অপু রহমান,বঙ্গ-নিউজ ডটকম:প্রতি রাতে অফিস থেকে বেরোনোর সময় দেখি কারওয়ান বাজারে ট্রাক ঢুকছে। সেই ট্রাক থেকে সবজি নামিয়ে মাথার ঝাঁকায় বা ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাইকারি বাজারে। এখানেও তেমন দৃশ্য চোখে পড়ল। তবে ট্রাকের বদলে ট্রলার, আর সবজির বদলে ইলিশ।চাঁদপুরের মাছঘাটের অভিজ্ঞতা এটা। গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যায়। চাঁদপুর বন্ধুসভার দুই বন্ধু নাজমুল ও এমরানকে সঙ্গে নিয়ে একটু আগেই ঘুরে এসেছি বিখ্যাত মোহনা। এই মোহনায় পদ্মা, মেঘনা আর ডাকাতিয়া নদীর পানি এসে মিশেছে। যা দেখা যায় শহরের মোলহেড থেকে। পার্কের মতো এ জায়গা বড় স্টেশন নামেও পরিচিত। দূর থেকে সহজেই পানির রং দেখে নদীগুলোকে চেনা যায়।
আবার আসি ইলিশে। আগের রাতে, আর সেদিন দুপুরে প্রথম আলোর চাঁদপুর প্রতিনিধি আলম পলাশের পৈতৃক বাড়ি ‘বকুল বাগে’ চাঁদপুরের বিখ্যাত পদ্মার ইলিশের স্বাদ নেওয়া হয়ে গেছে। ইলিশ ভাজা, ইলিশ তরকারি দুটোই ছিল দারুণ। এবার বাজার দেখার পালা। মাছঘাটে মাছের বিরাট আড়ত। এখানে সব ধরনের মাছই আসে। তবে এখন বৃষ্টি ভালো হচ্ছে, পদ্মায় ইলিশও ধরা পড়ছে বেশ। তাই আড়তজুড়ে ইলিশ আর ইলিশ। ট্রলার থেকে ঝাঁকায় ঝাঁকায় মাছ আসছে। সেগুলো মেঝেতে থরে থরে বরফ দিয়ে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে, তারপর হচ্ছে ‘ডাক’। ডাক মানে নিলামে পাইকারেরা মাছ কিনে নিয়ে আবার বরফভরা বড় বড় বাক্সে মাছগুলো রাখেন। এরপর ছোট বা বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন সারা দেশে, এমনকি বিদেশেও।
মাছঘাটের আড়তে ইলিশের দাম নির্ভর করে এর ওজন আর কয়টা কিনবেন তার ওপর। ৬০০ থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত দাম চাইলেন বিক্রেতারা। ওজন ৬০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত। এখানে হাজারো ইলিশের ভিড়ে কেনাকাটা করতে গেলে মুলোমুলিটা ভালোই করতে হবে। ইলিশের বড় রাজ্য থেকে আমরা চলে যাই বিপণিবিতান বাজার। এটা জমে ওঠে দুপুরের পর থেকে, খোলা থাকে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত। এখানেও তাজা ইলিশ পাওয়া যাবে। দাম ঘাটের চেয়ে বেশি না।
আগের দুবেলা ঘরের রান্নায় ইলিশ খাওয়া হয়েছে, আলম পলাশ বললেন, ‘শেষ বেলাটা চলেন ছোট্ট এক দোকানে যাই। এখানে ইলিশ ভাজা আর সাদা ভাত পাওয়া যায়।’ আমরা চললাম বড় স্টেশন মোড়ের মনু মিয়ার হোটেলে। কাঁচা মাছের টুকরা দেখিয়ে দিলাম, হলুদ-মরিচের গুঁড়া মাখিয়ে বড় কড়াইয়ে ডুবোতেলে ভাজা হলো সেগুলো। সঙ্গে শুকনা মরিচ ভাজা। প্রতি টুকরা ইলিশ ভাজার দাম ৬০ টাকা।
ইলিশ ভাজার কথাই যখন উঠল তখন আসল জায়গায় আসি। পদ্মার পাড়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়াঘাট। এই মাওয়ার ইলিশ ভাজা অসাধারণ। অনেকগুলো হোটেল, সবগুলোরই মূল আকর্ষণ ইলিশ ভাজা। এখন তো ইলিশের মৌসুম, তাই স্বাদটাও সেরা। টাটকা ইলিশের টুকরা তো আছেই, চাইলে ইলিশের মাথা আর ডিমও ভেজে দেবে। এই তাজা ভাজা ইলিশের স্বাদ জিবে লেগে থাকে অনেক দিন। ২৯ আগস্ট দুপুরে খাওয়া হলো সেই ইলিশ ভাজা। একটা টিপস—খাওয়ার আগে মাছের টুকরার আকার-প্রকার দেখে দামটা ঠিক করে নেবেন। আকার বুঝে দাম পড়বে ৬০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি টুকরা। মাওয়ার লঞ্চ আর ফেরিঘাটে বেশ কয়েকটি খাবার হোটেল আছে, এসবের যেকোনো একটায় বসে পড়লেই হলো।
যদি মাওয়া থেকে ইলিশ কিনতে চান, তবে যেতে হবে ভোরে। ভোর থেকে এখানকার আড়তে ইলিশ মাছ আসতে থাকে। সঙ্গে সব ধরনের মাছই পাওয়া যায় এ বাজারে। এখানেও দামাদামি করে মাছ কিনতে হবে। এ বাজারে বিকিকিনি চলে সকাল আটটা পর্যন্ত। ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতে এখানে মাছের দাম কমই থাকে।
চাঁদপুর হোক আর মাওয়াই হোক, পদ্মার ইলিশ কেনা আর খাওয়ার এটাই আসল সময়। আর সময়ের ইলিশ সময়ে না খেলে কি চলে!যেভাবে যাবেন
চাঁদপুর যেতে পারেন সড়ক ও নদীপথে। ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে সারা দিনই চাঁদপুরের বাস ছাড়ে। আর সদরঘাট থেকে ছাড়ে লঞ্চ। সকাল, দুপুর ও মধ্যরাতে ময়ূর, ঈগল, আল বোরাক, নিউ আল বোরাক, রফরফ ইত্যাদি লঞ্চ যাওয়া-আসা করে চাঁদপুরে। দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যাবে। ঢাকা থেকে মাওয়ার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের কম। গুলিস্তান থেকে ‘ইলিশ’ বাস নিয়মিত মাওয়া যাতায়াত করে। এ ছাড়া নিজের গাড়িতে করেও যাওয়া যাবে মাওয়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ১:৩৩:২৭ ৪৮৭ বার পঠিত