বঙ্গ-নিউজ ডটকম:অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আর নিশ্চয়তা পেলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে দলটি। প্রয়োজনে নির্দলীয় সরকারের দাবিতেও কিছু ছাড় দিতে রাজি আছে তারা। কারণ বিএনপি মনে করে, অবাধ নির্বাচন হলে তাদের জয় নিশ্চিত।তবে শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। আর কোনো নিশ্চয়তা না পেলে অক্টোবরের শেষে সরকার পতনের আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা।সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা আদায়ের মাধ্যম হিসেবে জাতিসংঘের মধ্যস্থতা চায় বিএনপি। সে ক্ষেত্রে একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান করে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার করা হলে বিএনপি মেনে নেবে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় অন্তত এ ধরনের একটি সমঝোতা আশা করে বিএনপি।বিএনপি অবশ্য নিজ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো প্রস্তাব সরকারকে দেবে না। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একটি সূত্র বিষয়টি প্রথম আলো ডটকমকে নিশ্চিত করেছে। সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিএনপি সংশয়ে রয়েছে। তার পরও তারা অপেক্ষা করবে। দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতিসংঘের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রাজনৈতিক) অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর বাংলাদেশ সফরে আসার কথা আছে। তা ছাড়া চলতি মাসের মাঝামাঝি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এ মাসেই বিএনপির দুজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। শেষ পর্যন্ত কী হয়, তা তারা দেখতে চায়।২০১১ সালে আদালতের এক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর সরকার সংবিধান সংশোধন করে ওই ব্যবস্থা বাতিল করে। তখন থেকে বিএনপি ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। একপর্যায়ে ওই অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় হয়ে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আসে।
প্রথম আলো ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই সব দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার হতে পারে। সুশীল সমাজের অনেকে এ ধরনের অনেক প্রস্তাব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাইরে রেখে সব দলের সমন্বয়ে একটি সরকার হতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি নিরপেক্ষ নির্বাচনের নিশ্চয়তা চায়। এ নিশ্চয়তা পেলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় এ ধরনের নিশ্চয়তা পাওয়া যেতে পারে বলে তাঁরা এখনও আশা করছেন।
গত বছর লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের সময় যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে, তাতে বিএনপির অংশীদারত্বও থাকতে পারে। সে সময় প্রধানমন্ত্রী একটি ছোট মন্ত্রিসভার কথা বলেছিলেন। তবে বিএনপি সে সময় প্রধানমন্ত্রীর ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে।
প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যে ওই অবস্থান থেকেও সরে এসেছেন। সম্প্রতি সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ২৭ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হবে। সে সময় সংবিধানের আলোকে জাতীয় সংসদ বহাল থাকবে। তবে কোনো অধিবেশন হবে না। ওই সময়ে মন্ত্রিসভা থাকলেও কোনো নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত হবে না।
বিএনপির দাবি, নির্বাচনকালীন সরকার হতে হবে নির্দলীয়। বিএনপি প্রকাশ্যে তাদের সেই অবস্থান এখনো ধরে রেখেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যা বলেছিলেন তা দ্বিদলীয় সরকার। কিন্তু আমরা এখনো বলছি নির্দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সচিবদের বৈঠকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সরকারের অস্থান হলে সমঝোতার সুযোগ মনে হয় না আছে। সরকার বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। যদি এটি করে তাহলে যা হওয়ার তা-ই হবে। অস্থিরতা বাড়বে। কঠোর আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া বিএনপির কোনো বিকল্প থাকবে না। সরকারই সেদিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
জাতিসংঘের উদ্যোগে এখনো বিএনপি আশাবাদী কি না, জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ বলেন, বান কি মুনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন, সেখান থেকে তিনি সরে এসেছেন। তিনি জনদাবির প্রতি ভ্রূক্ষেপ করছেন না। বিদেশিদের উদ্বেগও আমলে আনছেন না। একগুঁয়েমির ফল ভালো হয় না। তিনি বলেন, সরকার যদি তাদের অবস্থান থেকে সরে এসে এসব আমলে নেয়, তাহলে সমঝোতা হতে পারে। সরকারকে সে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার যুবদলের সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের সহনশীলতা, গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা শেখ হাসিনা বুঝতে পারেন না। তিনি আমাদের সহনশীলতাকে দুর্বলতা মনে করছেন। এ সহনশীলতা দুর্বলতা নয়।’ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে বলেছিলেন, দুদলের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হবে। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী ইউটার্ন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০:৩২:৪৭ ৪২৯ বার পঠিত