বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দোকান সিলগালা, গ্রেপ্তার ও জরিমানার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা দেশে সব ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা।পুরান ঢাকার মিটফোর্ড ও বাবুবাজারের প্রায় আড়াই হাজার দোকান দুদিন ধরে বন্ধ রাখার পর সোমবার বাংলাদেশ কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কার্যালয়ে ওষুধ ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সমিতির উপ সচিব মনিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের হয়রানির প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। সারাদেশে ওষুধ ব্যবসায়ীরা এ কর্মসূচি পালন করবেন।”
এদিকে বন্ধ দোকান খুলে দেয়া এবং গ্রেপ্তার দোকানিদের মুক্তির দাবিতে সোমবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন মিটফোর্ড ও বাবুবাজার এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তারা ওই এলাকা প্রদক্ষিণ করেন।
মিটফোর্ডের জামান সার্জিকেলের মালিক মো. সাব্বির হোসেন বলেন, “স্বচ্ছভাবে ব্যবসা করলেও আমাদের অনেক দোকানিকে হয়রানিমূলকভাবে জরিমানা করা হয়েছে। অথচ আমদানি নিষিদ্ধ ও অবৈধ ওষুধ যারা আমদানি করে তাদের কিছুই হয়নি।”
গত শনিবার মিটফোর্ড-বাবুবাজারের সমিতি মার্কেট, ইউসুফ মার্কেট, আলী মার্কেট, নায়না মার্কেট, খান মার্কেট, নুরপুর মার্কেট, ঢাকা মার্কেট ও সুরেশ্বর মার্কেটে অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ও অবৈধ ওষুধ জব্দ করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ২৮টি ওষুধের দোকান সিলগালা এবং এক কোটি ২৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় ৯৪ জনকে।
মিডফোর্ট ও বাবুবাজার এলাকায় প্রায় ১৫টি ওষুধের মার্কেটে আড়াই হাজারের বেশি দোকান রয়েছে।
রোববার সকালে ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করার পর দুপুরে স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠকে সমঝোতার মাধ্যমে সিলগালা দোকান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা কার্যকর হয়নি।
শুধু বন্ধ দোকান খুলে দেয়া নয়, গ্রেপ্তারদের মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে চান ব্যবসায়ীরা।
এদিকে দেশে পাইকারি ওষুধের সবচেয়ে বড় এই বাজার দুই দিন ধরে বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও ক্রেতারা। চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলেও মিটফোর্ড হাসপাতালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক জাকির হাসান বলেন, “আশপাশের সব ওষুধের দোকান এমনকি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যে ফার্মেসি ছিল সেটিও গতকাল থেকে বন্ধ। চিকিৎসা কার্যক্রমে কিছুটা প্রভাব পড়ছে।”
রোববার দুপুরে কামরাঙ্গীরচর এলাকায় বাড়ির সামনে পায়ের ওপর দিয়ে রিকশা উঠে যাওয়ায় মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে শিশু ময়না (৯)। তার ডান পা অনেকটা থেতলে গেছে।
হাসপাতালে প্রাথমিক সেবা দিয়ে এক্সরে করাতে বলেন চিকিৎসকরা। তাকে দেয়া হয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের পরামর্শ।
ময়নার চাচা মেজবাউল হক (২৫) বলেন, “হাসপাতালের সামনের সব ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছি। রোগীকে সামলাব, নাকি দূরে কোথাও গিয়ে ওষুধ কিনব সেটাই ভাবছি।”
এ হাসপাতালে ভর্তি রোখসানা বেগমের স্বামী দেলোয়ার হোসেন বলেন, “কয়েকদিন আগে স্ত্রীর ডেলিভারি হয়েছে। এতোদিন হাসপাতালের সামনে থেকেই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কিনতাম। কিন্তু সব ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় ওর জন্য সেলাইন কিনতে গিয়ে ঝামেলায় পড়েছি।”
বাংলাদেশ সময়: ২২:২৫:৫৮ ৪৫৪ বার পঠিত