বঙ্গ-নিউজ ডটকমঃ কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের চূড়ান্ত রায়ের পর ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার সকালে রায়ের পর দুপুরে এক বিবৃতিতে বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতালের কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
বিবৃতিতে আপিল বিভাগের রায়কে ‘ভুল’ দাবি করলেও দলের শীর্ষনেতাদের মুক্তি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলের শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে সবগুলো রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডেকেছিল জামায়াত। তবে গত অগাস্টে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়া হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকার পর রফিকুলকে তলব করেছিল আদালত।
ওই হরতাল পেছানোর সময় বিবৃতিতে ‘রায়ের বিরুদ্ধে’ কথাটি উহ্য রাখে জামায়াত। এবার হরতাল ডাকার ক্ষেত্রে একই পন্থা অবলম্বন করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের এবং নিবন্ধন বাতিলের রায়ের ফলে চাপে থাকা দলটি।
বিবৃতিতে বলা হয়, সরকারের নির্যাতন, গণহত্যা-গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদ, কাদের মোল্লাসহ শীর্ষ নেতাদের মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনর্বহালের দাবিতে হরতাল ডাকা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে দেশব্যাপী আন্দোলনের মধ্যে সরকার আইন সংশোধন করে প্রসিকিউশনের আপিলের সমান সুযোগ তৈরি করে।
রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষ আপিল করলে মঙ্গলবার রায়ে সর্বোচ্চ আদালত আসামির আপিল নাকচ করে প্রসিকিউশনের আপিল গ্রহণ করে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়।
রায়ের পর ক্ষুব্ধ জামায়াতকর্মীরা চট্টগ্রাম ও খুলনায় মিছিল থেকে হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। চট্টগ্রামে পুলিশের একটি গাড়িতেও আগুন দেয় ইসলামী ছাত্রশিবিরকর্মীরা।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত বলেছে, “একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু এটি একটি ভুল রায়। আমরা এ রায়ে সংক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। আমরা মনে করি, এ রায় ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।
“বিচারিক আদালত যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেননি, সেখানে প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মৃত্যুদণ্ড প্রদান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা।”
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর আব্দুল কাদের মোল্লা (ফাইল ছবি)
গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর আব্দুল কাদের মোল্লা (ফাইল ছবি)
এই রায় পর্যালোচনার জন্য কোনো আবেদন করার সুযোগ নেই বলে আইনমন্ত্রী জানালেও জামায়াত বলেছে, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে রিভিউ আবেদন করবেন তারা।
“সরকারদলীয় কোনো কোনো নেতা ও দু’একজন আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী বলে বেড়াচ্ছেন, রিভিউ পিটিশনের সুযোগ নেই। আব্দুল কাদের মোল্লাকে অবিলম্বে ফাঁসিতে ঝোলানোর কথাও বলছেন তারা। তাদের এসব বক্তব্যের মাধ্যমে কাদের মোল্লাকে তড়িঘড়ি করে হত্যার ষড়যন্ত্রই ফুটে উঠেছে।”
আইনমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, এখন কাদের মোল্লার শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তা নাকচ হলে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে দ্রুতই দণ্ড কার্যকর হবে।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযমসহ জামায়াতের আরো পাঁচ শীর্ষনেতার সাজার রায় ট্রাইব্যুনালে হলেও সেগুলোর আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। সেক্ষেত্রে এদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ের প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে যাচ্ছে কাদের মোল্লার।
যুদ্ধাপরাধের এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসা জামায়াত বিবৃতিতে বলেছে, “সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।
“সরকার জামায়াতে ইসলামীর ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে দেশে নৈরাজ্যজনক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচন বানচাল করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার কূটকৌশল অবলম্বন করেছে।”
“আমরা স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই, জামায়াত নেতাদের হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো চক্রান্ত দেশের জনগণ বাস্তবায়িত হতে দেবে না,” বলেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির জোট শরিক দলটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫:২২:০৬ ৪৬১ বার পঠিত