জাবি প্রতিনিধি,
বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে কথা বলা হয়েছে যে, জাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা বড় ধরনের কোনো অন্যায়ের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে উপাচার্যের কিছু আচরণে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। আর ক্ষোভ থেকেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। চলমান সমস্যার সমাধান করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।
তদন্ত প্রতিবেদনে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
কমিশন তদন্ত শেষে গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার প্রতিবেদনটি খুলেছে।
মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, প্রতিবেদনটি খোলার পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী ও শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মন্ত্রীর কক্ষে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন।
তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই শিক্ষকদের একাংশ আন্দোলন শুরু করায় বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘প্রতিবেদনটি পেয়েছি। এর ভিত্তিতে এখন করণীয় ঠিক করা হবে। তবে শিক্ষকদের উদ্দেশে বলব, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই এই তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেই তাঁরা আবার আন্দোলন শুরু করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। আমরা আশা করব, শিক্ষকেরা তাঁদের আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করবেন না।’
কমিশনের আহ্বায়ক ইউজিসির সদস্য এম মুহিবুর রহমান বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
তদন্ত কমিশন বলেছে, যে কোনো ভাবেই হোক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে হবে। ক্লাস-পরীক্ষা চালাতে হবে। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে উপাচার্যকেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, তাঁদের জন্য একটি আচরণ নীতিমালা তৈরি করতে এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের একপর্যায়ে গত ২ সেপ্টেম্বর মহিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের একাংশের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনকে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে ১০ কর্মদিবস সময় বাড়ানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষকেরা এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও উপ-রেজিস্ট্রারকেও অবরুদ্ধ করে রেখেছেন। এর বিপরীতে উপাচার্যও পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
এর আগে শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্য আনোয়ার হোসেনের পদত্যাগের দাবিতে তাঁকে ৮৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর বাসভবনে বৈঠক করেন। সেখানে তদন্ত কমিশন গঠনের আশ্বাস দেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সংসদে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনটি কিছুটা রাজনৈতিক এবং কিছুটা ব্যক্তিগত বলেই প্রতীয়মান হয়। সহকর্মীকে ঘেরাও করে দাবি আদায়ের সংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষকদের আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪:১৪:২৫ ৪৫৮ বার পঠিত