বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
রাজধানীর চামেলীবাগে পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর (রাজনৈতিক) মাহফুজুর রহমান ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া আসাদুজ্জামান জনিকে ঘিরে নতুন রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর মামলার তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। জনি ওই দম্পতির মেয়ে ঐশীর বন্ধু।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির জয়েন্ট কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, পুলিশ দম্পতির মেয়ে ঐশী রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনি পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। হত্যাকাণ্ডের পর ঐশীকে আশ্রয় দেয় জনি। জনির পরিকল্পনা ছিলো ঐশীকে দুবাই পাঠিয়ে দেয়া। তবে সে কী স্বার্থে এসব করেছে সে বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছুই জানাননি গোয়েন্দারা।
বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা থানার ডিআইডি প্রজেক্টের ৯ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাসা থেকে অভিযান চালিয়ে জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় জনিকে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে হাজির করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপ পুলিশ কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম মাতব্বর, ডিএমপির (মিডিয়া) উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান, ডিবির অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোখলেছুর রহমান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা-মাকে হত্যায় ঐশীকে ইন্ধন দেয় জনি। জনির প্ররোচণায় পড়ে ঐশী তার বাবা-মাকে হত্যা করে।’
আত্মসমর্পনের পর গোয়েন্দা হেফাজতে জনি সর্ম্পকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলো ঐশী। এছাড়া গোয়েন্দারা নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করেও জনি সর্ম্পকে কিছু তথ্য পায়। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জনিকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয়া হলে জনি আত্মগোপন করে।
বুধবার রাতে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার জুয়েল রানার নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মেরুল বাড্ডার একটি বাসা থেকে জনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জনি সম্পর্কে ঐশী যেসব তথ্য দিয়েছে, তার কিছু কিছু জনি গোয়েন্দাদের কাছে স্বীকার করেছে। অনেক তথ্য সে অস্বীকারও করেছে।
মনিরুল জানান, জনিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে হয়তো নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে।
গোয়েন্দাদের দাবি, বাবা-মাকে হত্যার আগে ঐশীকে বিদেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখানো হয়। হত্যাকাণ্ডের পর ঐশী রহমান জনির আশ্রয়ে গিয়ে বাবা-মাকে হত্যার ঘটনা জানায়। সবকিছু জানার পর জনি ঐশীকে দুবাই পাঠানোর উদ্দেশ্যে তার বন্ধু মিজানুর রহমান রনির (এ মামলায় গ্রেপ্তার অপর আসামি) মাধ্যমে উত্তর মুগদার মদিনাবাগ এলাকার একটি বাড়িতে আশ্রয় দেয়।
এর আগে ঐশী আদালতে দোষ স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের বর্ণনায় জনির নাম প্রকাশ করেছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডে জনি অংশ নিয়েছে কিনা জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হলে মনিরুল জানান, এখন পর্যন্ত জনি পুলিশ দম্পতি হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এ মামলায় আর কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আপাতত আর কাউকে গ্রেপ্তার করার দরকার নেই। তবে জনির কাছ থেকে কারো নাম পাওয়া গেলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’
তদন্ত শেষ হতে কতদিন লাগতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখনও বাকি রয়েছে। সেগুলো হাতে পেলে দ্রুত তদন্ত শেষ করা হবে। এ মামলায় ঐশীসহ সর্বমোট ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঐশী রহমান বাবা-মা হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত, জনি পরিকল্পনায় এবং রনি-সুমি পরোক্ষ সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত। এ মামলায় আর কাউকে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন নেই।
ঐশী রহমানকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোর করে আদালতে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে অভিযোগ এনে জবানবন্দী প্রত্যাহারে ঐশীর আইজীবী আদালতে আবেদন করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আদালতে জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন সর্ম্পকে এখনও তারা কিছু জানতে পারেননি। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়ার সময় সেখানে নিয়ম মেনে সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে নেওয়া হয়। এখানে ভয় দেখানোর কিছুই নেই।
জনি সম্পর্কে মনিরুল জানান, জনি মাদক ব্যবসায়ী ও সেবী। জনি নিজেকে ড্যান্স ডিরেক্টর হিসেবে ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের কাছে পরিচয় দিতো। এছাড়া বিদেশে অভিনেত্রী পাঠানোর কাজ করে বলেও পরিচয় দিতো। আর এভাবে সে ধনাঢ্য পরিবারের মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতো। ঐশীর সঙ্গেও সে এভাবে সম্পর্ক তৈরি করে। জনি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর সুলতানপুর গ্রামের জামালের ছেলে।
এদিকে এ হত্যা মামলা তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দিতে কতদিন সময় লাগবে, এমন এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল জানান, ভিসেরা রিপোর্ট, ডিএনএ রিপোর্ট ও সিআইডির রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর সবকিছু পর্যালোচনা করে এ মামলার তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে সময় নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, গত ১৬ আগস্ট শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর ২ চামেলিবাগের ছয়তলার ৫-বি ফ্ল্যাট থেকে মাহফুজ রহমান (৪৫) ও স্বপ্না রহমান (৪২) দম্পতির রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেয় পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ওই দম্পতির মেয়ে ঐশী, গৃহপরিচারিকা সুমি ও ঐশীর বন্ধু রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে ঐশী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে একাই জড়িত এবং নিজে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও পরে ওই জবানবন্দী প্রত্যাহারের আবেদন করে।
রিমান্ড শেষে সুমিকে গাজীপুর কিশোরী সংশোধনী কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে রনি দুই দফা রিমান্ড শেষে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১:৩৪:১৭ ৫৩৪ বার পঠিত