বঙ্গ-নিউজ ডটকম: পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়টি নতুন করে উঠে এসেছে আলোচনায়। এ নিয়ে সরব আন্তর্জাতিক মিডিয়াও। বাংলাদেশী কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার কারণে অভিযুক্ত হয়েছেন এসএনসি-লাভালিনের সিনিয়র নির্বাহী কেভিন ওয়ালেস। এ অভিযোগে মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শর্ত সাপেক্ষে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এরপরই নতুন করে এ দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। কেভিন ওয়ালেসকে অভিযুক্ত করেছে কানাডার পুলিশ। আদালতে হাজির হওয়ার পূর্বশর্তে তাকে আপাতত মুক্তি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তথ্যে বলা হচ্ছে, এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন আরও চারজন। তারা হলেন- কানাডার নাগরিক জুলফিকার আলী ভূঁইয়া, বাংলাদেশের আবুল হাসান চৌধুরী, এসএনসি-লাভালিনের সাবেক কর্মী রমেশ শাহ ও মোহাম্মদ ইসমাইল। ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট লিখেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পে বাংলাদেশী কর্মকর্তাকে ঘুষ দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন কানাডার বহুল আলোচিত নির্মাণ প্রকৌশল সংস্থা এসএনসি-লাভালিনের সিনিয়র নির্বাহী কর্মকর্তা কেভিন ওয়ালেস। আদালতে হাজির হওয়ার পূর্ব শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করছে রয়েল কানাডিয়ান মাউন্টেড পুলিশ (আরসিএমপি)। ওদিকে এসএনসি-লাভালিনকে ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বিশ্বব্যাংক। এর ফলে আগামী ১০ বছর বিশ্বব্যাংকের কোন নির্মাণ প্রকল্পের দরপত্রে অংশ নিতে পারবে না তারা। গতকাল কানাডার অনলাইন ফিন্যান্সিয়াল পোস্ট ও সিবিসি নিউজ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঘুষ দেয়ার দায়ে কেভিন ওয়ালেসের সঙ্গে আরও অভিযুক্ত হয়েছেন কানাডার নাগরিক জুলফিকার আলী ভূঁইয়া ও বাংলাদেশী আবুল হাসান চৌধুরী। এ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে আরও অভিযুক্ত হয়েছেন এসএনসি লাভালিনের সাবেক কর্মচারী রমেশ শাহ (৬২) ও মোহাম্মদ ইসমাইল (৫০)। আরসিএমপি’র সহকারী কমিশনার গিলস মিচাউদ বলেন, আরসিএমপি’র ন্যাশনাল ডিভিশন আন্তর্জাতিক দুর্নীতি তদন্ত করতে অনুমোদিত। এ ধরনের অপরাধের জন্য তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি আরও বলেন, অনেক দেশেই এখনও ব্যবসা করার জন্য ঘুষ গ্রহণ করা রীতিতে পরিণত হয়েছে। এতে নৈতিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন ওঠে। এতে সুশাসনকে খাটো করা হয়। স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়নকে নষ্ট করা হয়। এতে বলা হয়েছে, এসএনসি-লাভালিন গতকাল তাদের এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা বিশ্বব্যাংকের স্থগিতাদেশ মেনে নিয়েছে। এর ফলে আগামী এক দশক তারা বিশ্বব্যাংকের কোন নির্মাণ প্রকল্পে অংশ নেবে না। এসএনসি-লাভালিন গ্রুপের অঙ্গসংগঠন এসএনসি-লাভালিন ইন-করপোরেশনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। কি কারণে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করেনি বিশ্বব্যাংক। উল্লেখ্য, এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশের পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে দুর্নীতির যোগসাজশ রয়েছে বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সেতুর কাজ পাওয়া নিয়ে ঘুষ বিনিময়ের অভিযোগ এ প্রকল্পে কর্মরত থাকা দু’ বাংলাদেশীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্বব্যাংক। সিবিসি আরও লিখেছে, বিভিন্ন দেশে নির্মাণ প্রকল্পের কাজের কণ্ট্রাক্ট পাওয়ার জন্য এ কোম্পানি ঘুষ দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত। এ নিয়ে অনেক ঝামেলায় রয়েছে এসএনসি-লাভালিন। বিশেষ করে, তারা মুয়াম্মার গাদ্দাফির অধীনে লিবিয়ায় কাজ পাওয়া সহ উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে এ উপায়ে কাজ পেতে বেশি চেষ্টা করে। কিছুদিন আগে এ কোম্পানির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়েরে দুহাইমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, কানাডার মন্ট্রিলে ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে একটি সুপার হাসপাতাল নির্মাণের কন্ট্রাক্ট পেতে যে অবৈধ অর্থের লেনদেন হয় তার সঙ্গে তিনি জড়িত। গত মাসে এ কোম্পানির একজন শীর্ষ স্থানীয় নির্বাহী সন্দেহজনক এক রাজনৈতিক ডোনেশনের কথা স্বীকার করেন। তিনি চরবোনিউ কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় এ কথা স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১:৫২:০৯ ৪২১ বার পঠিত