আমেরিকার যুদ্ধযাত্রা

Home Page » বিশ্ব » আমেরিকার যুদ্ধযাত্রা
শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩



5228ca8486329-untitled-1.jpgবঙ্গ-নিউজ ডটকম:আমেরিকা আবারও যুদ্ধে যাচ্ছে। এবার লক্ষ্য সিরিয়া। প্রেসিডেন্ট আসাদের সরকার সে দেশের জনগণের বিরুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে। অতএব তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য কঠোর আঘাত হানতে হবে। এই যুদ্ধ শুধু আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে নয়, পরাশক্তি হিসেবে তার নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেও এই হামলা দরকার—ওবামা যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন। ঠিক কীভাবে, কখন, কোথায়, কোন লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হানা হবে, তা নিশ্চিত নয়। তবে আঘাত আসছে। মার্কিন কংগ্রেস যদি ‘না’ বলে না বসে, ওবামাকে আক্রমণের সবুজসংকেত দেওয়া ছাড়া পথ নেই। নিজেই নিজেকে এই ‘বক্সিং রিং’-এর ভেতর আটকে ফেলেছেন ওবামা। আমেরিকার রক্ষণশীল মহলে এই যুদ্ধের তর সইছে না। সিনেটর ম্যাককেইন ও তাঁর সতীর্থ সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম অহোরাত্র বলে বেড়াচ্ছেন, শুধু বিমান হামলা করলেই হবে না, আসাদকে সরাতে হবে। সে জন্য আরও বড় যুদ্ধ পরিকল্পনা চাই। সেনা পাঠানোর প্রস্তাব তাঁরা দেননি বটে, কিন্তু ‘নো-ফ্লাই জোন’—অর্থাৎ সিরিয়ার নিজস্ব আকাশ সীমানায় তারা নিজেরা নিজেদের বিমান যাতে না ওড়াতে পারে, তার ব্যবস্থা নিতে তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন। এক-দুবার বিমান হামলা নয়, দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত হতে হবে, তার জন্য কৌশলগত নীলনকশা অবিলম্বে চূড়ান্ত করতে হবে, তর্জনী উঁচিয়ে তাঁরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। ডানপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও পিছিয়ে নেই। সাপ্তাহিক স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায় বিলি ক্রিস্টল ও বার্নার্ড-লেভি এক যৌথ চিঠিতে আসাদের মতো নৃশংস একনায়ককে ‘শাস্তি’ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তাঁদের সে-কথার অর্থ, এখনই হামলা চালাও, দরকার হলে সেনা পাঠাও।

১০ বছর আগে, ইরাক যুদ্ধের সময় আমেরিকা জাতীয় স্বার্থের যুক্তি তুলে আক্রমণ হেনেছিল। সাদ্দাম হোসেনের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, তাঁর মতো সাংঘাতিক লোকের হাতে এই অস্ত্র থাকা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী। তাঁর সঙ্গে আল-কায়েদারও যোগসাজশ রয়েছে। অতএব যুদ্ধে চলো। অস্ত্র আছে কি নেই, তা বড় কথা নয়। সে অস্ত্র থাকতে পারে আর থাকলে তা তিনি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে, আগাম হামলা চালাতে হবে, যাতে হামলার সুযোগই তাঁর না থাকে। এর নাম প্রি-এম্পটিভ রিটালিয়েশন। পরে যখন দেখা গেল সাদ্দামের তেমন কোনো অস্ত্র নেই, আল-কায়েদার সঙ্গেও তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই, তখন অবশ্য ঘাড় বাঁকিয়ে বলা হলো, নেই তো কী হয়েছে? এমন ভয়ানক একনায়ক শাসক তাঁর দেশের মানুষের জন্য যেমন, তেমন বিশ্ববাসীর জন্য মস্ত হুমকি।

সবাই যে প্রেসিডেন্ট বুশের সে কথায় ‘বেড়ে বলেছ ভায়া’ বলে টেবিল চাপড়েছিল, তা নয়। অনেকে, যেমন মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোয়াম চমস্কি ইরাকে মার্কিন হামলাকে ‘পাড়ার মাস্তান’-এর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। মাস্তানদের আসল অস্ত্র হলো ভয়। সে ভয় দেখিয়ে নিজের দাপট বজায় রাখে। ‘ওই যে কানকাটা কামাল আসছে, ওই পথে যাওয়ার দরকার নেই’, অথবা ‘না বাবা, ওই চায়ের দোকানে ছোটা কামালের আড্ডা, ওখানে যাব না’, সে রকম আর কি। চমস্কির কথাটা একদম মিথ্যে নয়। যুদ্ধের কয়েক বছর আগে (সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট) ডিক চেনি ও তাঁর বান্ধবেরা মিলে একটি নথি তৈরি করেছিলেন, যাতে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, আমেরিকাকে যদি বিশ্বে তার আধিপত্য বজায় রাখতে হয়, তাহলে শক্তির ব্যবহার যথাসম্ভব প্রচ্ছন্নভাবে করতে হবে। অর্থাৎ লোককে দেখাতে হবে, আমেরিকার হাতের মাসল কেমন, কতটা পুরু। একসময় ছিল যখন আমেরিকা অস্ত্রের পাশাপাশি তার অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করতে পারত। এখন অর্থনৈতিকভাবে আমেরিকা কাবু হয়ে পড়েছে, কিন্তু অস্ত্রের দিক দিয়ে সে এখনো সর্বেসর্বা। অতএব যুদ্ধে যাওয়াই শ্রেয়। চেনি গং পরামর্শ দিয়েছিল, এমন জায়গায় হামলা করতে হবে, যা কিনা সহজেই কাত হয়ে পড়ে। সামরিক ভাষায় এমন লক্ষ্যবস্তুর নাম সফট টার্গেট।

এবারের টার্গেটও ‘সফট’, তবে অবশ্য ওবামা ভিন্ন যুক্তি দেখাচ্ছেন। জর্জ বুশের যুক্তি ছিল, এই হামলা আমেরিকার নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য জরুরি। ওবামা সে পথে না গিয়ে ‘নৈতিকতার’ যুক্তি তুলে ধরেছেন। তিনি বলছেন, রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। প্রথম মহাযুদ্ধের পর এক আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে সে অস্ত্রের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়েছে। সে আইনকে সমুন্নত রাখা শুধু এক আমেরিকার নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নৈতিক দায়িত্ব। এমন এক ভয়াবহ অস্ত্র ব্যবহারের পরে যদি আসাদের গায়ে কুটোটিও না লাগে, তাহলে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার বদলে পুরস্কৃত করা হবে। রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার হলে তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সে কথা আগেভাগে জানিয়ে ওবামা নিজেই একটি ‘রেড লাইন’ টেনে দিয়েছিলেন। আসাদ এখন সেই ‘লক্ষ্মণ রেখা’ অতিক্রম করেছেন, ফলে নামাও ঢাল খোলো তরবারি।

সমস্যা হলো, ওবামার যুদ্ধ ঘোষণার পেছনে কোনো ‘নৈতিক যুক্তি’ আছে, এ কথা মানেন না এমন লোকের অভাব এই আমেরিকার ভেতরেই নেই। বাকি বিশ্বের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। রোজ গার্ডেনে গত সপ্তাহে ওবামা যখন কৌশলগত হামলার আগে কংগ্রেসের সম্মতি আদায়ের ঘোষণা দেন, ঠিক সে সময় হোয়াইট হাউসের সামনে যুদ্ধবিরোধী আমেরিকান নাগরিকেরা এক স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের আয়োজন করে। এই বিক্ষোভকারীদের মনোভাবের সঠিক প্রতিফলন মেলে নিউ রিপাবলিক পত্রিকায় ডেভিড রিয়েফের একটি নিবন্ধে, যার শিরোনাম হলো, ‘সিরিয়ায় মার্কিন হস্তক্ষেপ নির্বোধের কাজ হবে’। সে লেখার দ্বিতীয় শিরোনাম হলো, ‘এই হামলা অনৈতিক, অবৈধ এবং এর ফলে যুদ্ধবাজদেরও খুশি করা যাবে না’। তাঁর সে লেখা ছাপা হওয়ার পর অবশ্য ফরেন অ্যাফেয়ার্স পত্রিকা ঠাট্টা করে লিখেছে, ‘এসব উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবীর মুখ বন্ধ রাখতে বলুন।’

ইরাকের অভিজ্ঞতা থেকে জানি, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, তা শেষ করা সহজ নয়। আমরা এও জানি, মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো দেশে—তা ইরাক হোক বা সিরিয়া—বাইরে থেকে যেমন শান্তি চাপানো যায় না, তেমনি নিজেদের পছন্দমাফিক সরকারও ক্ষমতায় বসানো সহজ নয়। গৃহযুদ্ধে দেশটি ইতিমধ্যে ক্ষতবিক্ষত। লাখ খানেক লোক ইতিমধ্যে মারা পড়েছে, কয়েক লাখ লোক ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে জর্ডান ও তুরস্কে। এখন যদি আমেরিকার ক্রুজ মিসাইলের হামলা হয়, তার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা, যাদের নামে এখন আমেরিকা যুদ্ধের কথা বলছে।

রাসায়নিক অস্ত্রের কথা বলে নৈতিকতার যে বাহানা আমেরিকা দিচ্ছে, তা-ও খুব কাজের কাজ নয়। ওবামা বলেছেন, সিরিয়ায় সরকার বদলানো তাঁর লক্ষ্য নয়, শুধু রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য উচিত শিক্ষা দিতে চান তিনি। আমেরিকার হিসাব অনুসারে, গত সপ্তাহের রাসায়নিক হামলায় মারা গেছে ছয় হাজার নিরীহ মানুষ। এর আগে যে লাখ খানেক মানুষ মারা গেল, তাদের চেয়ে এই ছয় হাজারের মৃত্যু কি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? তার চেয়েও ভয়ংকর কথা, মার্কিন হামলার ফলে এ যুদ্ধ আরও বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা আছে। সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতিমধ্যে বিদ্রোহীদের অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে এই যুদ্ধে একরকম জড়িয়ে পড়েছে। আমেরিকা অস্ত্র ধরলে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরান, ইরাক ও লেবানন এই যুদ্ধে তার পক্ষে নাক গলাতে পারে। ফলে, এখন পর্যন্ত যা ছিল একটি গৃহযুদ্ধ, তা আঞ্চলিক যুদ্ধে পরিণত হবে। রাশিয়া ও চীন যদি সিরিয়ার পক্ষাবলম্বন করে, যার সম্ভাবনা রয়েছে, তার ফলে এই সংকট আরও কত দূর বিস্তৃত হবে, কে জানে!

কিন্তু তার মানে এই নয়, সিরিয়াকে নিয়ে হাত গুটিয়ে থাকতে হবে। এক-দেড় বছর ধরে দেশটিতে যা ঘটছে, তা ঘটা উচিত নয়, তা ঘটতে দেওয়া যায় না। ১৯৭১-এ বাংলাদেশে ঠিক এই রকমের একটি ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তান সরকার ও তার সেনাবাহিনী নিজের দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিল, নির্বিচারে হত্যা করেছিল সাধারণ মানুষ। সে অভিজ্ঞতা ও পরে কম্বোডিয়া, রুয়ান্ডা ও বলকানে জাতি হত্যার যে অভাবনীয় অভিজ্ঞতা আমাদের প্রত্যক্ষ করতে হয়, বিশ্বসম্প্রদায় তারই ভিত্তিতে এই সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে নিজের দেশের নাগরিকদের রক্ষার ব্যাপারে প্রতিটি সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যাপার, এই অজুহাতে কোনো সরকার তার দেশের নাগরিকদের যথেচ্ছ মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে পারে না। পরবর্তী সময়ে এই মতবাদ ‘রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ বা আরটুপি নামে পরিচিতি অর্জন করে। এই ডকট্রিনের পক্ষে এখন পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তি বা কনভেনশন নেই, ফলে তার আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তা ঠিক। কিন্তু বিশ্বসম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করাও কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

সিরিয়ায় যা ঘটছে, তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। কীভাবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যৌথভাবে, বিশ্বের প্রধান শক্তিধর দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগে। আমরা জানি, কোনো কোনো দেশ তাদের সে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী নয়। সে ক্ষেত্রে তেমন দেশসমূহের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে বিশ্বনাগরিকদের সম্মিলিত উদ্যোগে। চাপ সৃষ্টি করতে হবে আসাদদের ওপরও। আমেরিকার যুদ্ধতৎপরতা শুরুর পর বিভিন্ন দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, রাস্তায় নেমেছে বিভিন্ন দেশের মানুষ। কই, আসাদের নির্মমতার বিরুদ্ধে তো বিশ্বের মানুষকে রাস্তায় নামতে দেখিনি। সবার আগের রাস্তায় নামার কথা সিরিয়ার প্রতিবেশীদের, আরব ও মুসলিম দেশগুলোর। কই, কোনো মুসলিম বা আরব দেশে আসাদের বিরুদ্ধে অর্থপূর্ণ কোনো বিক্ষোভ হয়েছে, তা তো শুনিনি। আমাদের দেশেও কেউ রা-টাও করেননি। আমেরিকার যুদ্ধযাত্রায় তাদের ‘নৈতিক উষ্মা’ জানাতে অবশ্য আমাদের কলমযোদ্ধার বিলম্ব হয়নি।

সিরিয়ায় যেকোনো যুদ্ধতৎপরতার বিরুদ্ধে আমেরিকাকে অথবা তার সৌদি ও তুর্কি মিত্রদের আমাদের প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যানে কথা যত জোরে সম্ভব জানাতে হবে। আমাদের প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যানের কথা আসাদকেও জানাতে হবে। সেটাই হবে বিশ্বনাগরিক হিসেবে সঠিক কাজ। সেটি হবে আমাদের প্রতিবাদের দায়িত্ব— রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেস্ট।

বাংলাদেশ সময়: ০:৫৩:০৯   ৪২৭ বার পঠিত  




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

বিশ্ব’র আরও খবর


বিয়েবর্হিভূত যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ: প্রতিবাদে বিক্ষােভ ইন্দোনেশিয়ায়
সউদী আরব তৈরি করবে বিশ্বের বৃহত্তম বিমানবন্দর
আজ মেসির জন্য মেক্সিকোর বিরুদ্ধে খেলাটি ‘বাঁচা-মরার লড়াই’
শুরুর বাঁশিতে ফুটবলের পৃথিবী
উত্তর কোরিয়া দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো জাপান সাগর লক্ষ্য করে
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা : ন্যান্সি পেলোসি
চাঁদের উদ্দেশ্যে ছুটল ‘আর্টেমিস-১’
জার্মানি, পোল্যান্ড রাশিয়ার গ্যাস সম্পদকে রাষ্ট্রীকরণ করেছে
বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে : মার্টিন রাইজার
ইউক্রেন থেকে গম নিয়ে “ম্যাগনাম ফরচুন” চট্টগ্রাম বন্দরে

আর্কাইভ