বঙ্গনিউজ ডেস্কঃ রংপুরের পীরগঞ্জের খেতাবেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে শিক্ষকদের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে সুমন ইসলাম আকাশ (১৪) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বল্লমবিদ্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়। এসময় আহত হয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও পীরগঞ্জ থানার ওসিসহ অন্তত ১০ জন।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের খেতাবেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর পুলিশ ৮ জনকে আটক করেছে। এদের মধ্যে হামলার নেতৃত্ব দেয়া সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম, হরনাথপুর গ্রামের দেলদার হোসেন, সেকেন্দার আলী, মদনখালী গ্রামের সাজু, ভাবনচুড়া গ্রামের হারুন মিয়া, নয়াপাড়া গ্রামের হাজের উদ্দিন। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
নিহত সুমন ইসলাম আকাশ উপজেলার চৈত্রকোল ইউপির অনন্তরামপুর গ্রামের আনারুল ইসলামের ছেলে। তিনি খেতাবেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৫দিন আগে খেতাবেরপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা হয়। এতে শহিদুল ইসলাম বাবু মিয়াকে সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু খেতাবের পাড়া মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের ২টি প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০০৫ সাল থেকে স্থানীয় মদনখালি ইউনিয়নের ৯নং ওর্য়াড আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাবুর সাথে আনোয়ারুলের দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো। সেই শহীদুল ইসলাম বাবুই এখন এই দুই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি।
এদিকে গোপনে ম্যানেজিং কমিটি করা হয়েছে এই অভিযোগ তুলে প্রধান শিক্ষক এবং নতুন কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। তারা প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির সদস্যদের বিদ্যালয়ে উঠতে না দেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেন। পূজার ছুটি শেষে সোমবার সকালে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসলেও স্থানীয় লোকজনের বাঁধায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে তিনি ফিরে যেতে বাধ্য হন। পরে প্রধান শিক্ষক পীরগঞ্জ থানার ওসি আবদুল আউয়ালকে বিষয়টি জানালে দুপুর ১২টার দিকে তিনি পুলিশের একটি দল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে বিরোধী গ্রুপটি তার ওপর হামলা করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে মাঠে পরে যান। এসময় কয়েকজন উৎসুক শিক্ষার্থী সামনে দাঁড়িয়ে থাকার একপর্যায়ে হামলাকারীরা বল্লম ছুড়ে মারলে শিক্ষার্থী আকাশের বুকে সেটি বিদ্ধ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই আকাশের মৃত্যু হয়। এ সময় পুলিশ এগিয়ে আসলে তাদের ওপর হামলা চালালো হয় এবং ওসিসহ অন্যদের অবরুদ্ধ করে রাখে হামলাকারীরা। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামসহ ৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
আহতদের মধ্যে অবস্থা গুরুতর পীরগঞ্জ থানার এসআই নজরুল ইসলাম, এসআই রিয়াজুল ইসলাম এবং খেতাবেরপাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদারকে পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া পীরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল আউয়াল, এসআই আকতার হোসেন ও কনস্টেবল জ্যেতিসহ অন্যান্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আকাশের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সেখানে উপস্থিত পুলিশের ওপর হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ।
রংপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ডি-সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী তালুকদার ও সহকারী শিক্ষক আনোয়ারুল হকের মধ্যে দ্বন্দের জেরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় স্কুল শিক্ষার্থী আকাশ মারা যায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
পীরগঞ্জের ইউএনও বিরোদা রাণী রায় জানান, গত মাসে বিদ্যালয়ের কমিটি গোপনে কিছু করা হয়নি। বরং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল। এতে যারা হেরে গেছে তারা এটা মানছিল না। নিয়মানুযায়ী একমাসের মধ্যে কমিটির একটা মিটিং করার কথা। সেই মিটিং করার জন্য সোমবার প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির লোকজন বিদ্যালয়ে যাচ্ছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও প্রতিপক্ষ তাদের ওপর হামলা চালায়। মূলত টার্গেট ছিল প্রধান শিক্ষক। কিন্তু লক্ষভ্রষ্ট হয়ে ওই শিক্ষার্থীর বুকে গিয়ে বল্লম লাগে এবং তার মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০:০৪:৫৫ ২৭২ বার পঠিত # #প্রাণ গেল স্কুলশিক্ষার্থীর #শিক্ষকদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ