বঙ্গ-নিউজ ডটকম :বাজারে একটি ডিমের দাম ১০ টাকা। এক হালি ৩৮ টাকা। দেশি পেঁয়াজের কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর ভালো মানের মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা। অন্যদিকে মৌসুমী সবজিতে বাজার ভরপুর হলেও অধিকাংশ সবজির দাম ৪০/৫০ টাকা। এসব ছাড়াও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও আকাশছোঁয়া। আর এসব খাদ্যপণ্যের লাগামহীন দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের আয়ের ৬৫ শতাংশই ব্যয় হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য কিনতে। এদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্য ক্রমশ বাড়ালেও নীরব রয়েছে সরকার। এছাড়া এক বছরে আলু-পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হারে বাড়াসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে- মন্ত্রণালয়ের এমন প্রতিবেদনেও সন্তোষ প্রকাশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও মুদি দোকান ঘুরে দেখা যায়, দোকানিরা একটি ফার্মের ডিমের দাম রাখছেন ১০ টাকা। আর এক হালি ডিমের দাম ৩৮ টাকা। এক ডজন নিলে ১১০ টাকা। তবে বাজারভেদে ৩৬ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে এক হালি এবং ১০০ থেকে ১১০ টাকায় এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে। মাস তিনেক আগে ডিমের দাম হালিপ্রতি ৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৪ টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু তারপর দাম কমে এক হালি ডিম ৩৪ থেকে ৩৬ টাকা বিক্রি হয়েছে সপ্তাহ তিনেক আগে। এক বছর আগে ডিমের দাম ছিল হালিপ্রতি ২৮ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া প্রতি হালি দেশি মুরগির ডিম ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় ও হাঁসের ডিম ৪০ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।গত দু’সপ্তাহ ধরে ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। ডিমের দাম আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।নিত্যদিনের আরেকটি পণ্য দেশি পেঁয়াজের দাম এখন ৭০ থেকে ৭২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। আর মাস দুয়েক আগে এই দাম ছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। আর আমদানি পেঁয়াজের দাম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। মাস দেড়েক আগে আমদানি পেঁয়াজের দাম ছিল ১৮ থেকে ২২ টাকা। মোহাম্মদপুরে টাউন হলে বাজারে শুভ নামের এক ক্রেতা বলেন, বাজারে নতুন পেঁয়াজ এসেছে। তবুও দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া মৌসুমের সময় দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তবে এক বিক্রেতা বললেন, দাম বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের কোনো হাত নেই। কৃষকদের কাছ থেকে আমরা বেশি দামে কিনছি। তাই বাজারেও দাম একটু বেশি বলেন বিক্রেতারা তবেকি কৃষকরা তাদের ন্যায্য পাওনা কি পাচ্ছে ?
আবের আনান্য নিত্য প্রয়োজনিও পন্ন…
পণ্য ডাল, যাকে গরিবের মাংস বলা হয়, তার দাম এখন ১৪০ টাকা কেজি। এক মাস আগে এ ডালের দাম ছিল ১৩৪ থেকে ১৩৬ টাক। এক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের ডালের দামই কেজি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি চিকন নেপালি মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, মোটা বিদেশি ডাল ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়, বুট ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, ছোলার ডাল ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়, মোটর ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়, মুগ ডাল ১১৫ থেকে ১২০ টাকায়, খেসারি ডাল ৮০ টাকায় ও মাশকলাই ডাল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মধ্য নিম্ন আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণকারী ব্রয়লার মুরগির দাম ১২০-১৩০ টাকা থেকে বেড়ে মাস তিনেক আগে ১৮০ টাকা পর্যন্ত পৌছায়। কিন্তু গত দুই মাসে তা কমে ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক ধরে আবারও বাড়তে শুরু করেছে মুরগির দাম। বাজারে এখন ব্রয়লার মুরগীর কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা। মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। বাজারে অন্যান্য মাংসের দাম বহুদিন ধরেই সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে রয়েছে। রাজধানীতে গরুর মাংস ২৭০ থেকে ২৯০ টাকা ও খাসির মাংস ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে মৌসুমী সবজির সরবরাহ প্রচুর থাকলেও দাম নাগালের বাইরে। কারওয়ানবাজার, মগবাজার, সেগুনবাগিচা ও মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায় শীতের সবজির কমতি নেই। কিন্তু ৪০ থেকে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। ৬০ থেকে ৮০ টাকায় কিছু কিছু সবজি বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দামে ব্যাপক অসামঞ্জস্য দেখা যায়। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। অথচ গতকালই বিকালে কারওয়ানবাজারে এক বিক্রেতা কাঁচামরিচের দাম চান ৪০ টাকা। বাজারে সবজির মধ্যে প্রতিকেজি পেঁপে ২০ থেকে ২৫, মুলা ৩০ থেকে ৩৫, পটল ৪৫ থেকে ৫৫, বেগুন প্রকারভেদে ৪০ থেকে ৬০, চিচিংগা ৫০, টমেটো ৮০, কাঁচা টমেটো ৪০, ওলকপি ৩৫, বরবটি ৫০ থেকে ৬০, ঢেড়স ৫০, শিম ৪০ থেকে ৫০, শসা ৩৫ থেকে ৪০, করলা ৬০, নতুন আলু ২৬ ও পুরান আলু ২৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ফুলকপির দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে প্রতি পিস ফুলকপি ২৫ থেকে ৪০, বাঁধাকপি ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া লাউয়ের দাম প্রতি পিসে ১০ টাকা বেড়েছে।এদিকে বড়-ছোট সব ধরনের মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৩০, কৈ মাছ ১৮০ থেকে ২৫০, রুই ১৮০ থেকে ৩৫০, শোল মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০, শিং ৪০০ থেকে ৬০০, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৬০ ও কাতলা মাছ ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইলিশের কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে টিসিবির তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে চাল, তেল ও চিনির দাম স্থিতিশীল আছে। বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট স্ট্যান্ডার্ড ৪০ টাকায়, প্রিমিয়াম ৩৮ টাকায়, লতা ৩৪ টাকায়, স্বর্ণা ৩০ টাকায় ও ভালো মানের নাজিরশাইল ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া টিসিবির তালিকা অনুযায়ী বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, ৫ লিটার ৬৫৫ থেকে ৬৭০, খোলা সয়াবিন এক লিটার ১১৬ থেকে ১১৮, খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ৭৮ থেকে ৮০ এবং সুপার পামওয়েলের দাম ৮২ থেকে ৮৫ টাকা। দ্বিগুণ দামেও সন্তুষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটি
গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠকে গত এক বছরের পণ্যমূল্যের ওপর একটি প্রতিবেদন পেশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে আলু ও পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। রসুন, ছোলা, মসুর ডাল, লবণ, আদা, সয়াবিন তেল, খেজুর, চাল ও ডিমের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত। এরপরও পণ্যমূল্য নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ১২৭ শতাংশ। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর যে আলুর কেজি ছিল ৮ থেকে ১৪ টাকা, চলতি বছরের ১২ ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ থেকে ২৬ টাকায়। পেঁয়াজের দাম ছিল ২০ থেকে ২৮ টাকা। এখন ৪০ থেকে ৬০ টাকা। আর প্রতি কেজি রসুনের দাম ৬২ দশমিক শতাংশ বেড়ে ৪০ থেকে ৯০, মসুর ডাল ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেড়ে ৭৫ থেকে ১৪০, লবণ ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়ে ১৮ থেকে ৩০, ছোলা ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৮০ থেকে ৯০, আদা ১০ শতাংশ বেড়ে ৫০ থেকে ৬০, সয়াবিন তেল ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে ১১৬ থেকে ১১৮ টাকা হয়েছে। মাঝারি চালের দামও প্রায় ৩ শতাংশ বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ফার্মের ডিম হালিপ্রতি ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বেড়ে ৩৪ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে হলুদ, মোটা চাল, খোলা পামওয়েল, চিনি ও শুকনো মরিচের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে বলে দাবি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৫০:১৮ ৬৬৮ বার পঠিত