বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে মঙ্গলবার।হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো ২৩টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
এটিএম ফজলে কবীর নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করে দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৪ অগাস্ট যুক্ততর্কের শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়েছিল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় এটি হবে সপ্তম রায়। এই প্রথম বিএনপির কোনো নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার রায় হতে যাচ্ছে।
২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এরপর গত বছরের ৪ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তার বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের ৬টি রায়ে জামায়াতের সাবেক ও বর্তমান ছয় নেতাকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ডাদেশ দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাত্তরে রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। স্বাধীনতার পর এ নিয়ে মামলাও হয়। এছাড়া ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে।
২০১০ সালের ২৬ জুলাই তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। গাড়ি পুড়িয়ে যাত্রী হত্যার এক মামলায় ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর এ সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ১৯ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগেও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ২০১১ সালের ৪ অক্টোবর সংসদ সদস্য সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। এরপর গত বছর এপ্রিলে আদালত তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলে সাক্ষাগ্রহণ শুরু হয়।
এ মামলায় সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন। অন্য তিনজন হলেন তার কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু নিজাম আহমেদ, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কাইয়ুম রেজা চৌধুরী এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোমেন চৌধুরী।
আর সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ প্রসিকিউশনের মোট ৪১ জন সাক্ষী। আরো চারজন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে ট্রাইব্যুনাল।
এর আগে যুদ্ধাপরাধের ছয়টি মামলার রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে প্রথম রায়ে জামায়াতের সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ আসে।
দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন হলেও আপিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট তাকে প্রাণদণ্ড দেয়।
তৃতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী এবং চতুর্থ রায়ে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। আর মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াত আমীর গোলাম আযমকে মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও উস্কানির দায়ে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।
সর্বশেষ ১৭ জুলাই জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:১৫:৩৫ ৩৬৯ বার পঠিত