বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
বৌদ্ধধর্মীয় অনুষ্ঠান সাধারণত পূর্ণিমাগুলোতেই হয়ে থাকে। কারণ তথাগত বুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি পূর্ণিমাতেই সংঘটিত হয়েছিল। নির্দিষ্ট বিহারে ভিুসঙ্ঘরা আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা পর্যন্ত অবস্থান করার নিয়ম। এ তিন মাস বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারাও উপোসথ শীল গ্রহণ করেন। মধুপূর্ণিমা বৌদ্ধদের কাছে ভাদ্রপূর্ণিমা নামেও পরিচিত। বুদ্ধ মোট পঁয়তাল্লিশ বর্ষব্রত পালন করেছিলেন। এর মধ্যে এক বর্ষবাস যাপন করেন পারলেয়্য নামক গভীর অরণ্যে। এ সময়ে বুদ্ধের মৈত্রী প্রভাবে অনেক বন্য প্রাণী পোষ মানে, যার মধ্যে পারলেয়্য নামক একটি বড় হাতি ছিল। এই হাতিই বুদ্ধের সেবাযতেœ ব্রতী ছিল। প্রতিদিন বুদ্ধকে দান করত বনের সুমিষ্ট ফল। অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে হাতিটি বুদ্ধের সেবা ও পূজা করত। এক বানর হাতিটির এই কাজ গাছের মগডাল থেকে দেখতে পেত। বানরের মনেও বুদ্ধকে কিছু দান করার অভিপ্রায় জাগ্রত হলো; কিন্তু হাতিটি বনের সব সুমিষ্ট ফলই বুদ্ধকে দান করতো। বানর ভীষণ চিন্তায় পড়ল, বুদ্ধকে কী দান করা যায় এ জন্য। বানরটি সশ্রদ্ধচিত্তে একটি মৌচাক এনে তথাগতের হাতে তুলে দিলো। বানরের দেয়া মৌচাকের মধু বুদ্ধ তৃপ্তিসহকারে পান করলেন। বানর তা দেখে আনন্দে গাছে গাছে লাফাতে শুরু করল। একপর্যায়ে গাছ থেকে নিচে পড়ে মারা গেল। একাগ্রচিত্তে মধু দান করার ফলে বানরটি মৃত্যুর পর স্বর্গে দেবপুত্র হিসেবে জন্ম নিলো। দিনটি ছিল ভাদ্রপূর্ণিমা তিথি। তখন থেকে এই পূর্ণিমা মধুপূর্ণিমা নামে অভিহিত। বৌদ্ধধর্মে কর্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দেয়া হয়েছে। সৎকর্ম দ্বারা মানুষ সবার প্রশংসা অর্জন করে। নিজের জীবনকে সুন্দর করে। মৃত্যুর পর স্বর্গে গমন করে। বানরটিও এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গৌতম বুদ্ধের সময়কাল হলো পাঁচ হাজার বছর। তার জীবদ্দশা থেকে এক হাজার বছর পর্যন্ত ধর্মের তেজ ছিল খুবই উজ্জ্বল। সে সময় ভিু-ভিুণী, উপাসক-উপাসিকারা সহজেই মার্গফল লাভ করতে পারতেন; কিন্তু দুই হাজার বছর পরে মার্গফল লাভকারীর সংখ্যা কমে যায়। বর্তমানে দুই হাজার পাঁচ শ’ সাঁইত্রিশ বুদ্ধাব্ধ। মার্গফল লাভকারীর সংখ্যা কমে এসেছে। আগামীতে আরো কমে যাবে। পাঁচ হাজার বছর পর যখন মার্গফল লাভকারী শূন্যে গিয়ে ঠেকবে, তখন বৌদ্ধধর্মেরও বিলুপ্তি ঘটবে। রূপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান স্কন্ধ বিরামহীনভাবে সত্ত্বগণ উৎপন্ন এবং দুঃখে নিপতিত হচ্ছে। এ দুঃখ থেকে কেউ মুক্তি পাচ্ছে না। পঞ্চ স্কন্ধ উৎপন্ন হলেই একদিন না একদিন বিলয় বা মৃত্যু অবধারিত। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র উপায় আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। যার কথা বলতে এসব বিষয়ের অবতারণা করছি তিনি হলেন দেবপুত্র মার। দেবপুত্রের আবাসস্থল হলো সপ্তম সুগতি বা পর নির্মিত বশবতী স্বর্গে তাকে ‘মার রাজা’ বলা হয়। দেবগণের মধ্যে খুবই শক্তিশালী ও মহাঋদ্ধিসম্পন্ন। তার কাজ হলো সত্ত্বদেরকে কামলোক থেকে নির্বাণ লাভ করতে না দেয়া। হিন্দুশাস্ত্র তাকে ‘শনি’ নামে আখ্যায়িত করেছে। ইসলাম ধর্ম ‘শয়তান’ নামে অভিহিত করেছে। সে সব সময় মানুষকে মুক্তির পথে বাধা দেয়। কেউ ভালো কাজ করুক, এটা তার পছন্দ নয়। পুণ্য কাজে মার বাধার সৃষ্টি করে থাকে। সম্রাট অশোকের সময় সমগ্র ভারতে ৮৪ হাজার বৌদ্ধবিহার নির্মাণ এবং বুদ্ধের ধাতু অস্থি চৈত্যে স্থাপন করা হয়। তার সাথে, কয়েক মাস ধরে বৌদ্ধ সঙ্গায়ন বা সম্মেলন হতে যাচ্ছে। দেবপুত্র মার এই মহাসম্মেলন পণ্ড করার মানসে উঠেপড়ে লাগল। মার শিলাবৃষ্টি ও প্রবল বেগে তুফানের সৃষ্টি করে। তাতে মহাপুণ্যকাজের ব্যাঘাত ঘটে। সে সময় যারা অর্হৎ ভিু ছিলেন, তারা বুঝতে পারলেন, মার তার ঋদ্ধির প্রভাবে সঙ্গায়ন বন্ধ করার জন্য বাধা সৃষ্টি করছে। মারের উপদ্রব বন্ধ করার জন্য ভিু সঙ্গরা ঋদ্ধিবান উপগুপ্ত মহাথেরকে অনুরোধ জানালেন। তিনি ঋদ্ধির প্রভাবে মারের উপদ্রব বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। উপগুপ্ত চিন্তা করলেন, মারকে যদি বন্দী করা না হয়, তাহলে সঙ্গায়ন বা মহাসম্মেলন বিঘিœত হতে পারে। ঋদ্ধির শক্তিবলে মারকে বন্দী করে পাহাড়ের গুহায় ফেলে রেখেছিলেন। সঙ্গায়ন বা মহাসম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। সম্মেলন শেষে যখন দেবপুত্র মার মুক্ত হলো তখন আক্ষেপ করে বলেছিল, স্বয়ং সম্যক সম্বুদ্ধকে কতই না কষ্ট দিয়েছি, তিনি আমাকে কোনো দিন এভাবে দুঃখ দেননি। আমার আয়ু সুদীর্ঘ অর্থাৎ কয়েক লাখ বছর। মানুষের আয়ু হলো সামান্য। ঋদ্ধিবান উপগুপ্ত কত দিন বেঁচে থাকবেন? আমার প্রতিপত্তি আপাতত স্থগিত রাখলাম।’ উপগুপ্ত মহাথের মারের এ উক্তি শুনে বললেন, বুদ্ধের ধর্মের আয়ু যত দিন থাকবে (পাঁচ হাজার বছর) তত দিন আমিও বেঁচে থাকব।’ সাথে সাথেই উপগুপ্ত মহাথের আয়ু সংস্কার বৃদ্ধি করলেন। তা দেখে নাগলোকের নাগরাজা ভাবলেন, মনুষ্যদের আয়ু অতি ক্ষীণ; নাগদের আয়ু দীর্ঘ। উপগুপ্ত মহাথেরকে স্মরণ করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অগ্রসর হওয়া উচিত। ধর্মীয় অনুষ্ঠান দ্বারা পুণ্য অর্জন সম্ভব। আজ উপাসক-উপাসিকারা সকালবেলা পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ করার আগে বুদ্ধকে উদ্দেশ করে পূজা দেয়া হবে। পূজার প্রধান আকর্ষণ হবে ‘মধু’। ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা হবে প্রত্যেক বিহারে। উপাসক-উপাসিকারা সারা দিন ধর্মীয় সাধনায় রত থাকবেন। সন্ধ্যায় সমবেত বন্দনা এবং বিহার আলোকসজ্জা করা হবে। ‘সব্বে সত্তা সুখিতা হন্ত’। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক। বাংলাদেশ লাভ করুক সমৃদ্ধি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৫১:৪২ ১১৬০ বার পঠিত