বঙ্গ- নিউজ ডটকম : সহিংস রাজনীতির পথে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। মহাজোট সরকারের শেষ বছরে উত্তাল রাজনীতির ময়দান। বহুমাত্রিক ইস্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, থমকে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা।
সরকার ও বিরোধী দলের কঠোর অবস্থানে সংঘাতের চিরচেনা পথেই ধাবিত হচ্ছে দেশ। ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। কোথায় যাচ্ছে দেশ? এমন প্রশ্ন এখন দেখা দিয়েছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ খুবই উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়াসহ যত সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সারাদেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
সংঘাতময় রাজনীতি একদিকে যেমন জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে, অন্যদিকে ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম। ক্ষমতার দ্বন্ধ থেকে রাজনৈতিক সংকট শুরু হলেও এখন তা বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। এ সংকট কাটাতে আলোচনায় বসে সমস্যা নিরসন প্রয়োজন।
দেশের চলমান অস্থির পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল থেকে সংলাপের জোরালো দাবি উঠেছে। কিন্তু বরাবরের মতো এখনো সংলাপে কোনো পক্ষের আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে না। অতীতেও বিভিন্ন সময়ে প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে সংলাপের দাবি উঠেছে৷ কিন্তু ‘৯১-এর নির্বাচনের পর তা একবারও বাস্তব হয়নি৷
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০১১ সালের জুনে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। এরপর থেকে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো।
সরকার বলে আসছিল, বিরোধী দল সংসদে এলে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷ বাংলাদেশে সরকারি দলের তরফ থেকে এমন বক্তব্য নতুন কিছু নয়৷ অতীতে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, আওয়ামী লীগও সংসদ বর্জন করে আন্দোলন করেছে রাজপথে। তখন তাদেরও জানানো হয়েছে সংকট নিরসনের জন্য সংসদে ফেরার আহ্বান৷
সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা না দেখে এরই মধ্যে সংকট নিরসনের জন্য আইনের আশ্রয় নেয়া হয়েছে৷ দুই নেত্রীর মধ্যে রাজনৈতিক সংলাপের নির্দেশনা চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী৷
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা। খালেদা জিয়া প্রস্তুত থাকলে সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে শর্ত দিয়ে আলোচনা হয় না।
কিন্তু এদিনই মানিকগঞ্জে এক জনসভায় খালেদা জিয়া বললেন, কোনো আলোচনা নয়, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চলবে। তার কথায় বোঝা গেল, তিনি সংলাপ চান না। কিন্তু সংলাপ না হলে যে সংঘাত হবে- সেটা তো দুই নেত্রী ভালোভাবেই জানেন। তবু কেন সংলাপ নয়?
উচ্চ আদালত দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীকে রাজনৈতিক সংলাপে বসতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে দেশের শীর্ষ দুই রাজনৈতিক দলের প্রধানের মধ্যে সংলাপের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিটের শুনানি শেষে ২৭ মার্চ বিচারপতি মো. নিজামুল হক ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সঙ্গে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের নামে বোমা ও ককটেল নিক্ষেপ, যানবাহন ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগসহ সব বেআইনি কর্মকাণ্ড বন্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে প্রথম রুল এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে দ্বিতীয় রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উচ্চ আদালত দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি রুল জারি করে দেশ ও জাতিকে সমূহ সংকট থেকে বের করে আনার জন্য দুই শীর্ষ নেত্রীর প্রতি যে তাগিদ সৃষ্টি করেছেন তা তাৎপর্যপূর্ণ।
একই সঙ্গে আন্দোলনের অধিকার প্রয়োগের নামে বোমা-ককটেলের বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগসহ সব বেআইনি কর্মকাণ্ড সামাল দিতে সরকারের প্রতি তাগিদ সৃষ্টি করা হয়েছে রুল জারির মাধ্যমে। আমি আমার কয়েকটি লেখায় রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সরকার ও বিরোধী দলের সংলাপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি।
সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল একই মুদ্রার দুই পিঠ। সরকার ও বিরোধী দলের সংলাপ চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। প্রতিটি ব্যাপারেই সরকার ও বিরোধী দল নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করবে এমন পরিবেশই থাকা উচিত।
হরতাল বা এ জাতীয় কর্মসূচি পালনে বোমা-ককটেলের বিস্ফোরণ, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা অহরহই ঘটছে। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের নামে রাজনৈতিক দলগুলো দেশবাসীর রাস্তায় নির্বিঘ্নে চলাচল ও দৈনন্দিন কাজ করার অধিকার যেভাবে কেড়ে নিচ্ছে তা গর্হিত ও নিন্দনীয়।
সভ্য সমাজে এ ধরনের নৈরাজ্য চলতে দেওয়া যায় না। এ ধরনের তৎপরতা বন্ধ ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান সরকারের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত।
উচ্চ আদালতের রুল জারি সে বিষয়ে তাগিদ সৃষ্টি করলে তা হবে দেশবাসীর জন্য এক বিরাট অর্জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৪:৫১ ৪৪৮ বার পঠিত