বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ শুভ মহালয়ায় শুক্রবার শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আবাহণের মাধ্যমে দেবীর শুভাগমনের আনুষ্ঠানিক প্রতীক্ষাও শুরু হয়েছে এদিনই। দেশের বিভিন্ন মন্দিরে-মণ্ডপে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বইতে শুরু করেছে। দুর্গাপূজার বাজনা বেজে উঠেছে সারা দেশে। দুর্গাপূজার দিন গণনা এই মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হয়। সারা দেশের পূজামণ্ডপে শুক্রবার ভোর ৬টায় মহালয়ার ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে দেবীপক্ষ। এ সময় পিতৃতর্পণ ও চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবীকে আবাহন করেন হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা। পূজার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্গাপূজার দিন গণনাও শুরু করেছেন শুভ মহালয়ার মাধ্যমে। আগামী বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু হচ্ছে। মহালয়া উপলক্ষে শুক্রবার ভোর ছয়টা থেকে মহানগর সার্বজনীন পূজা পরিষদের উদ্যোগে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে চণ্ডীপাঠসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মন্দিরের পুকুরে চলে পিতৃতর্পণ। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে ছায়ানট। মন্দির থেকে তা সরাসরি সম্প্রচার করে দেশ টিভি। দেবী দুর্গার আগমনী উপলক্ষে দিনটি উদযাপন করতে বনানী মাঠে দেবীবরণের আয়োজন করে গুলশান-বনানী সর্বজনীন পূজা পরিষদ। ভোর সাড়ে পাঁচটায় চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। চণ্ডী পাঠ করেন প্রমোদ দত্ত। সংগীত পরিবেশন করেন বুলবুল মহলানবীশ, ছন্দা চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা গোপ, অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত, আল্পনা রায় ও সুস্মিতা সেন, সুমনা বর্ধন, বিমান বিশ্বাস, বিপাশা গুহঠাকুরতা, সোহানী মিত্র, সঞ্জয় কবিরাজ, মৃদুলা সমদ্দার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কানুতোষ মজুমদার, শুভেচ্ছা জানান সুকুমার চৌধুরী। অনুষ্ঠানটির গ্রন্থনা ও পরিকল্পনা করেন মনোজ সেনগুপ্ত। বনানী মাঠ থেকে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে এটিএন বাংলা, চ্যানেল আই ও বৈশাখী টিভি।
এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দির, মিরপুর কেন্দ্রীয় মন্দির, কলাবাগান পূজামণ্ডপসহ বিভিন্ন মণ্ডপে ভোরে চণ্ডীপাঠ এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দশভূজা শক্তিরূপী মা দুর্গা মর্ত্যে অবস্থান করবেন মোট ৫ দিন। সে লক্ষ্যে দেশজুড়ে প্রতিটি মণ্ডপেও ভোর থেকে চণ্ডীপাঠ আর অমাবশ্যায় হৃদয়ে নাচন তুলে ঢাকে পড়েছে কাঠি। দেবী দুর্গার আগমনে বিভিন্ন মণ্ডপে ধূপের ধোঁয়ায় ঢাক-ঢোলক, কাঁসর, মন্দিরের চারপাশে পুরোহিতের ভক্তিকণ্ঠে ‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা-নমন্তৈস্য নমন্তৈস্য নমোঃ নমোঃ’ মন্ত্র উচ্চারণের ভেতর দিয়ে উদযাপিত হয়েছে মহালয়া। চণ্ডীপাঠের মাধ্যমে দেবী দুর্গার সৃষ্টি রহস্য জানার মধ্য দিয়ে দেবীর আবাহন ‘মহালয়া’ হিসেবে পরিচিত। শাস্ত্রীয় বিধান মতে, মহালয়ার অর্থ হচ্ছে মহান আলোয় দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে আবাহন। দুটি পক্ষ রয়েছে- একটি হলো পিতৃপক্ষ, অন্যটি দেবীপক্ষ। অমাবস্যা তিথিতে পিতৃপক্ষের শেষ হয়, আর প্রতিপদ তিথিতে শুরু হয় দেবীপক্ষের। মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়েছে সেই দেবীপক্ষ। ধর্মমতে, এই দিনে দেব-দেবীরা দুর্গাপূজার জন্য নিজেদের জাগ্রত করেন। আগামী ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির এই শারদোৎসব। ৫ দিনের উৎসব চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। আর ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার পুজোমণ্ডপে এখন চলছে প্রস্তুতিমূলক নানা আয়োজন। শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে এখন নানা আয়োজনে ব্যস্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। দেবীর প্রতিমা নির্মাণ প্রায় শেষ। এখন মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমার সাজসজ্জা ও প্যান্ডেল স্থাপনসহ নানা কাজ।
এখন চলছে মা দুর্গার লাল টুকটুকে বেনারসি শাড়ির জরির কাজ, গণেশের ধুতিতে নকশাদার পাড় বসানো, আর মহিষাসুরের জমকালো পোশাক তৈরির কাজ।
কামারপাড়া থেকে বানিয়ে আনা হাতের চক্র, গদা, তীর-ধনুক ও খর্ব-ত্রিশূল দিয়ে সাজানো হচ্ছে দেবীকে। আর ঘষা-মাজায় মিস্ত্রিরা ব্যস্ত মণ্ডপগুলোকে নতুন করে তুলতে। আয়োজকদের ফরমায়েশ ও ডিজাইন অনুযায়ী গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন অস্থায়ী পূজামণ্ডপ গড়ে তুলছেন ডেকোরেটর কর্মীরাও। মহালয়ার ঠিক ছয় দিনের মাথায় ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীতে মা দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রথম দিন পূজামণ্ডপে সকাল ১০টা ৫৯ মিনিটে ষষ্ঠ্যাদি কল্পালম্ভ, সায়ংকালে বেদীর বোধন (পঞ্জিকার লগ্ন অনুযায়ী প্রতিমা স্থাপনে বেদী প্রতিষ্ঠা), আমন্ত্রণ ও অধিবাস, সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীত পরিবেশন করা হবে।
১১ অক্টোবর সপ্তমী, ১২ অক্টোবর মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা, ১৩ অক্টোবর মহানবমী এবং ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুর্গোৎসব।
পঞ্জিকা মতে, এ বছর দূর কৈলাশের স্বামীগৃহ থেকে এবার দেবী আসছেন (আগমন) দোলায় চড়ে, যার ফল হচ্ছে মড়ক। তবে সনাতন বিশ্বাস মতে, দেবী তার অশেষ কৃপায় সবাইকে রক্ষা করেন। আর বিদায় নেবেন গজে (হাতিতে) চড়ে। যার ফল হচ্ছে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হবে। এখানে সারা দেশের দুর্গাপূজা-সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা জানানো যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৪৫:৪৪ ৪০৫ বার পঠিত