বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
পাঁচ দিন অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হওয়ার পর আবারও অবরুদ্ধ হলেন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী। এবার তাঁকে অবরুদ্ধ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে তাঁরা উপাচার্যের কক্ষের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেছেন।
উপাচার্য বলেছেন, তিনি আর পারছেন না। তিনি আর চাকরি করবেন কি না, তা ঠিক করতে তিনি সরকারের ‘উচ্চ পর্যায়ে’ কথা বলবেন।
আগামীকাল সোমবার শিক্ষকদের দুই মাসের বকেয়া বেতন দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর গতকাল শনিবার গভীর রাতে উপাচার্য মুক্ত হন। কিন্তু আজ রোববার বিকেলে আবার তাঁকে অবরুদ্ধ করা হয়।
অবরুদ্ধ অবস্থায় মুঠোফোনে উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী জানান, তিনি দাপ্তরিক কার্যালয়ে শিক্ষকদের বকেয়া বেতন প্রদানসংক্রান্ত কাজ করছিলেন। কাজ শেষে সন্ধ্যার দিকে নিচে নেমে বের হওয়ার সময় তিনি প্রধান ফটকে তালা দেখেন। পরে তিনি আবারও কক্ষে ফিরে যান।
উপাচার্য বলেন, ‘চাকরি করব কি না, সে ব্যাপারে আমি সরকারের উচ্চপর্যায়ে গিয়ে কথা বলব। গত পরশু দিন স্ত্রীকে ঢাকায় চলে যেতে বলেছি। ছয় দিন ধরে আমার পরনে একই কাপড়। আমার ডায়াবেটিস। আমার শরীরের অবস্থা ভালো না।’
অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয়ে তিনি কীভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন, জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছি আমাকে উদ্ধার করে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। আমি আর পারছি না। এখন সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।’
কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। কেন আবার উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁরা ৩৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩৬ জন শিক্ষকের দুই মাসের বকেয়া বেতন আগামীকাল দেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত হবেন। এ কারণে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে তাঁরা আবার উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, উপাচার্য যদি চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দেন তাহলে তাঁরা সরে যাবেন।
তবে উপাচার্য জানান, এই মুহূর্তে চাকরি স্থায়ীকরণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না।
গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও সাধারণ শিক্ষকেরা পৃথক ব্যানারে উপাচার্যের কক্ষের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘট ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন। সেদিন থেকেই নিজের কক্ষে অবরুদ্ধ ছিলেন উপাচার্য। পরে গতকাল শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সভা চলে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, আগামীকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর চার মাসের বকেয়া বেতনের মধ্যে দুই মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত জানার পর প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষকদের একাংশ উপাচার্যের কক্ষের সামনে থেকে তাদের অবস্থান ধর্মঘট স্থগিত ঘোষণা করে। এর আগে গত শুক্রবার দুপুরে সাধারণ শিক্ষকেরা উপাচার্যের কক্ষের সামনে তাঁদের অবস্থান ধর্মঘট ও আমরণ অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেন।
আন্দোলনরত প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিভাগের ডিন ফরিদ-উল-ইসলাম বলেন, ‘আপাতত দুই মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা দেওয়ার আশ্বাস পেয়ে আমরা আমাদের ধর্মঘট স্থগিত করেছি।’
মুক্ত হওয়ার পরে আজ রোববার সকালে উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী মুঠোফোনে জানান, সিন্ডিকেটের সভা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে কথা হওয়ার পর আগামীকাল সোমবার বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এ ছাড়া সিন্ডিকেটের সভায় অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়া ৭৬ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ইউজিসির বেতনভুক্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা হলো ৩৩৬। তবে পরে আবার তাঁকে বিকেলে অবরুদ্ধ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০:৫০:৫৭ ৫০২ বার পঠিত