বঙ্গ-নিউজ ডট কম: নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া সড়কে পুলিশ ও পোশাক শ্রমিকদের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।নারায়নগঞ্জের চাষাড়া মোড়ে ফুজি গার্মেন্টের শ্রমিকরা ‘লে অফ’ ঘোষণা করা কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এসময় পুলিশ তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিত নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জসহ প্রায় পঞ্চাশ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকেই চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণসংহতি আন্দোলনের শ্রমিক সংগঠন, গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির ব্যানারে সমাবেশ চলছিল। সমাবেশ শেষে দুপুর ১২টায় একটি মিছিল শহর প্রদক্ষিণ করে চাষাঢ়া সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধের চেষ্টা চালায়। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা রাস্তায় শুয়ে পড়লে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এসময় পুলিশ-পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়। ঘটনার একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সড়কে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে।
প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমগীত’ সভাপতি অমল আকাশ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মন্টু ঘোষ, জেলা সিপিবির সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, গার্মেন্ট সংহতির কেন্দ্রীয় নেতা হারুন মাহমুদ, নারায়নগঞ্জ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি জাহিদ সুজন, গণসংহতি অন্দোলনের আহ্বায়ক অঞ্জন দাশসহ ২৫ জন আহত হয়।
বন্ধ থাকা গার্মেন্টস ফুজি নিটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “শ্রমিক নেতা অঞ্জন দাস ও তরিকুল সুজনের অনৈতিক আন্দোলনের কারণে নারায়ণগঞ্জের শতভাগ রপ্তানিমুখী সোয়েটার কারখানা ফুজি নিটওয়্যার লিমিটেড ২৭ আগস্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি। মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রায় ৯ শ’ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ শুরু করেছি। কিন্তু শ্রমিক নেতাদের উস্কানিতে কিছু শ্রমিক আন্দোলন করে যাচ্ছে।”
অপরদিকে শ্রমিক নেতা তরিকুল সুজন বলেন, “শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী কারখানা বন্ধ করতে পারেন না। এটা অন্যায়। কারখানা বন্ধ করতে হলে শ্রম আইনের ২৬ ধারা মেনে তাকে কারখানা বন্ধ করতে হবে।” বিকেএমই-এর সভাপতি সেলিম ওসমানের নির্দেশে পুলিশ এ হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্র কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঞ্জুর কাদের বলেছেন, “অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও শ্রমিকেরা রাস্তা ছাড়েনি। এরপর লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।”
গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির বিবৃতি:
এদিকে পুলিশের হামলার ঘটনায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সমন্বয়ক তাসলিমা আখতার এবং কেন্দ্রীয় নেতা জুলহাসনাইন বাবু, দীপর রায়, হারুন রশীদ মাহমুদ এবং মাহবুব ইরান এক যুক্ত বিবৃতিতে তীব্র নিন্দা জানান।
এক বিবৃতিতে তারা বলেন, আজ যখন শ্রমিকরা সংগঠিত হয়ে বিকেএমইএ-র সামনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন তখনই পুলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা চালায় এবং বেধড়ক লাঠি চার্য করে, এমনকি নেতাদের চিহ্নিত করে করে হামলা করেছে।”
নেতৃবৃন্দ বলেন, “শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনীর এই হামলা আবারও প্রমাণ করলো রাষ্ট্র মালিকের স্বার্থ রক্ষা করতে শ্রমিকদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করতেও পিছপা হয়না।” তারা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বুধবার সাড়ে তিনিটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই পুলিশী হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯:৩৮:৪৮ ৫৩১ বার পঠিত