জাবি প্রতিনিধি, বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
দীর্ঘদিন ধরেই পরিবহন সংকট অসহনীয় মাত্রায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চলাফেরা করছেন ‘বাদুড় ঝোলা’ হয়ে। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এই চলাচল শিক্ষার্থীদের ওপর প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে।
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫ টি বিভাগ ও ৩ টি ইনস্টিটিউট মিলিয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। আবাসিক হল ১১ টি, শিক্ষার্থীদের বড়ো একটি অংশ থাকেন ক্যাম্পাসের বাইরে। অনেকেই ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া করেন। দৈনন্দিন কাজেও প্রতিদিন অনেককেই ঢাকা যেতে হয়।
ঢাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থী ও ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিছু বাসের ব্যবস্থা করে থাকে। এসব বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবহন ও বিআরটিসি থেকে মাসচুক্তিতে ভাড়ায় আনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ছুটির দিন ছাড়া অন্যান্য দিনে বিভিন্ন রুটে ২৩ টি বাস নিয়মিত আসা যাওয়া করে। তবে এসব বাসের অধিকাংশই শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীদের আনা-নেয়ায় ব্যস্ত। ১৪ টি ট্রিপই শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ, হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কপালে জুটেছে বাকি ৯ টি।
১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ২ টি রুটে সকালে ৩ টি ও ক্লাস শেষে ৩ টি বাস বরাদ্দ রয়েছে। উত্তরা রুটের বাসের ব্যাপারে কোন আপত্তি না থাকলেও ‘সোজা রুট’ বলে পরিচিত ক্যাম্পাস-ঢাকা রুটের বাসের ব্যাপারে অসন্তাষ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। সকালে এ বাসগুলো মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে যাত্রা শুরু করে ও দুপুরে একই গন্তব্যে এসে যাত্রা শেষ করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রায় সব শিক্ষার্থীকেই মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে আবার পাবলিক বাসে চড়ে বাসায় যেতে হয়।
অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, “মতিঝিল বা শাহবাগ থেকে বাইরের বাসে চড়ে মানিক মিয়া এভিনিউ গিয়ে বাস পাল্টানোর চেয়ে একই বাসে করে ক্যাম্পাসে চলে আসাটাই অধিক শ্রেয়”।
আসছে অক্টোবরের পরই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী থাকবে না অজুহাতে এসব রুটের বাস বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে বিদ্যমান পরিবহন সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
এছাড়া বিকেল ৫ টায় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসের ব্যাপারেও অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীরা জানান, “বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা দোতলা বাসগুলো গাবতলী বা কল্যাণপুরে পৌঁছে হঠাৎ ‘বিকল’ হয়ে পড়ে।” প্রতিনিয়ত এমন কেন হবে, প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের।
২০১০ সাল পর্যন্ত মিরপুরের শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও অর্থ সংকট দেখিয়ে পরবর্তীতে তা বাতিল করা হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন জানানো হলে প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের ‘আশ্বাস’ দেয়া হয়, যা আর বাস্তবায়িত হয় না।
তবে পুরনো বাস, চালক সংকট ও প্রশাসনিক জটিলতাকেই এ সমস্যার প্রধান বলে মনে করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি জানান,”পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তরাও বর্তমানে বাসের চালক হয়ে গেছেন। এদের হিসেব করেই মোট ২৭ জন চালক কর্মরত, খালি রয়েছে আরো ৫টি চালকের পদ। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কয়েকজন বিআরটিএ-র লাইসেন্স পেলেও কয়েকজন লাইসেন্স ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।”
এছাড়া প্রতিদিন আদায়কৃত বাস ভাড়া নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে অডিট শাখার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে গত এক দশকে এ খাত থেকে প্রায় অর্ধ-কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। এর সাথে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাসের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি শিক্ষার্থীদের, তবে পরিবহন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক খায়রুল বশর বলেন, “পরিবহন খাতে কোন সংকট দেখতে পাই না আমি। যতটুকু সংকট আছে তা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি”। পরিবহন সংখ্যা বাড়ানো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এভাবে প্রতিবছর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ করে পরিবহন সেবা দেয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই”।
বাংলাদেশ সময়: ০:৫৫:৪২ ৫৪৮ বার পঠিত