বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ
নোবেলজয়ী বরেণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, কারো ইচ্ছার ওপর দেশের ভবিষ্যত্ নির্ভর করে না। আগামী নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেছেন, প্রয়োজনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন জোর করে আদায় করতে হবে।
গতকাল এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা নির্বাচন চাই, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং সেই নির্বাচন হতে হবে সব দলের অংশগ্রহণে। দেশের মানুষ চাইলে এটা কেউ না দিয়ে যেতে পারবে না। জোর করে দাবি আদায় করতে হবে।’
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা গণপরিষদ গতকাল বিকেলে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ড. ইউনূসের সম্মানে এই সংবর্ধনার আয়োজন করে।
ড. ইউনূস বলেন, ‘কারো ইচ্ছার ওপর আমাদের ভবিষ্যত্ নির্ভর করে না। আমরা কোনো বিভক্তি বা উত্তাপ চাই না। কারো অনৈক্য বা মতবাদের কারণে ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্যকে জলাঞ্জলি দিতে পারি না। কারো ইচ্ছা বা অনৈক্য কিংবা অবহেলার কারণে জাতি যেন গা ভাসিয়ে না দেয়।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত সঙ্কটের ভেতরে হারিয়ে যাচ্ছি। আমরা শান্তি চাই, বিভক্তি চাই না। উত্তাপ বা বিস্ফোরণ চাই না। পুরনো সমাজকে নাড়া দিয়ে নতুন উদ্যমে চলতে চাই। বাইরে বের হলে সবাই বলে, নির্বাচন কি হবে? এটা কোন ধরনের কথা!’
মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির ভেতরে যে ঐক্য তৈরি হয়েছিল, আজ তার বিভক্তি দেশের সর্বনাশ করছে বলেও মন্তব্য করেন একমাত্র নোবেলবিজয়ী বাংলাদেশী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংবর্ধনা সভায় গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানসিক সুস্থতা কামনা করে সবাইকে দোয়া করার আহ্বান জানিয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার দিকে ইঙ্গিত করে কামাল হোসেন বলেন, ‘যারা সম্মানিত ব্যক্তিদের অসম্মান করে, তাদের চিহ্নিত করে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, যারা মানসিকভাবে অসুস্থ তারা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।’
তিনি বলেন, ‘ড. ইউনূসের জন্য আমরা গর্বিত। তিনি সবচেয়ে বড় পুরস্কার পেয়েছেন। সরকার কী করছে না করছে, তা ভেবে লাভ নেই। আমাদের প্রার্থনা করতে হবে আল্লাহ যেন সরকার পরিচালনাকারীদের সুস্থ করে দেন।’
সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আমি যথেষ্ট সম্মান করি। তিনি অনেক কিছু হারিয়েছেন। এর ওপর ১৬ কোটি মানুষের চাপ সহ্য করছেন। তাই হয়তো উনার মানসিক অবস্থা ভালো নেই।’
তিনি বলেন, ‘নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূস যখন দেশে এসেছিলেন তখন যদি শেখ মুজিব জীবিত থাকতেন, তাহলে তাকে তিনি বুকে জড়িয়ে ধরতেন। বলতেন— শাবাশ বেটা, তোর জন্য আমি আজ গর্বিত। যদিও শেখ মুজিবের কন্যা তাকে সম্মান দেননি।’
এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের অনেক সাহায্য করেছে, তা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু এই ঋণ শোধ করতে হলে আমাদের আর কত রক্ত দিতে হবে?’ এ সময় ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনের রাস্তার নাম ফেলানী সড়ক করার দাবি জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিশ্বের সব ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রধানরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্মান জানিয়েছেন; যদিও আমরা তাকে সেই সম্মান দিতে পারেনি। ইউনূস যখন আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন, তখন এদেশের সরকার পাশের দেশের নোবেলবিজয়ীকে এনে সংবর্ধনা দেয়। এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জাকর।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি হয় সুষম সম্পদ বণ্টন, নারী উন্নয়ন ও অসাম্প্রদায়িকতা তাহলে ড. ইউনূস সেই চেতনাই বাস্তবায়ন করেছে। যারা ড. ইউনূসকে অসম্মান করে, তারা মুক্তিযুদ্ধের শত্রু। আমাদের উচিত হবে তাদের রুখে দেয়া।’
বিএনপির সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ড. ইউনূসকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘সারা বিশ্ব আপনাকে সম্মান করেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ভালোবাসা দিয়েছে। সুতরাং আপনার ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জনগণ আপনার সঙ্গে আছে। আপনি আমাদের অহংকার।’
মুক্তিযোদ্ধা গণপরিষদের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আইন উদ্দিন বীরপ্রতীক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য-সচিব আবদুস সালাম, সংগঠনের মহাসচিব সাদেক খান প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৩৯:২৭ ৪৫৯ বার পঠিত