বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ শনিবার ভেড়ামারায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র উদ্বোধনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং রামপালে যৌথ উদ্যোগের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিস্থাপন করেন।শেখ হাসিনার সঙ্গে ভেড়ামারার অনুষ্ঠানে ছিলেন ভারতের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ। নয়া দিল্লি থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যোগ দেন মনমোহন সিং।
২০১০ সালে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি হচ্ছে।
শনিবার উদ্বোধনের দিন থেকে ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। নভেম্বর নাগাদ ভারতের পাওয়ার ট্রেডিং কোম্পানির কাছ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎই পাওয়া যাবে বলে বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা আশা করছেন।
চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে পুরো বিদ্যুৎ আমদানি হলে দেশে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ অনেকটাই লাঘব হবে বলে মনে করেছেন তারা। আমদানি করা এই বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের দাম পড়বে সর্বোচ্চ ৬ টাকা।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসনে তার সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগের পুনরায় ক্ষমতায় থাকার ওপর জোর দেন।
“বিগত নির্বাচনী ইশতেহারে আমরা বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমাদের দায়িত্বের শেষপ্রান্তে এসে আজ আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, আমরা সে প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।”
“আপনাদের সাহায্য-সমর্থন পেলে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমরা বাংলাদেশকে একটি ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।”
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নেয়ার সময় দৈনিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩২০০ মেগাওয়াট ছিল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখন দিনে ৬ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা উৎপাদনের মহাপরিকল্পনান কথা জানিয়ে তিনি বলেন, গত সাড়ে চার বছরে ৫৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৩টি কেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ১৯টির দরপত্র ডাকা হচ্ছে।
বিতরণ ব্যবস্থার উন্নতিতে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন এবং ৩ লাখ কিলোমিটার বিতরণ লাইন স্থাপনের উল্লেখও করেন প্রধানমন্ত্রী।
“প্রায় ৩৪ লাখ নতুন গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমিয়ে আমরা রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করেছি।”
গ্যাসের মজুদ সীমিত বলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে সরকার মনোযোগ দিয়েছে বলে শেখ হাসিনা জানান। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশের ক্ষতি এড়ানোর দিকে নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে এগিয়ে আসায় ভারতকে ধন্যবাদ জানানোর সঙ্গে স্বাধীনতা অর্জনে প্রতিবেশী দেশটির সহযোগিতার কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন শেখ হাসিনা। দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক প্রসারের ওপর জোর দেন তিনি।
শিল্পায়নের মূল উপাদান হিসেবে বিদ্যুতের প্রাপ্তি বাড়াতে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
তিনি বলেন, আগামীতে মিয়ানমার, নেপাল এবং ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগও রয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ভেড়ামারায় বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ভারতের অংশে ৭৪ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে প্রায় ২৭ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে ৪০০ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র।
৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনার জন্য এই উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এর দ্বিগুণ বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রটির চালুর মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো সুদৃঢ় হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্যে মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে তার দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনায় অংশীদার থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুষ্ঠানে ভারতের বিদ্যুৎমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেন, “দুই দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের জন্য ভারত, নেপাল ও ভুটান একসাথে কাজ করতে পারে।”
এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করে সব ধর্মের মানুষের সহাবস্থানের উদাহরণও তুলে ধরেন কাশ্মিরের এই নেতা।
“দুর্গা পূজা আর ঈদ আসছে। এই দুই উৎসবের জন্য আমি আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। আমাদের চারদিকে সন্ত্রাস। এটা বন্ধ করতে হবে। সৃষ্টিকর্তা সকলের জন্য। ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, এমনকি যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না, তাদের জন্যও।”
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, তথ্যমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ সরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ারুল হক। এরপর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানের পর শেখ হাসিনা উপকেন্দ্র এবং এর সুইচ রুম পরিদর্শন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭:১৮:৩৮ ৪৮৭ বার পঠিত