বঙ্গ-নিউজ ডট কম:
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, সিরিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি দেয়ার জন্য মার্কিন কংগ্রেসের কাছে অনুরোধ জানাবেন তিনি। গত শনিবার হোয়াইট হাউজে সিরিয়া সংক্রান্ত এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে ওবামা বলেন, তিনি সিরিয়ার ওপর সামরিক হামলা চালাতে বদ্ধপরিকর তবে তিনি মনে করেন, আমেরিকার গণতন্ত্রের স্বার্থে এ ব্যাপারে আইন প্রণেতাদের সমর্থন নেয়া জরুরি। এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে জোট বেঁধে কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত ছাড়াই কেবল হোয়াইট হাউজের একক সিদ্ধান্তেই সিরিয়ায় হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিরিয়ায় হামলার সিদ্ধান্ত থেকে সম্ভবত মান-সম্মান নিয়ে কেটে পড়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানেন, কংগ্রেসের ওপর বিষয়টি ছেড়ে দিলে তা আর পাস হবে না। কারণ কংগ্রেসের সঙ্গে বিশেষ করে রিপাবলিকান আইন প্রণেতাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা সুবিধার নয়। বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ বারাক ওবামা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পরিণতি থেকেও শিক্ষা নিয়েছেন। এএফপি, এপি, বিবিসি অনলাইন, রয়টার্স।গত সপ্তাহে সিরিয়াকে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগের দায়ে অভিযুক্ত করে দেশটির ওপর হামলার মিছিলে ক্যামেরন ছিলেন ওবামার চেয়ে অগ্রগামী। তিনি ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের অবকাশ থেকে ডেকে এনে পার্লামেন্টের অধিবেশন বসান। কিন্তু পার্লামেন্ট ক্যামেরনকে সিরিয়ায় হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি। বারাক ওবামা শনিবার আরো বলেন, আমি (সিরিয়ার বিরুদ্ধে) বল প্রয়োগের ব্যাপারে কংগ্রেসে আমেরিকার জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে অনুমতি চাইবো। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, কংগ্রেস নেতারা তাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব সিরিয়ার ব্যাপারে আলোচনার জন্য একটি বিতর্কের আয়োজন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কংগ্রেসের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হবে। ওই তারিখের আগে প্রতিনিধি পরিষদ বা সিনেট সদস্যদের ছুটি বাতিল করে ফিরে আসার কোনো লক্ষণ না থাকায় সিরিয়ার ওপর হামলার সিদ্ধান্ত ৯ সেপ্টেম্বরের আগে আর হচ্ছে না। এরপর মার্কিন কংগ্রেসের যে অধিবেশন বসবে তাতে হবে ওবামার আসল ভাগ্য পরীক্ষা। সেখানে মার্কিন আইন প্রণেতারা ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের পথ অনুসরণ করলে এক সময় যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট ওবামার যুদ্ধ যুদ্ধ খেলার বাসনা এবারের মতো পরিত্যাগ করতে হবে। এখন একমাত্র কংগ্রেস সম্মতি দিলে যুদ্ধ, না দিলে না।
এবার অপেক্ষার পালা। প্রথমত, আগামী অধিবেশনে কংগ্রেস সিরিয়া বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপর। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা তাদের রিপোর্টে কী পান, হয়তো সেটাও দেখা দরকার। অথচ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা শুক্রবার কিন্তু মোটামুটি পরিষ্কারভাবেই সিরিয়ার উপর হামলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ফলে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর সিরিয়ায় হামলার বিষয়টি ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিরিয়ার নিরাপত্তা কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, আমরা যে কোনো মুহূর্তে হামলা প্রত্যাশা করছি। আর আমরা যে কোনো মুহূর্তে হামলার জবাব দিতেও প্রস্তুত।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওবামা প্রশাসনের জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দলের প্রতিবেদনের ওপর ভরসা করে নেই। নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে সে দেশ জানিয়েছে, গ্যাস হামলার পেছনে সরকারি বাহিনী জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরে এই হামলায় ৪২৬ শিশুসহ ১ হাজার ৪২৯ জন নিহত হয়েছে বলেও দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি মানতে রাজি নয় সিরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাশিয়া। সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন রাসায়নিক হামলার পেছনে সিরিয়া সরকার জড়িত থাকার দাবিকে সম্পূর্ণ বাজে কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তথ্যপ্রমাণ চেয়েছেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে এক লাখের মতো মানুষ। সম্প্রতি সে দেশে কথিত রাসায়নিক হামলায় কয়েকশ’ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ। সিরিয়ায় সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। প্রশ্ন হচ্ছে, সম্ভাব্য হামলা কি সে দেশে কোনো পরিবর্তন আনতে পারবে?
তিনি বলেন, আমাদের মার্কিন সহকর্মীরা, যারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন সিরিয়ার সরকারি বাহিনী রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং বলছেন তাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছেÑ তাদের উচিত সেসব তথ্যপ্রমাণ জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক এবং নিরাপত্তা পরিষদকে প্রদর্শন করা। বলাবাহুল্য, রাশিয়া এবং চীনের বাধার কারণে সিরিয়ায় সামরিক অভিযান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন পায়নি। পাশাপাশি ব্রিটেনের সংসদেও ভোটাভুটিতে এই অভিযান অনুমোদন পায়নি। ফলে সম্ভাব্য সিরিয়া অভিযানে ব্রিটেনকে পাশে পাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, জার্মানি এবং কানাডাও অভিযানে অংশ না নেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে।
গত শনিবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল সিরিয়া ইস্যুতে রাশিয়া এবং চীনের অবস্থানের সমালোচনা করেছেন। তাদের কারণে আন্তর্জাতিক সমাজ সম্মিলিতভাবে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না বলে জানান মার্কেল। তিনি বলেন, জাতিসংঘ, ন্যাটো কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ম্যান্ডেট ছাড়া জার্মানি কোনো সামরিক হস্তক্ষেপে অংশ নিতে পারে না। এদিকে, ব্রিটেন না থাকলেও সিরিয়ায় সামরিক অভিযানে ফ্রান্সকে পাশে পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। উল্লেখ্য, ভূমধ্যসাগরের পূর্বাঞ্চলে পাঁচটি মার্কিন ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ সিরিয়ায় হামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব জাহাজে কয়েকশ’ দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। ভূমধ্যসাগরে ফরাসি যুদ্ধজাহাজও রয়েছে। আবুধাবি এবং জিবুতিতে যুদ্ধবিমানও মজুদ রেখেছে ফ্রান্স। তবে গত শনিবার ওবামার সর্বশেষ বক্তব্য অনুযায়ী, যুদ্ধ এখনই শুরু হচ্ছে না।
বাংলাদেশ সময়: ১:১৬:০৯ ৪৩৬ বার পঠিত