বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বলিউডের প্রয়াত অভিনেত্রী জিয়া খানকে হত্যার অভিযোগে বোম্বে উচ্চ আদালতে মামলা করেছেন তাঁর মা রাবেয়া আমিন। মেয়েকে হত্যার পর আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। সম্প্রতি এক খবরে ওয়ান ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মামলার অভিযোগে জিয়া খানের মৃত্যু যে আত্মহত্যা নয়, তার ১০টি কারণও উল্লেখ করেছেন অভিনেত্রী রাবেয়া আমিন।
প্রথমত, কেউ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে সাধারণত তার জিহ্বা বের হয়ে আসে। কিন্তু জিয়ার ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। দ্বিতীয়ত, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলে মৃত ব্যক্তির গলায় যে ধরনের দাগ দেখা যায়, জিয়ার গলায় সে ধরনের দাগ দেখা যায়নি। তৃতীয়ত, জিয়ার গলায় যে দাগ দেখা গেছে তা কোনোভাবেই ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যাকারীর গলার দাগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
চতুর্থ কারণ হিসেবে রাবেয়া উল্লেখ করেছেন, মৃত্যুর পর জিয়ার ঠোঁটের ডান পাশে এবং বাম হাতের কবজিতে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটা দেখে মনে হয়েছে, কেউ তাঁকে শক্ত করে জাপটে ধরেছিল। পরের কারণটি আরও ভয়াবহ। যে ঘর থেকে জিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তার পাশের ঘরে জমাট বাঁধা রক্ত খুঁজে পেয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন রাবেয়া। ওই জমাট বাঁধা রক্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
ষষ্ঠ কারণ হিসেবে রাবেয়া উল্লেখ করেছেন, গলায় পাতলা মসলিন কাপড়ের ওড়না পেঁচিয়ে জিয়া আত্মহত্যা করেছেন বলা হলেও, তাঁর গলার দাগের গভীরতা অনেক বেশি। মসলিন কাপড়ের মতো পাতলা কোনো বস্তু কোনোভাবেই এমন গভীর দাগ সৃষ্টি করতে পারে না। রাবেয়া আরও দাবি করেছেন, টুল বা চৌকির ওপর না দাঁড়িয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস লাগানো সম্ভব নয়। কিন্তু সিলিং ফ্যান ছোঁয়ার জন্য দাঁড়ানোর মতো উঁচু কোনো বস্তুই নেই তাঁদের বাসায়।
অষ্টম কারণ হিসেবে রাবেয়া জানান, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, মৃত্যুর কয়েক মিনিট আগে বাসায় ঢোকার সময় জিয়ার পরনে ছিল ট্র্যাকস্যুট। কিন্তু রাতের পোশাক পরা অবস্থায় তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আত্মহত্যা করার আগ মুহূর্তে কেউ পোশাক পরিবর্তন করবে, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। রাবেয়া আরও দাবি করেছেন, তিনি জিয়ার মৃত্যুর সব আলামত তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। কিন্তু সেসব আলামত যাচাইয়ে কোনো রকম গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।
সব শেষে রাবেয়া উল্লেখ করেছেন, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের দ্বিতীয় তলায় তাঁদের ফ্ল্যাট। হত্যাকারীরা বেডরুমের জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে থাকতে পারে। কারণ, অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের প্রবেশপথের ওপরই একটি কার্নিশ আছে। সেই কার্নিশ বেয়ে খুব সহজেই জানালা দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করা সম্ভব।
জিয়ার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড দাবি করে রাবেয়া আমিন মামলাটি করেছেন ১ অক্টোবর। পুলিশের তদন্ত প্রশ্নবিদ্ধ ও একপেশে উল্লেখ করে রাবেয়া দাবি করেছেন, প্রভাব খাটিয়ে সুরজের পক্ষে তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করানো হয়েছে পুলিশকে দিয়ে। এ জন্য নিরপেক্ষ তদন্তের আবেদন জানিয়েছেন রাবেয়া। তিনি চান, এবার যেন তদন্তের দায়িত্ব নেয় ভারতের সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ জুন মুম্বাইয়ের জুহুতে নিজ বাসা থেকে জিয়া খানের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। কয়েক দিন পর প্রেমিক সুরজ পাঞ্চোলিকে দায়ী করে জিয়ার লেখা সুইসাইড নোট খুঁজে পান তাঁর বোন। পরে সেটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন জিয়ার মা রাবেয়া আমিন। এর দুদিন পর জিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারায় সুরজকে গ্রেপ্তার করে মুম্বাই পুলিশ। কিছুদিন জেলের চার দেয়ালে বন্দী থাকার পর জামিনে মুক্তি পান বলিউডের প্রভাবশালী ও বিতর্কিত অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সুরজ।
জিয়া খান শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম অভিনয় করেছিলেন ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দিল সে’ ছবিতে। এরপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে ২০০৭ সালে অভিনয় করেন রাম গোপাল ভার্মার ‘নিঃশব্দ’ ছবিতে। ছবিটিতে অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন জিয়া। পরে অভিনয় করেন ‘গজনি’ (২০০৮) ও ‘হাউসফুল’ (২০১০) ছবিতে। ২৫ বছর বয়সী জিয়া খানের বেড়ে ওঠা যুক্তরাজ্যে। এ বছর মা রাবেয়া আমিনের সঙ্গে যুক্তরাজ্য থেকে মুম্বাইয়ে চলে যান তিনি। থাকতেন জুহু বিচ-সংলগ্ন সাগর সংগীত নামের একটি অ্যাপার্টমেন্টে।
যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও বলিউডে ডুবন্ত ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক দিন থেকেই হতাশায় ভুগছিলেন জিয়া খান। গত বছরও একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কবজির রগ কেটে মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করলেও, সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন বলিউডের উঠতি এ অভিনেত্রী।
গত ৩ জুন মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে জিয়া সর্বশেষ ফোনে কথা বলেছিলেন সুরজের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছিল। এমনকি জীবনের শেষ চিঠিতে প্রেমিক সুরজের বিষয়ে নানা গুরুতর অভিযোগ করে গেছেন জিয়া। সেগুলোর মধ্যে প্রতারণা, ধর্ষণ ও গর্ভপাতের মতো বিষয়ও ছিল। জিয়ার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বয়সে ২০ বছরের বড় এক নারীর সঙ্গে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন সুরজ। পাঞ্চোলি পরিবারে গয়না সরবরাহ করতেন ওই নারী। সুরজের অনেক অত্যাচার মুখ বুজে সইলেও প্রেমিকের কাছ থেকে প্রতারণার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি জিয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:৪৯:৫২ ৬১১ বার পঠিত