজিরাসহ বিশ্বের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলো অংশ নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ পরিবেশন করে। প্রিমিয়ারের পর লন্ডনের সিনেওয়ার্ল্ড বার্মিংহাম, ব্রেডফোর্ড, এনফিল্ড, উডগ্রিন ওয়ার্ল্ডস ওয়ার্থ, এলফোর্ড, লিউটন ও গুলভার হেম্পটন- এই আটটি প্রেক্ষাগৃহে ‘মোস্টওয়েলকাম’ মুক্তি পায় এবং বিপুল দর্শকপ্রিয়তা নিয়ে প্রদর্শিত হয়। পরবর্তীতে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কাতার ও দুবাইসহ বেশকটি দেশে। সব জায়গাই অনন্তর জয়জয়কার। তার পরবর্তী চলচ্চিত্র ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’ গত ১৭ মে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সবচেয়ে বড় স্ক্রিন অলিম্পিয়া ওয়ানে প্রদর্শিত ও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তবে ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’র সবচেয়ে বড় অর্জন হলো- আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা আইএমডিবি রেটিংয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করে নেওয়া। বহুল আলোচিত এই রেটিংয়ে বাংলাদেশি কোনো চলচ্চিত্র প্রথমবারের মতো স্থান পেল। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন অনন্ত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের জন্য গর্ব।
এতকিছু সত্ত্বেও চলচ্চিত্র জগতে অনন্তর পথচলা মসৃণ নয়। ঈর্ষাকাতরদের ষড়যন্ত্রে পদে পদে তীরবিদ্ধ হতে হচ্ছে তাকে। তারপরেও এ সবকে তুচ্ছ করে দেশমাতৃকার উন্নয়নে বীরদর্পে এগিয়ে চলেছেন ঢালিউডের প্রাণপুরুষ এম এ জলিল অনন্ত। সঙ্গে অবশ্যই রয়েছেন তার সহধর্মিণী অভিনেত্রী বর্ষা। এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, নিজের মাটির সন্তানের প্রতি এমন নিষ্ঠুর হাসি-ঠাট্টা হয়তোবা আরও বড় সংকটের প্রতিচ্ছবি। আমার কেন যেন মনে হয়, তরুণদের মধ্যে ভয়াবহ একটি শ্রদ্ধাহীন অংশের বিকাশ হচ্ছে এ দেশে। তাদের সামনে কোনো আইডল নেই, শ্রদ্ধা করার মতো কোনো মানুষ নেই। তাদের দোষ দেই না। তাদের সামনে দেশের বরেণ্য মানুষকে নিরন্তর গালাগাল করে এ পরিস্থিতি তৈরি করেছি আমরা বয়োজেষ্ঠরাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৬:১৭:৫৩ ৪৪১ বার পঠিত