বর্তমানে পৃথিবীতে চীনা অধিবাসীরা তাদের জন্মগ্রহণের পর চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে নিজের একটি রাশি পেয়ে থাকে। কিন্তু অনেক অনেক আগের কথা, প্রাচীনকালে পৃথিবীতে কোনো রাশি ছিল না। একবার স্বর্গের রাজা সিদ্ধান্ত নিলো যে, পৃথিবীতে রাশি নির্বাচন করা হবে। এজন্য পৃথিবীর সকল প্রাণীদের রাশি নির্বাচনী সভায় অংশ নেয়ার জন্য হুকুম দেয়া হলো।অন্য সকল প্রাণীর মতো বিড়াল ও ইঁদুর একসাথে সভায় অংশগ্রহণের দাওয়াত পেয়েছে। কারণ তারা দুজনে সবসময়ে একসাথে থাকতো। অতীতে কিন্তু ইঁদুর ও বিড়ালের বেশ ভাব ছিল। বিড়াল বেশ অলস প্রকৃতির ছিল তবে গায়ে ছিল প্রবল শক্তি। অন্যদিকে ইঁদুর ছিল পরিশ্রমী ও চতুর, তবে তার গায়ের আকার অতি ক্ষুদ্র। ফলে তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করতো। ইঁদুর দায়িত্ব গোয়েন্দাগিরির কাজ করা নেয়, আর বিড়ালের কাজ হলো শিকার ও খাবার পরিবহন করা। রাশি নির্বাচনী সভার দাওয়াত পেয়ে তারা একসাথে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিড়াল ঘুমাতে বেশ পছন্দ করে। তাই সে বার বার করে বন্ধু ইঁদুরকে অনুরোধ করে যে, ঘুমিয়ে গেলে সময় মতো যেনো তাকে ডেকে তোলা হয়। ইঁদুর সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যায় এবং বললো, “ভাই, তুমি কোনো চিন্তা করো না, তুমি নিশ্চিন্ত মনে ভালো করে ঘুমাও। আমি অবশ্যই সময় মতো তোমাকে ডাকবো’। এ কথা শুনে বিড়ালতো মহা খুশি। সে পেট ভরে খেয়ে তারপর হেলেদুলে বিছানায় গিয়ে গভীর নিদ্রায় চলে যায়। এরপর ইঁদুর বিড়ালের ঘুম গভীর হলে সে, বিড়ালের দাড়ি টানলো, তার চিবুক স্পর্শ করলো, তাকে ডাকলো, কিন্তু কোন ভাবেই বিড়ালের কিছু হুশ হয় না এমনকি একটু নড়াচড়া করার লক্ষণ নেই তার মধ্যে। পরদিন ভোরবেলায় ইঁদুর বিছানা থেকে উঠে নিজেকে পরিপাটি করে সাজিয়ে গুজিয়ে রওনা হবার জন্য প্রস্তুতি নেয়। অন্যদিকে বিড়ালতো নাক ডেকে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। ইঁদুর বন্ধু বিড়ালের দিকে এক নজর তাকিয়ে হালকা স্বরে ডাকলো, “বিড়াল ভাই, ও বিড়াল ভাই, ওঠো না ভাই ?” কিন্তু বিড়ালের ঘুম কিছুতেই ভাঙ্গে না। ইঁদুর তাই দেখে মৃদু হেসে একা একা চলে যায় রাশি নির্বাচনের সভায়।
এদিকে রাশি নির্বাচনের খবর পেয়ে হ্রদে থাকা ড্রাগণ ভীষণ চিন্তা পড়ে যায়। সে ভাবলো, “আমার ফিটফাট আঁশ আছে, তাম্র মুদ্রার মতো বড় চোখ আছে, উচ্চ নাক আছে, লম্বা দাড়ি আছে। কেবল আমার যদি মাত্র দু জোড়া শিঙ থাকতো তাহলে কত ভালো হতো। তখন অবশ্যই আমাকে নির্বাচিত করতে রাজার কোনো ভাবনা ভাবতে হতো না। কিন্তু আমার মাথায় শিঙ নেই, চুল নেই, দেখতে একদম সুন্দর লাগে না।”
ড্রাগণ যখন মনে মনে এ সব কথা ভাবছে এমন সময়ে হ্রদের কিনারে দেখতে পেল ভারি সুন্দর শিঙ আর রঙিন ঝুঁটির এক মোরগ পানি পান করছে। মোরগের মাথায় এক জোড়া সুন্দর শিঙ দেখে ড্রাগণের চোখ আর নড়ে না। মোরগটি পানি পান করে চলে যাচ্ছিল। এমন সময়ে ড্রাগণ ডাকলো, “মোরগ দাদা, একটু দাড়াও না।”
মোরগ এ কথা শুনে উত্তর দিলো, “ড্রাগণ ভাই, কী ব্যাপার?”
“মোরগ দাদা, আমার ছোট্ট একটি অনুরোধ আছে। তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারো?” মোরগ মাথা নাড়িয়ে ড্রাগণকে তার কথা শেষ করার ইঙ্গিত দেয়। ড্রাগণ বললো, “আমি রাশি নির্বাচন সভায় যাবো তো, রাজা বাহাদুর আমায় ডেকেছেন। কিন্তু এখন আমাকে তো দেখতে কুতসিত লাগছে, কারণ আমার মাথায় কোনো সুন্দর শিঙ নেই এমন কি নেই কোনো চুল। আমার মনে হয়, মানে আমার দৃষ্টিতে তোমার এ জোড়া শিঙ ভীষণ রকম সুন্দর। তুমি, কি তোমার শিঙজোড়া আমাকে কিছু সময়ের জন্য ধার দিতে পারো?”
মোরগ এ কথা শোনার পর মাথা দোলাতে দোলাতে বললো, “না, না, তা কি করে সম্ভব? আমিও তো রাশি নির্বাচন সভায় যাবো আমার সিঙ তোমাকে দিলে আমার কী হবে?”
ড্রাগণ এবার বেশ কাচুমাচু করে বিনয় স্বরে বললো, “মোরগ দাদা, দেখো তোমার মাথায় তো রক্তের মতো লাল রঙের ফুলঝুঁটি আছে, সমস্ত শরীরে আছে রঙিন পালক আর তাছাড়া তোমার তো রয়েছে অসাধারণ চরিত্র, যা দেখে সকলে সহজে মুগ্ধ হয়ে যায়। আমার মনে হয়, তোমার মাথার এ জোড়া শিঙ তোমার অপরূপ সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দিচ্ছে, এদুটোর কোনো প্রয়োজন নেই, বরং মাথায় থাকলে অতিরিক্ত লাগে। তুমি নিশ্চিন্ত মনে এদুটো শিঙ আমাকে ধার দিতে পারো
বাংলাদেশ সময়: ২০:১৩:০৯ ৭১১ বার পঠিত